শহীদের স্বীকৃতি ও ভাতার দাবি নিহত জামালের স্ত্রীর - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

শহীদের স্বীকৃতি ও ভাতার দাবি নিহত জামালের স্ত্রীর

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: আগস্ট ১৪, ২০২৪

কুমারখালী প্রতিনিধি ॥ আমি অজু করে ঘরে যাচ্ছি। সোহনই (তখন) নাতি বেটার বউ কাঁদে উঠল। আমি আসে কচ্ছি (বলছি) ওহ ঋতু কি হয়ছে?  কাঁদিস ক্যাঁ। সোহনডা ও কচ্ছে ওহ দাদি আপনের ছোয়াল গুলি লাগে মরে গেছে। সোহন বাবা আর আমি দুনিয়ায় নেই। ওরে আল্লাহ আমি তাজা বেটা হারা দিলাম। কিডাই আমার বুকের তে তাজা বেটার কারে নিল। তার বিচার আল্লাহ করো।

গতকাল মঙ্গলবার (১৩ আগষ্ট) দুপুরে বিলাপ করতে করতে দুচোখের জল ছেড়ে দিয়ে কথা গুলো বলছিলেন কুষ্টিয়ার বয়োজ্যেষ্ঠ বৃদ্ধ নারী মোছাঃ রুপজান। তিনি কুমারখালীর চাপড়া ইউনিয়নের ভাঁড়রা গ্রামের মৃত আজগর আলী শেখের স্ত্রী। তার সেজো ছেলে মোঃ জামাল উদ্দিন শেখ (৪১) গত ৫ আগষ্ট বিকেলে ঢাকা সাভারের মুক্তির মোড় এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাকে এনাম মেডিকেলে নিয়ে গেলে কর্তৃব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

জামাল ওই এলাকার পাকিজা গার্মেন্টসের একজন শ্রমিক ছিলেন। খবর পেয়ে ওইদিন রাতেই স্বজনরা তার লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসেন এবং ময়নাতদন্ত ছাড়াই ৬ আগষ্ট সকালে সামাজিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়। বিলাপ করতে করতে বৃদ্ধ রুপজান বলেন, ‘ আমার বেটা কই এই মাসে আমার ব্যাপসা নি। আমার মা’র খওয়ার কষ্ট হয়ছে। এহন আমি চাকুরিতে ঢুকলাম। আমার মায়ের আর খওয়ার কষ্ট হবিনানে। ওহ আল্লাহ, বেটাতো পলালো, আমার খওয়ার কিডা দিবিনি।

স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জামাল উদ্দীন গ্রামে ইটভাটার শ্রমিক ছিলেন। জায়গা জমি না থাকায় সংসারের হাল ধরতে বছর দুয়েক আগে ঢাকায় গিয়ে আইসক্রীমের ব্যবসা শুরু করেন। তাতেও সংসারের অভাব যাচ্ছিল না। সেজন্য প্রায় মাসখানেক আগে পাকিজা গার্মেন্টসে চাকুরি নেন। গত ৫ আগষ্ট বিকেলে তার ছোট ছেলে রাব্বিকে (১০) পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন তিনি ছেলেকে খুঁজতে বাড়ির বাইরে গিয়েছিলেন। সেসময় বিকেল ৫ টার দিকে সাভার মুক্তির মোড় এলাকায় ছাত্র জনতার  মিছিল চলছিল। মিছিলে একটি ভবনের চারতলা থেকে গুলি ছুড়ছিল পুলিশ। সেসময় তিনি বুকে ও পায়ে গুলিবিদ্ধ হন।

আরো জানা গেছে, জামালের পরিবারে স্ত্রী ফরিদা খাতুন, ছোট ছেলে রাব্বি ও বৃদ্ধ মা রুপজান রয়েছেন। তার বড় দুই ছেলে সাকিব ও বাপ্পী বিবাহিত। তারা আলাদা সংসার পেতেছেন। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, জিকে খালের ধারে প্রায় ৫ শতাংশ জমির ওপর মেঝ কাঁচা দোচালা তিন কক্ষ বিশিষ্ট একাট টিনসেড ঘর। তার মধ্যে একটি কক্ষে বড় ছেলে, একটি কক্ষে মেঝ ছেলে এবং একটি কক্ষে ছোট ছেলেকে নিয়ে থাকতেন জামাল।

এসময় বড় ছেলে সাকিব শেখ বলেন, আব্বা দুই বছর আগে ঢাকায় গিয়ে আইসক্রীমের ব্যবসা শুরু করেন। আর মাসখানেক আগে গার্মেন্টসে চাকুরি নিয়েছিল। ৫ আগষ্ট বিকেলে ছোট ভাই রাব্বিকে খুঁজতে বাড়ির বাইরে গিয়েছিলেন বাবা। সেসময় পুলিশ আমার বাবার বুকে ও পায়ে গুলি করে হত্যা করেছে। আমি সুষ্ঠ বিচার চাই। নিহত জামালের ছোট ভাই কামাল শেখ বলেন, আমি আমার ভাই হত্যার বিচার এবং ভাবি, ভাতিজারা যেন ভাল ভাবে বাঁচতে পারে।

সেই ক্ষতিপূরণ চাই। স্বামীর প্রথম মাসের বেতন আনতে ছোট ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় গিয়েছেন জামালের স্ত্রী ফরিদা খাতুন। তিনি ফোনে বলেন, আমার স্বামীকে আমি শহীদের মর্যাদা চাই। মুক্তিযোদ্ধাদের মতো মাসিক ভাতা চাই। নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য ক্ষতিপূরণ চাই সরকারের কাছে। ইউএনও এস এম মিকাইল ইসলাম জানান, নিহত ও আহতদের তালিকা করা হচ্ছে। সরকারিভাবে নির্দেশনা আসলে তা বাস্তবায়ন করা হবে।