জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এই বাঙালী জাতির আলোর দিশারী : হানিফ এমপি - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এই বাঙালী জাতির আলোর দিশারী : হানিফ এমপি

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: আগস্ট ৯, ২০২৩
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এই বাঙালী জাতির আলোর দিশারী : হানিফ এমপি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এঁর ৪৮তম শাহাদৎ বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস ২০২৩ উপলক্ষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কুষ্টিয়া সরকারী কলেজ শাখার আয়োজনে বুধবার ৯ আগস্ট কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের মুক্তমঞ্চে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এই বাঙালী জাতির আলোর দিশারী : হানিফ এমপি

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এই বাঙালী জাতির আলোর দিশারী : হানিফ এমপি

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এই বাঙালী জাতির আলোর দিশারী : হানিফ এমপি

কুষ্টিয়া সরকারী কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাফুজুর রহমান শাওন’র সঞ্চালনায় এবং কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ফেরদৌস খন্দকারের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ । আলোচনা সভায় সন্মানীত অতিথি ছিলেন, কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ, কুষ্টিয়া পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা এবং কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর শিশির কুমার রায় ।

আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান অনিক, সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ, জেলা আওয়ামীলীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক খন্দকার ইকবাল মাহমুদ, জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য হাবিবুল হক পুলক, জেলা আওয়ামী মহিলালীগের সভাপতি জেবুন নিসা সবুজ এবং জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক স্বপন হোসেন সহ কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মি ও কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের ছাত্রছাত্রীবৃন্দ ।

আলোচনা সভা শেষে কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের ছাত্রছাত্রীদের সাথে সরাসরি মতবিনিময়কালে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের পক্ষ থেকে কলেজের নানাবিধ সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়। যার মধ্যে গুরুত্ব বিষয়গুলো হলোঃ ছাত্রী হোস্টেলে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা, দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য ডিপটিউবয়েল স্থাপন, ছাত্রছাত্রীদের জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা, ব্যবহারিক ল্যাবের ক্যামিকেল সমস্যাসহ ল্যাব উন্নয়ন, ছাত্রদের হোস্টেল বাড়ানো, ফিজিক্স ডির্পাটমেন্ট শিক্ষক বৃদ্ধিকরন, প্রোজেক্টরের অভাবে ক্লাসের সমস্যা, ছাত্রী হোস্টেলে প্রথমিক চিকিৎসার সরঞ্জামের ব্যবস্থা করা, প্রতিটি হোস্টেলে আলাদা রিডিং রুমের ব্যবস্থা করা, লাইব্রেরীর প্রসারতা বৃদ্ধি করা, পড়াশুনা করার জন্য আলাদা লাইব্রেরীর ব্যবস্থা করা, কলেজের জন্য শহীদ মিনার ইত্যাদি। ছাত্রছাত্রীদের এসকল চাহিদা যুক্তিসংগত বলে মনে করেন কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ।

ছাত্রছাত্রীদের চাহিদার কথা শুনে তিনি আগামী বছর আরো একটি ছাত্র হোস্টেল করে দিবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন এবং প্রতিটি হোস্টেলে দ্রুত প্রাথমিক সেবার সরঞ্জাম সরবরাহ করার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। তিনি দ্রুত মহিলা হোস্টেলে একটি বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ফিল্টার দিবেন বলেও ছাত্রীদের আশ্বস্ত করেন। এছাড়াও বহিরাগতরা যাতে কলেজে প্রবেশ করে কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, তাই ছাত্রছাত্রীদের প্রত্যেককে আইডি কার্ড ব্যবহারের পরামর্শ দেন।

লাইব্রেরী বর্ধিত এবং প্রতিটি হোস্টেলে আলাদা রিডিং রুমের বিষয়ে মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি বলেন, হোস্টেলগুলো আগে থেকে নকশা করে তৈরি করা। যদি সম্ভব হয় তাহলে অবশ্যই বিষয়টি দেখা হবে। আর যদি কলেজে পর্যাপ্ত জমি থাকে তাহলে লাইব্রেরী ভবন আধুনিকায়ন ও বড় করে তৈরি করা হবে ।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এই বাঙালী জাতির আলোর দিশারী : হানিফ এমপি

