নতুন সম্ভাবনা ও নতুন দিগন্ত নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে কুষ্টিয়ায় কুমারখালী শহীদ গোলাম কিবরিয়া সেতু। এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এই সেতু। সেতুর দুই পাড়ে প্রায় হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। কুমারখালী গড়াই নদীর ওপর পৌরসভার তেবাড়িয়া-যদুবয়রা লালনবাজার স্থানে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। নতুন – নতুন ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা, আবাসন প্রকল্প, রিসোর্ট, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে ।

অর্থনীতিতে নতুন ভূমিকায় কুমারখালী শহীদ গোলাম কিবরিয়া সেতু
সেতু হওয়ায় ৬ খাতে বিপ্লব ঘটবে এই অঞ্চলে। এগুলো হলো- সংযোগ স্থাপন, ব্যবসা-আঞ্চলিক বাণিজ্য, কৃষি, শিল্প, পর্যটন এবং সামাজিক খাত। দুই পারের লক্ষ- লক্ষ মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন অনুভব করে চালু হয়েছে গোলাম কিবরিয়া সেতু।
শত বছরের লুকানো স্বপ্ন গড়াই সেতু, প্রস্তাবিত নাম (শহীদ গোলাম কিবরিয়া) সেতু আজ দৃশ্যমান। সেতুটি ঘিরে উপজেলার ৫ টি ইউনিয়নের মানুষের মধ্যে বইছে এখন আনন্দের জোয়ার।
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া -৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ ও কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ ১৭ এপ্রিল ২০১৯ সালে সেতুর কাজের উদ্বোধন করেন।
(২৮ জুন) ২০২৩ সালে কুষ্টিয়া -৪ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ সেতুটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করেন।
দীর্ঘদিনের কষ্ট-দুর্ভোগ লাঘব হয়েছে সেতুটির কারণে । পাশাপাশি এ উপজেলার সঙ্গে ঝিনাইদহ ও মাগুরাসহ আশেপাশের জেলার যোগাযোগ সহজ হয়েছে এবং দুরত্ব কমেছে এমনটি মনে করেন সাধারণ মানুষ। দক্ষিণ অঞ্চল এখানে, যদুবয়রা, পান্টি, চাদপুর, বাগুলাট ও চাপড়া নামের পাঁচটি ইউনিয়ন রয়েছে। এখানে প্রায় সিংহভাগ মানুষের বসবাস।

সেতুটির পিলারের সংখ্যা ১২ টি, এব্যাটমেন্ট ২ টি, পাইলের সংখ্যা ১১২ টি, পিসি গার্ডার ৫২ টি, পাইলের দৈর্ঘ্য ৪৩ দশমিক ৫০ মিটার ও ২৬ দশমিক ৫ মিটার, পাইলের ডায়া এক হাজার মিলিমিটার, স্প্যান ১৩ টি, স্প্যানের দৈর্ঘ্য ৫০ মিটার, সেতুর চওড়া ৭ দশমিক ৩০ মিটার, ওয়াক ওয়ে রেলিংসহ মোট চওড়া এক দশমিক ২৫ মিটার, ওয়াকওয়েসহ মোট চওড়া ৯ দশমিক ৮০ মিটার, এ্যাপ্রোচ প্রটেকটিভ ওয়ার্ক ৩৫০ মিটার। গড়াই নদীর ওপর নির্মিত কুমারখালী-যদুবয়রা সংযোগ সেতুর নির্মাণ বাস্তবায়নকারী সংস্থা কুষ্টিয়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর । ৮৯ কোটি ৯১ লক্ষ ৩৫ হাজার ৫৯১ টাকা ব্যায়ে ৬৫০ মিটার দৈঘ্য পিসি গার্ডার সেতুটি ওয়াকওয়েসহ ৯ দশমিক ৮০ মিটার চওড়া । এ ছাড়াও সেতুটির দুই পাড়ে মোট ৮০০ মিটার দৈর্ঘ্য এপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। নেশনটেক কমিউনিকেশন লিমিটেড ও রানা বিল্ডার্স যৌথভাবে সেতুটির নির্মাণ কাজ করেছে।
এ অঞ্চলের কৃষক, মৎস্যজীবী, তাঁতি, ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ী, এরই মধ্যে এই সেতুর কারণেই ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ উন্নত হতে শুরু করেছে। সেতুর দুই পাড়েই জমির দাম তিন-চার গুণ বেড়ে গেছে।
সেতুটি দেখতে আসা তুহিন শেখ বলেন, এই পারের ৫ ইউনিয়নে লাখ -লাখ মানুষের বাস। বেশির ভাগ মানুষ জীবিকার তাগিদে প্রতিদিন কুষ্টিয়া- কুমারখালী শহরে যাতায়াত করে। বর্ষা মৌসুমে নৌকা আর শুকনো মৌসুমে ধু – ধু বালুতে হেঁটে গড়াই নদী পার হওয়ার কষ্ট-বিড়ম্বনা দীর্ঘদিনের। এই সেতুর কারণে পারাপারের খরচ বাড়ছে সেই সঙ্গে অল্প সময়ের শহরে আসা যাচ্ছে।
তেবাড়িয়া গ্ৰামের, শাহিন নামে এক যুবক বলেন, বর্ষাকালে নৌকায় এই নদী পার হতে গিয়ে অনেক ছোট খাটো দুর্ঘটনা পড়তে হতো। মানুষের কষ্টের দিন শেষ হয়েছে। সেতুটি ৫ ইউনিয়ন বাসীর কাছে আশীর্বাদস্বরূপ। এই সেতু দেখতে হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন আসে । এর জন্য এখানে প্রায় অর্ধশত বিভিন্ন দোকান পাট হয়েছে, ভবিষ্যতে আরো কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
কৃষক আব্দুল জসিম মোল্লা বলেন, এই অঞ্চল কৃষি মুল ভরসা, আমাদের এখন থেকে সকাল বিকেল যখন খুশি কৃষি পণ্য নিয়ে, বাজারে যাওয়া আসা করতে পারছি। আগে তো’ ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে বেশি টাকা দিয়ে নৌকা পার হতাম। এই সেতু অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আমার নিজের প্রতিদিন ৭০ টাকা বেঁচে যাচ্ছে।
সেতুর পাশের চটপটির দোকানদার মিজান বলেন, এই ব্রীজটি দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ পারাপার হচ্ছে। সকাল বিকেল শত শত মানুষ এখানে বিনোদনের জন্য আসে। সেই জন্য আমাদের বেচাকেনা বেড়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন দোকান রাস্তার দুই পাশে তৈরি হচ্ছে। এতে করে আমাদের আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছি।
কুমারখালী কাপুরিয়া হাটের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা বলেন,সেতুটি আমাদের জন্য আশির্বাদস্বরূপ। এই সেতুর কারণে বাজারে কয়েক গুণ বিক্রি বেড়েছে। অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই সেতু, বিশেষ করে ব্যবসায়ীরা চরম সুফল পাচ্ছে। এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এই সেতু।
কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ তিনি জানান, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সরকার নতুন প্রজন্মের কে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে কাজ করছে। শহীদ গোলাম কিবরিয়া সেতু শুরু একটা সেতু না’ দুই পারের মানুষে একত্রিত করেছে। সেই সঙ্গে ব্যবসা,বাণিজ্য কৃষিতে অভূতপূর্ব সাফল্য রাখছে।
