মিরপুর প্রতিনিধি ॥ কুষ্টিয়ার মিরপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টার দিকে উপজেলার ঈগল চত্বরে সাবেক এমপি শহিদুল ইসলাম ও বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরীর সমর্থকদের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ৯ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রহমত আলী রব্বান, চঞ্চল ও আবু সাঈদকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এরা সবাই সাবেক এমপি শহীদুল ইসলামের সমর্থক। বাকিরা অন্য স্থানে চিকিৎসা নিচ্ছে।
এদের মধ্যে রহমত আলী রব্বানের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে চিকিৎসকরা। এছাড়াও মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ ভর্তি করা হয়েছে মিরপুর পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম আলী (৪৯), মোহাম্মদ আলী জিহাদ (২৭), সুমন (৩৫) ও আলতাফ হোসেন (৪৫)। মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি মিরপুর পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম আলী বলেন, আমার বড় ভাই ভাগ্নিসহ আমাদের ৭জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক মো. তৌছিফুর রহমান বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় চারজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে মনে হচ্ছে তারা শঙ্কা মুক্ত।
স্থানীয় বিএনপি নেতারা বলেন, গত সোমবার মনি নামে এক সার ব্যবসায়ীর কাছে সারের বৈধ চালান দেখতে চান সাবেক এমপি সমর্থিত উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রহমত আলী রব্বান। চালানোর বৈধ কোনো কাগজপত্র দেখাতে না পারার অভিযোগ তুলে ট্রাক আটকে রেখে উপজেলা কৃষি অফিসারকে খবর দেন তিনি। এ ঘটনায় বিএনপি নেতা রাগীব রউফ চৌধুরীর সমর্থকরা মনির পক্ষ নিয়ে ট্রাক থেকে জোর করে সার নামিয়ে নেয়। এতে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়।
এরপরই রব্বানের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে ওই স্যার ব্যবসায়ী সংবাদ সম্মেলন করেন। এর প্রতিবাদে গতকাল মঙ্গলবার সকালে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপি নেতা রব্বান। এরপর উপজেলা কৃষি অফিসের সামনে রব্বানের ভাই জাহেদ আলীর সঙ্গে সার ব্যবসায়ীর ছেলে আসিফের বাগবিতণ্ডা হয়। এসময় ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি টিপু খুনকার আসিফের পক্ষ নিয়ে পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম আলীর বাগবিতণ্ডা হয়। বিষয়টি জানতে পেরে বিএনপি নেতা রব্বানের লোকজন আসিফকে মারধর করে।
এ ঘটনার কিছু পর টিপু খুনকারের নেতৃত্বে তার লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। এতে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে রব্বান গুরুতর আহত হন। উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক মারফত আফ্রিদী বলেন, ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি টিপু খুনকারের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়েছে। এতে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রহমত আলী রব্বান, তার দুই ভাই ও ভগ্নিপতি আহত হন। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। তবে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ আব্দুল হক কুষ্টিয়ার বাইরে রয়েছেন জানিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান।
এ বিষয়ে মিরপুর থানা-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তফা হাবিবুল্লাহ জানান, দুই পক্ষের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনাও ছিল। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে একটি বিষয় নিয়ে দুই পক্ষ আলোচনায় বসলে তাদের মধ্যে প্রথমে বাক-বিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। পরে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এসময় উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়। পরে পুলিশ এবং সেনা সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
