কুমারখালী প্রতিনিধি ॥ শ্যালিকা সহকারী জজ। সেই ক্ষমতায় এলাকায় দুলাভাই ও স্বজনদের ব্যাপক দাপটে ভাব। তাঁদের বিরুদ্ধে জমি দখল, হামলা, ভাঙচুর, মিথ্যা মামলায় আসামি করে জেল হাজতে প্রেরণের অভিযোগ উঠেছে। মানববন্ধনে গ্রামবাসী এমন অভিযোগ তুলেন। গতকাল রোববার (২৫ আগষ্ট) দুপুরে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের কসবা জামে মসজিদের সামনের সড়কে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী ও কসবা গ্রামবাসী।
এতে অংশ নেন কয়েক শত ছাত্র, জনতা ও গ্রামের সর্বস্তরের লোক। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, কসবা গ্রামের রুজদার আলীর মেয়ে মোছা. লাবনী খাতুন স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রায় দুই বছর আগে সহকারী জজ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। তিনি বর্তমানে যশোর ঝিকরগাছা আদালতে কর্মরত রয়েছেন। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্বজনদের দ্বারা কসবা গ্রামবাসীদের উপর অন্যায়, অবিচার ও নিপীড়ন চালাচ্ছে। ঘরবাড়িতে ভাঙচুরসহ হয়রানিমূলক মামলায় মানুষকে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে। তার এসব অপকর্মের নেতৃত্ব দেয় তারই দুলাই ভাই একই গ্রামের মো. বাবুল হোসেন (৩৫)।
তারা সহকারী জর্জের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। এবিষয়ে শিলাইদহ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বর ও কসবা গ্রামের বাসিন্দা আবু জাফর জানান, তিনি লাবনীর স্বজনদের কাছ থেকে সাড়ে আট শতাংশ জমি কিনেছিলেন। তবে লাবনী জজ হওয়ার পরে ক্ষমতার দাপটে তা দখল করে নিয়েছে। আদালতে মামলা চলছে। গ্রামের গৃহিণী ইসমাতারা খাতুন জানান, ১৭ আগষ্ট গ্রামে মসজিদ কমিটি নিয়ে দুপক্ষের দ্বন্দ্ব হয়।
দ্বন্দ্বে বেশকিছু ঘরবাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটিয়ে জজের স্বজনরা। অনেকেই আহত আছেন। কিন্তু জজ লাবনী প্রভাব দেখিয়ে তার মাকে দিয়ে আমার ছেলেসহ অনেকের নামে মামলা করেছেন। সেই মামলায় আমার কলেজ পড়ুয়া ছেলে নাহিদ এখন জেলে আছে। আমি জজের বিচার চাই। কৃষক জামাত আলী জানান, ১৫ বছর ধরে জজ লাবনীর দুলাভাই বাবুল ও তার সহযোগী জামাল মসজিদের দাঁয়িত্ব পালন করে লুটেপুটে খেয়েছে। কিছু বলতে গেলেই লাবনী বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়ে হয়রানি করেন। গ্রামবাসী জজ লাবনীর অত্যাচার থেকে মুক্তি চাই।
গৃহিনী তাসলিমা খাতুন জানান, জজের ক্ষমতায় লাবনীর দুলাভাই বাবুল ও জামাল এলাকায় মানুষের ঘরবাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করছে। মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে মানববন্ধন করেছে। নিজেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন ছাত্র দাবি করে ডলি খাতুন জানান, লাবনী জজ হওয়ার পর থেকেই বাবুল এলাকায় দাপট দেখিয়ে আসছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে মানুষকে নানামুখী হয়রানি করছে। তিনি জজ লাবনী ও স্বজনদের উপযুক্ত শাস্তি চান। তবে এলাকাবাসীর সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন লাবনীর মা রুপালী খাতুন, বাবা রুজদার আলী ও দুলাভাই বাবুল হোসেন।
তারা জানান, গ্রামবাসী লাবনীর চাকুরিতে হিংসা করে শত্রুতামূলক ও মিথ্যা দোষারোপ করছেন। সম্প্রতি মসজিদ কমিটি নিয়ে দু’পক্ষের দ্বন্দে তাঁদের বাড়িতেও হামলা ভাঙচুর করা হয়েছে। এঘটনায় তারা থানায় একটি মামলা করেছেন। অভিযোগ অস্বীকার করে যশোর ঝিকরগাছার সহকারী জজ মোছা. লাবনী আক্তার মুঠোফোনে জানান, তিনি বা তার স্বজনরা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নয়। সামাজিক দ্বন্দ্বে তাকে ফাঁসানো হচ্ছে। তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। সম্প্রতি মসজিদ কমিটির দ্বন্দ্ব নিয়ে তাঁর বাড়িতে ভাঙচুর ও দুলাভাইকে মারপিট করা হয়েছে। তিনি পুলিশ দিয়ে কোনোদিনও ক্ষমতার অপব্যবহার করেননি। কুমারখালী থানার ওসি মো. আকিবুল ইসলাম জানান, জজ লাবনী গ্রামের বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে তাকে ফোন দিতেন। ১৭ আগষ্ট জজ ম্যাডামের মা বাদী হয়ে ১৫ জনের নামে মামলা করেছেন।