আলোচনা সভায় সন্মানীত অতিথির বক্তব্যে কুষ্টিয়া পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা বলেন, এই আগস্ট আসলেই বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রত্যেকটি নেতাকর্মি শঙ্কিত থাকে। কেননা ২০০৪ সালে ২১শে আগস্ট সৃষ্টি হয়েছিলো এবং ১৭ই আগস্ট কারা সৃষ্টি করেছিলো, কি জন্যে করেছিলো। কি জন্যে এই আগস্ট মাস আসলেই বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এবং স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি, এই শক্তির প্রত্যেকটি নেতা কর্মি শঙ্কিত থাকে, যে কখন না জানি এই আগস্টে আমাদের শাহাদৎ বরণ করতে হয়। কারণ ঐ হায়ানার দলরা এই আগস্টকেই বেছে নেন আওয়ামীলীগকে নিধন করার জন্য। এদেশের মাটি মানুষের যে দল, স্বাধীনতার পক্ষের এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া দল সেই দলের নেতা কর্মিকে নিশ্চিহৃ করার জন্য আগস্টকেই প্রধান টার্গেট হিসাবে বেছে নেয় । জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান’কে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট স্বপরিবারে নির্মম হত্যার শিকারের মধ্যদিয়ে এই দেশের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায় রচিত হয়েছিলো । কিন্তু যে দিন ভাগ্যক্রমে আজকের সফল প্রধানমন্ত্রী ও তার বোন শেখ রেহানা আল্লাহর অশেষ কৃপায় এবং আজকে ১৭ কোটি মানুষের নেতৃত্ব দিবেন দেশের বিধায় বাইরে ছিলেন। ১৯৮১ সালে উনি দেশে পর্দাপনের মধ্য তার পরিবার পরিজনদের হত্যার বিচার চেয়েছিলেন। সেদিন কিন্তু সেই বিচারের পথ রোহিত করা হয়েছিলো। রাষ্ট্র যদি আইন করে হত্যার বিচার বন্ধ করে তাহলে কি অবস্থা হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী ১৯৭৫ এবং ১৯৮১ সালের পর থেকে সারা জাতি এবং বিশ্বের কাছে বিচার চেয়েছেন। উনি বিচার পার নাই বিচারের জন্য কাঁদতে কাঁদতে তার চোঁখে ঘাঁ হয়ে গেছে। জিয়াউর রহমানও তো আতোতায়ীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন। তারেক জিয়া আপনি তো কখনো আপনার বাবার হত্যার বিচার চান নাই। খালেদা জিয়া আপনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, আপনি বিরোধী দলের নেত্রী ছিলেন, কই আপনি তো বলেন নাই আমার স্বামীর হত্যার বিচার চাই। আজ প্রধানমন্ত্রী যেই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন, আপনি বা আপনার দলের কোন লোক তো বলেন নাই বিচার চাই। এরকম কোন কথাই আমি আমার রাজনৈতিক জীবনে শুনি নাই যে এই বিএপি’র নেতৃবৃন্দ কোন দিন জিয়াউর রহমানের বিচার চেয়েছেন, কেন চাই না ?

আলোচনা সভায় সন্মানীত অতিথির বক্তব্যে কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ বলেন, আজকে আমরা যে বিষয়ে আলোচনার জন্য সবাই এখানে উপস্থিত হয়েছি তা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটা অত্যন্ত কলঙ্কজনক অধ্যায় । এই কলঙ্কজনক অধ্যায় সৃষ্টি যারা করেছিলেন, যেইভাবে হয়েছিলো এই গুলোর ব্যাখ্যা প্রধান অতিথি দেবেন। জাতির পিতা শেখ মুজিবর রহমান যুগের পর যুগ আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন এই দেশ এবং দেশের মানুষকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। ভাত এবং ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্যে। দূঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাবার জন্য তিনি নিজের জীবনকে বিপন্ন করে আন্দোলন সংগ্রাম করে গেছেন। যারই সর্বশেষ ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ যার মধ্যদিয়ে আমরা একটা স্বাধীন দেশ পাই। তার পরেই আমরা নিজেরাই আমাদের পিতাকে হত্যা করি। যে সমস্ত কুলাঙ্গার জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক চক্রান্তে বাংলাদেশের অস্তিত্বকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছিলো। পারে নাই, কারণ এদেশের মানুষের জাতির পিতার প্রতি যে ভালোবাসা, সেই ভালোবাসা হৃদয়ে ধারণ করে। তার মধ্য দিয়েই আমরা দেখতে পাই ১৯৮১ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এদেশে আসার পরে মানুষের সেই ভালোবাসা আবার ফিরে আসে। উনার উপরে এই পর্যন্ত ঊনিশ কুড়ি বার হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা হয়েছে। তারপরেও এই দেশের মানুষের প্রতি উনার যে অঙ্গীকার, মানুষের প্রতি যে ভালোবাসা এবং জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে আজকে বাংলাদেশ উন্নত, আধুনিক, সমৃদ্ধ বাংলাদেশের পথে যাত্রা করছে ।

