বিশেষ প্রতিনিধি ॥ কনটেন্ট ক্রিয়েটর রফিকুল্লাহ কালবীর নির্লজ্জ মিথ্যাচার বিষয়ে খোলাসা করতে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের আহবায়ক আল মামুন সাগর ২৬ মিনেটর একটি সিসিটিভি ফুটেজ সহ তার ফেসবুক আইডিতে গতকাল বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) দুপুর ৩ টা ৪৭ মিনিটে একটি পোষ্ট করেছেন। আলমামুন সাগর তার ফেসবুক পোষ্টে লিখেন “ ঘটনার তারিখ ৬ অক্টোবর ২০২৫। কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সিসিটিভি ক্যামেরায় তখন রাত আটটা বেজে ১৬ মিনিট ১৬ সেকেন্ড। রিকশা যোগে কয়েক জন মিলে রফিকুল্লাহ কালবীকে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের নিচে নিয়ে আসে। এর মাত্র ৫৫ সেকেন্ডের মাথায় আটটা ১৭ মিনিট ১১ সেকেন্ডের দিকে কয়েকজন যুবককে সাথে নিয়ে কালবীকে পায়ে হেটে সিঁড়ি বেয়ে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সেমিনার কক্ষে প্রবেশ করতে দেখা যায়।
অথচ গত ২৫ অক্টোবর রফিকুল্লাহ কালবী (আপনি) আপনার নিজের ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে এসে নির্লজ্জ মিথ্যাচার করে মানুষের সহানুভূতি অর্জনের জন্য বলেন, আপনাকে প্রেসক্লাবের নিচে কমপক্ষে ২০ থেকে আধা ঘন্টা বেধড়ক পেটানো হয়েছে। ঘটনার পর কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি মোশারফ হোসেন এবং একজন বিএনপি নেতা আমাকে মুঠোফোনে জানান, “আপনার সাংবাদিকদের সাথে কারো মনে হয় ঝামেলা হয়েছে একটু দেখেন”। সে সময় আমি এবং কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি লুৎফর রহমান কুমার একসাথে ছিলাম।
এর কয়েক সেকেন্ড পর কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ ও বাংলা টিভির কুষ্টিয়া প্রতিনিধি এম.লিটন-উজ-জামান আমাকে মুঠোফোনে কল দিয়ে জানায়, ভাই আপনি দ্রুত প্রেসক্লাবে আসেন। খুব জরুরী একটা ঘটনা ঘটেছে। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি কি ঘটনা ঘটেছে? কি হয়েছে বলেন? ভাই একটু তাড়াতাড়ি ক্লাবে আসেন বলে সে ফোন কেটে দেয়। আমি তখন কুমার ভাইয়ের মোটরসাইকেলে করে মজমপুর গেট থেকে পাঁচ রাস্তার মোড়ের দিকে আসতেই দেখি কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সদস্য ও কুষ্টিয়ার খবর পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আরাফাত অফিসের দিকে যাচ্ছে।
আমি তাকে বলি দ্রুত আমার সাথে আসো। তখন সে মোটরসাইকেল ঘুরিয়ে আমার সাথে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। ঘটনার ঠিক নয় মিনিটের মাথায় আটটা ২৬ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের দিকে কুমার ভাইয়ের মোটরসাইকেলে করে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের নিচে এসে দাঁড়ায়। সে সময় আরাফাতও আমার সাথেই ছিল। আমি লুৎফর রহমান কুমার ভাই এবং আরাফাতকে নিয়ে আটটা ২৮ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের দিকে সিঁড়ি বেয়ে প্রেসক্লাবে প্রবেশ করি এবং সরাসরি হলরুমে যায়। হল রুমে গিয়ে দেখি সাংবাদিকসহ অন্তত ১৫-২০ জন।
এদের মধ্যে কয়েকজনকে আমি চিনিও না। আমার অপরিচিত। হল রুমে আমি যখন পৌঁছাই তখন দেখতে পাই রফিকুল্লাহ কালবী মেঝেতে বসে রয়েছেন। আমাকে দেখেই উনি (কালবী) মেঝেতে শুয়ে পড়েন। আমি তখন তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করি ভাই কি হয়েছে? তখন কালবী আমাকে বলেন, ভাই ওরা আমাকে বেধড়ক পিটিয়েছে। আমি তখন সেখানে উপস্থিত সবাইকে জিজ্ঞাসা করি উনাকে কেন এখানে নিয়ে আসা হয়েছে আর কেনই বা তাকে মারপিট করা হয়েছে? তখন উপস্থিত কয়েকজন আমাকে বলে, ভাই ও এম টি এফ (হায় হায় মাল্টি লেভেল কোম্পানি) করে।
আমাদের অনেকের লক্ষ লক্ষ টাকা মেরে দিয়েছে। গালি দিয়ে বলে বেশ কয়েকদিন ধরে খুঁজছি আজকে পেয়েছি। আমি তখন জিজ্ঞাসা করি টাকা পাও ভালো। কিন্তু তাকে থানায় না নিয়ে গিয়ে এখানে (ক্লাবে) নিয়ে আসলে কেন? এই প্রশ্নের জবাবে তারা জানান, ভাই তাকে থানাই নিয়ে যেতে গিয়েছিলাম। কিন্তু সে (কালবী) তাদেরকে বলে আমি কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সেক্রেটারি রিপন ভাইয়ের পত্রিকায় কাজ করি। আমাকে প্রেসক্লাবে রিপন ভাইয়ের কাছে নিয়ে চলো। রিপন ভাইকে ডেকে বিচার সালিশ যা হয় কর। তাই আমরা প্রেসক্লাবে এসেছি। রিপন ভাইকে ফোন দিচ্ছি। কিন্তু রিপন ভাই ফোন ধরছেনা।
