ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন দলীয় কোন্দল ও নির্বাচনীয় সংঘাত কমাতে কিছুটা সফল - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন দলীয় কোন্দল ও নির্বাচনীয় সংঘাত কমাতে কিছুটা সফল

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: মে ২৩, ২০২৪

রাজনৈতিক দলীয় প্রতীকবিহীন 

 

রঞ্জুউর রহমান ॥ স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে উন্নয়ন কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু করতে উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন রাজনৈতিক দলীয় প্রতীক এর বাইরে রাখা হয়েছিল। ১৯৮২ সালের উপজেলা পরিষদ আইন দলীয় স্বার্থেই ২০১৫ সালে সংশোধন করা হয়েছে। আবার সংশোধিত আইন থাকতেই দলীয় প্রতীক ছাড়া নির্বাচন হতে যাচ্ছে। উল্লেখ্য, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রপ্রধান থাকাকালীন ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে ১৯৮২ সালের ৭ নভেম্বর থেকে ১৯৮৩ সালের ৭ নভেম্বরের মধ্যে ৪৬০ উপজেলা পরিষদ সৃষ্টি করেন। সরকারি সুযোগ-সুবিধাগুলো জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে সব থানাকে উন্নয়ন করে উপজেলা পদ্ধতি চালু করা হয়।আইনে বিধান রাখা হয়েছিল, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে উপজেলা পরিষদ গঠন হবে। এ নির্বাচন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে, যাতে স্থানীয় সমাজসেবকসহ অপরাপর পেশার মানুষ ও রাজনীতিকরাও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন।

কিন্তু আওয়ামী লীগ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার সহজ পথ বিবেচনা করে ২০১৫ সালে উপজেলা আইন সংশোধন করে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনি ব্যবস্থা চালু করে। পরবর্তীকালে দেখা গেল, রাজনৈতিক দলগুলো প্রচ্ছন্নভাবে তাদের দল থেকে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়ে যার যার প্রার্থীকে নির্বাচনে বিজয়ী করতে স্থানীয় নেতারা দলে এবং এলাকায় প্রভাব ধরে রাখতে তার বলয়ের ব্যক্তিকেই প্রার্থী করতে মরিয়া হয়ে লড়াই করবে। এতে এক সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে পরবর্তীতে অশান্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় নেতারাও হিমশিম খায় এবং নিজেদের মধ্যে নির্বাচন করায়  তৃণমূলে গৃহদাহ ও গৃহবিবাদ দলকে বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত করে।এমতাবস্থায়  উপজেলা পরিষদ নির্বাচন দলীয় প্রতীক বিহীন হওয়া সহিংসতায় ঘর-বাড়ি হামলা, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাটের মতো ঘটনা খুব কম হয়।এ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আওয়ামী লীগ তৃণমূলে সংঘাত-সহিংসতা এবং দলাদলি এড়াতে নয় বছর পর নিরুপায় হয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতীক ব্যবহার থেকে পিছু হটেছে। সেই ধারাবাহিকতা গত ২১মে সারা দেশে ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফায় ১৫৬টিতে ভোট গ্রহণ সমাপ্ত হয়েছে এর মধ্যে ১৩২টি নির্বাচনে ব্যালটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ হয়। ২৪টি উপজেলায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ হয়।নির্বাচনে অন্যান্য বারের তুলনায় এবার দলীয় পথিকবিহীন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে খুবই কম সংখ্যক জায়গায় সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে এছাড়াও নির্বাচনের আগে-পরে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক নেতাকর্মীর মধ্যে যে রেষারেষি থাকে সেটিও খুব কম পরিমাণে দেখা গেছে। এর ফলে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে একটি আস্থার জায়গা তৈরি করতে সম্ভব হয়েছে এবং ভোটার উপস্থিতিও সন্তোষজনক। আমলা সদরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোট প্রদান করতে আসা তারা বেগম বলেন, ভয়-ভীতিহীন ভাবে এবারে নির্বাচনে ভোট দিতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত। আমি মনে করি এবারের  দলীয় প্রতীকবিহীন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অতীতের যেকোনো উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের থেকে ভালো হয়েছে। আমি চাই উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ ইলেকশনের আর যেন কোনদিন দলীয় প্রতীক না দেওয়া হয়।তাহলে নির্বাচনের পরিবেশ ঠিক থাকবে। মিরপুর পাইলোট উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোট প্রদান করতে আসা মোঃ আব্দুল বলেন, দলীয় প্রতীক না থাকায় এবারে ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু ও সুন্দর আছে তাই নির্ভয় ভোট প্রদান করেছি। আমরা চাই এভাবে যেন প্রতিবার নিরপেক্ষভাবে ভোট গ্রহণ হোক। মিরপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ভোট প্রদান করতে আসা মোঃ আবেদ বলেন, অন্যান্য যে কোন বারের তুলনায় এবার নির্বাচন সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে। দলীয় প্রতীক  না থাকায় প্রার্থীরা সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় গিয়েছে ফলে ভোটার ও প্রার্থীর মধ্যে একটা সুসম্পর্ক গড়ে উঠে তারই ফলাফল আজকের শান্তিপূর্ণ, নিরপেক্ষ ভোট।