google news

গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

উপস্থিত ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ বলেন, আধুনিক বাংলাদেশ, উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের অবকাঠামো আমরা তৈরি করে যাচ্ছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তৈরি করে যাচ্ছে। সেটাকে বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব তোমাদের। সেই জন্যে নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে হবে। প্রস্তুত করতে হবে অসাম্প্রদায়িক চেতনার ভিত্তিতে বাংলাদেশ গঠনের। সঠিক চিন্তাধারায় দেশ বিরোধী যে সমস্ত শক্তি ইতিপূর্বে ক্রিয়াশীল ছিলো, এখনো তারা অধিক ক্রিয়াশীল। তাদের সেই সমস্ত ষড়যন্ত্র এবং চক্রন্তকে মোকাবেলা করেই আগামীর নেতৃত্ব, আগামী দিনের অনাগত ভবিষ্যত তোমরাই এই বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করবে ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এই বাঙালী জাতির আলোর দিশারী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশ এবং স্বাধীনতার এক এবং অভিন্ন শব্দ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ছাড়া বাঙালীর স্বাধীনতা কখনো ভাবাই যায় নাই, কখনো কেউ কল্পনাও করতে পারে নাই । এই বাঙালী অধ্যুষিত এলাকায় বা এই ভারত বর্ষ শত শত বছর ধরে নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়েছে। আমরা এই বাঙালী বার বার নির্যাতিত হয়েছি, নিপীড়িত হয়েছি। আক্রমনের শিকার হয়েছি। ১৮শ শতাব্দীর আগে এক সময় পুর্তগিজদের হামলায় বাঙালী বার বার ক্ষত বিক্ষত হয়েছে। ব্রিটিশ শাসনামলেও এই বাঙালী জাতির উপর চলেছে অত্যাচার, নির্যাতন, নীপিড়ন । বাঙালী জাতি অত্যাচার, নির্যাতন, নীপিড়ন মুক্তি পেতে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। স্বাধীনতার আকাঙ্খা ছিলো আমাদের বহু আগেই । কিন্তু কোন নেতৃত্ব সেই স্বাধীনতার পথ দেখাতে পারে নাই। আমরা ইতিহাস পড়লে দেখতে পাই, বাঙালীর মুক্তির জন্য প্রথম ১৮১৭ সালে ইসলামী ফরায়েজী আন্দোলনের নামে সেই সময় হাজ্বী শরীয়ত উল্লাহ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, আন্দোলন সংগ্রাম করেছিলেন। কিন্তু সেই আন্দোলন খুব বেশী একটা এগোতে পারে নাই, মুখ থুবড়ে পড়েছিলো। বাঙালীর স্বপ্ন পূরণের পথ দেখাতে পারে নাই । তিতুমীরের নেতৃত্বে ১৮৩২ সালে আবার আন্দোলন শুরু হয়েছিলো। ব্রিটিশ শাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছিলেন এবং বাঁশের কেল্লা দিয়ে দূর্গ বানিয়ে রুখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই আন্দোলনও সফলতা লাভ করতে পারে নাই। এরপর এই বাঙালীর মুক্তির জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করেছিলেন আমাদের চট্টলার বীর সন্তান মাস্টার দ্যা সূর্য সেন। উনি লড়াই করেছেন, জীবন দিয়েছেন মুক্তি আসে নাই। সর্বশেষ দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে দুইটি রাষ্ট্র হলো, একটি ভারত, অপরটি পাকিস্থান। পাকিস্থানের আবার দুটি খন্ড ছিলো, একটা পশ্চিম পাকিস্থান, আর একটা পূর্ব পাকিস্থান। আমরা সেই পূর্ব পাকিস্থানের অধিবাসী ছিলাম। সংখ্যা গরিষ্ট মানুষ ছিলাম আমরা। গোটা পাকিস্থানের মধ্যে ৫৬ ভাগ মানুষ ছিলো এই পূর্ব পাকিস্থানের। অথচ সেই পাকিস্থান স্বাধীন হাওয়ার পর প্রথমেই কিন্তু পাকিস্থানী শাসনভার পশ্চিম পাকিস্থানের অবাঙালীদের হাতে চলে গেলো। এরপর তারা সংখ্যা গোরিষ্ঠ বাঙালীদের উপরে শুরু করলো তাদের শোষন, নিপীড়ন এবং বৈষম্য। মোট জনসংখ্যার ৫৬ ভাগ বাঙালী হওয়ার পরও পাকিস্থানী শাসক গোষ্ঠী সিদ্ধান্ত নিলেন, রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। তাৎক্ষনিকভাবে ১৯৪৮ সালে এর প্রতিবাদ হয়েছিলো এবং তখন থেকেইে পাকিস্থানের রাষ্ট্রনায়ক মোহাম্মদ আলী জিন্নার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়েছিলো। তখন থেকেই কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন এবং এই বাঙালী জাতির মুক্তির জন্য উনি সর্বপ্রথম ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার কারণ সেই সময়ে বাঙালীদের দাবী, বাঙালীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য, আন্দোলন সংগ্রাম করার জন্য। এরপর ভাষা আন্দোলন শুরু হলো, ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারী সেই ভাষা আন্দোলনের চুড়ান্ত রূপ লাভ করেছিলো আমাদের শহীদ সালাম, রফিক, জব্বার, বরকত এদর আত্মাহুতির মধ্যদিয়ে। বঙ্গবন্ধু তখন কারাগারে ছিলেন, কারাগারে থেকেই কিন্তু উনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এই ভাষা আন্দোলনের। এরপর ধাপে ধাপে আন্দোলন করে, ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করেছিলো আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট। বঙ্গবন্ধু সেই সরকারের মন্ত্রী হয়েছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বুঝতে পারলেন যে পাকিস্থানী শাসক গোষ্ঠীর অধীনে মন্ত্রীসভার মন্ত্রীত্ব করে জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না। তাই তিনি পদত্যাগ করে বাঙালী জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আবার নতুন করে সংগ্রাম করলেন। ৫৬’র শাসনতন্ত্র আন্দোলন, ৬২’টির শিক্ষা আন্দোলন এবং ৬৬’র ছয় দফা আন্দোলনের মধ্যদিয়ে গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। ৬৬’র ছয় দফা’কে আমাদের স্বাধীনতার মূল সোপান বলা হয়। এই ছয় দফা’র মধ্যেই ছিলো বাঙালী জাতির মুক্তির সনদ। এই ছয় দফা’র মধ্যেই বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন ভূখন্ড হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সেই দাবীর মধ্যে অন্তভূক্ত ছিলো। পাকিস্থানী শাসক গোষ্ঠি বুঝতে পেরেছিলেন, এই ছয় দফা’র মধ্যদিয়ে মূলতঃ শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্থানকে আলাদা রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। তখন বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে পাকিস্থানী শাসক গোষ্ঠী রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা দিয়েছিলো। বঙ্গবন্ধু কিন্তু ১৯৪৮ সাল থেকেই বারবার গ্রেফতার হয়েছেন। পাকিস্থানী শাসক গোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুকে একাধিকবার গ্রেফতার করেছেন, কারাগারে নিক্ষেপ করেছেন। কিন্তু সেই মামলা ছিলো রাজনৈতিক মামলা। কিন্তু ১৯৬৬ সালে ছয় দফা ঘোষনার পর তখন রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা দেওয়া হয়েছিলো এবং সেই মামলায় তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলো। কিন্তু ততোদিনে ঘুমন্ত বাঙালী জাতি জেগে উঠেছিলো। কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, যুবক সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলো এবং যার ফলে তীব্র আন্দোলনের মুখে ১৯৬৯ সালের ২২শে ফেব্র“য়ারী বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিলো পাকিস্থানী শাসক গোষ্ঠী । সেই সময় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ২৩ শে ফেব্রুয়ারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রায় দশ লক্ষাধিক ছাত্র যুবকের সমাবেশে শেখ মুজিবর রহমানকে আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধু উপাধি দেওয়া হয়েছিলো। সেদিন থেকে শেখ মুজিবর রহমান হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ।