আমি তখন প্রেসক্লাবের অফিস সহকারি নজরুলকে বলি ভাই তাকে (কালবীকে) উঠান, চেয়ারে বসান। পানি নিয়ে আসেন, পানি খাওয়ান। মাথায় পানি দেন। আমার কথামতো তাকে মেঝে থেকে চেয়ারে বসানো হয় এবং সেবা-করা হয়। কালবী ভাই আমাকে বলেন, ভাই ওরা আমার মোবাইল ব্যাগ কেড়ে নিয়েছে। আমি তখন (ভিডিও ফুটেজ রাত ৮:৩২ মিনিট ৩ সেকেন্ড) ব্যাগ এবং মোবাইল নিয়ে তার হাতে তুলে দেয়। সেক্রেটারি রিপনকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানায় এবং দ্রুত ক্লাবে আসতে বলি। ৮টা ৩৩ মিনিট ১৯ সেকেন্ডের দিকে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবু মনি জুবায়েদ রিপন এসে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের অফিস কক্ষে প্রবেশ করেন। আমি আসার আগ পর্যন্ত কালবী আপনার সাথে কে কি করেছে সেটা আমার জানার কথা না।
তবে আমি এসে উপস্থিত হওয়ার পর ভিডিও ফুটেজসহ চ্যালেঞ্জ করে বলছি জনাব কালবী আপনার শরীরে কেউ একটি টোকা পর্যন্ত দেয়নি এবং এর কোন ফুটেজ-কোন প্রমাণ আপনি দেখাতে পারবেন না। ৮টা ৩৫ মিনিট ২০ সেকেন্ডের দিকে কয়েকজনকে সাথে নিয়ে আপনাকে সবাই মিলে ধরাধরি করে একটি অটোতে তুলে অফিস সহকারি নজরুল, এনটিভি ডিজিটালের রিপোর্টার বিদ্যুৎ এবং ক্যামেরা পার্সন হারুনকে সাথে দিয়ে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানোর উদ্যোগ গ্রহণ করি। এবং আপনাকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার সময় অফিস সহকারী নজরুলের হাতে পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে টাকা দি আপনার চিকিৎসা করার জন্য। এই পোস্টে আমি যা উল্লেখ করলাম এটি শতভাগ সত্য। অথচ আপনি (কালবী) ঘটনার পর থেকে আমাকে প্রেসক্লাবের সেক্রেটারিসহ আমাদেরকে সন্ত্রাসী গডফাদার, মাদক ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজ, প্রেসক্লাবকে আয়না ঘর বানানোসহ এমন কোন বিশেষণ নেই যেটি আপনি ব্যবহার করেননি।
অথচ জেলা প্রশাসকের সাথে গণমাধ্যম কর্মীদের মত বিনিময় সভায় আপনার বিষয়ে আমি আমার এবং প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষের অবস্থান পরিষ্কার করে বলেছি, আপনার সাথে যা ঘটেছে এটি নিঃসন্দেহে দুঃখজনক এবং চরম নিন্দনীয় ঘটনা। আমরাও এই ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়েছি। সেই সাথে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে এ ঘটনার বিচার দাবি করেছি। একই সাথে ঘটনার সাথে যে বা যাদের নাম এসেছে তাদের বিরুদ্ধে সংগঠনিক ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষ আপনার ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ বেমালুম গায়েব করে দিতে পারতাম। কিন্তু আমরা তা করিনি। আপনার উপর যদি সত্যিই কোনো অন্যায় হয়ে থাকে তার বিচার হোক সেজন্যই সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষণ করেছি এবং স্বপ্রণোদিত হয়ে সেই ফুটেজ তদন্তকারী কর্মকর্তার হাতে তুলে দিয়েছি।
অথচ আপনি একের পর এক কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব এবং আমাদের নিয়ে নির্লজ্জ মিথ্যাচার করে চলেছেন। অবশ্য আপনার মত মানুষের পক্ষে এটি স্বাভাবিক। কারণ আপনি তো ভিউ ব্যবসায়ী। আমাদের নিয়ে যত মিথ্যাচার করবেন আপনার ভিউ তত বাড়বে, ডলার ইনকাম হবে। আপনি উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে এবং নিরপরাধ কিছু মানুষকে ফাঁসানোর জন্য বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে ঘটনার খন্ডিত ফুটেজ কাটছাঁট করে আপনার ফেসবুক পেজে পোস্ট করেছেন। এতদিন আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্তের স্বার্থে এবং তাদের অনুরোধের প্রেক্ষিতেই প্রেসক্লাবের সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করা হয়নি।