বঙ্গবন্ধু মানে বাংলার বন্ধু, বাংলার জনগণের বন্ধু। এরপর ১৯৭০ সালে নির্বাচন আসলো, সেই নির্বাচন নিয়েও কিন্তু অনেক টালবাহানা হয়েছিলো। আমাদের দেশের অনেক রাজনৈতিক দল এই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলো, নির্বাচন বয়কট করেছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু জানতেন জনগণের ম্যন্ডেট ছাড়া কোন আন্দোলন সফলতা লাভ করতে পারে না । জনগনের সমর্থন ছাড়া বর্হিঃবিশ্বের সমর্থন ছাড়া শুধূমাত্র আন্দোলন করে কোন রকম সফলতা আসতে পারে না। সেই কারণেই বঙ্গবন্ধু নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং ৭০’এ সেই সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করে নিরঙ্কুশ সংখ্যা গোরিষ্ঠতা অর্জন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে ১৬৯টা আসনের মধ্যে ১৬৭টা আসন পেয়ে আওয়ামীলীগ সেই সময়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যা গোরিষ্ঠতা অর্জন করেছিলেন। ৭০’এর ডিসেম্বরে জয়লাভের পরেই ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আমাদের স্বাধীনতার ঘোষনা দিলেন। ৭ই মার্চের যে ভাষণটা ছিলো এই ভাষণ ছিলো পৃথিবীর শ্রেষ্ট ভাষণগুলোর মধ্যে অন্যতম ভাষণ। মাত্র ১৯ মিনিটের একটি ভাষণ উনি দিয়েছিলেন। সেটা কোন লিখিত ভাষণ ছিলো না। সম্পূর্ণ নিজের চিন্তা, চেতনা ও বুদ্ধির উপর উনি ভাষণটা দিয়েছিলেন। এই ভাষণ এখন বিশ্বে জাতীয় সংঘের ওর্য়াল্ড হেরিটেজের কতিপয় শ্রেষ্ট ভাষণগুলোর মধ্যে একটা শ্রেষ্ট ভাষণ হিসাবে সংরক্ষিত আছে। এই ভাষনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু পরিস্কার বলে দিয়েছিলেন, এই ভাষণের একদিকে ছিলো পাকিস্থানী শাসক গোষ্ঠীর দীর্ঘ ২৩ বছর শাসন আমলের অত্যাচার, নির্যাতন ও নিপীড়নের ইতিহাস। আরেক দিকে পাকিস্থানী শাসক গোষ্ঠার বিরুদ্ধে বাঙালী জাতির যে সংগ্রাম ও আন্দোলনের ইতিহাস। আরেক দিকে ছিলো পাকিস্থানী শাসক গোষ্ঠীর হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে লড়াই সংগ্রাম করে বিজয় অর্জনের দিক নির্দেশনা। এতচমৎকার ভাষন পৃথিবীর ইতিহাসে কোথাও দেখা যায় নাই। এরপর ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ রাতে হঠাৎ করে পাকিস্থানী শাসক গোষ্ঠী এদেশের নিরস্ত্র মানুষের উপর রাতের অন্ধকারে বর্বরোচিত গণহত্যা চালালো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরেই বাঙালী জাতির স্বাধীনতার ঘোষনা হিসাবে রাত সাড়ে বারোটার সময় ইপিআই ওয়্যারলেসের মাধ্যমে তার রেকর্ড করা ভাষনটা প্রচার করলেন। বঙ্গবন্ধু তার রেকর্ড করা ভাষনের মধ্যে পরিস্কার করে বলেছিলেন, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন । সেই সাথে তিনি বিশ্ববাসীকে আহ্বান জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য। দেশ বাসীকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন, একজন শত্রু থাকলেও লড়াই সংগ্রাম করে তাদের পরাস্ত করে দেশকে স্বাধীন করার জন্য। মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্তি করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছিলেন। ঐদিন ভোর রাত্রেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হলো এবং দুপুর দেড়টার সময় পাকিস্থানী শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান রেডিও ভাষণে বলেছিলেন, শেখ মুজিব বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে, তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তাকে এইবার বিনা শাস্তিতে পার পেতে দেওয়া যাবে না।

আরও পড়ুন: