বিশেষ প্রতিনিধি ॥ কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর ও মিরপুর উপজেলার সংযোগস্থল সদরপুর পূজা মন্ডপের পাশ দিয়ে প্রবাহিত সাগরখালী নদী। ৫ অগস্টের পর দেশের ক্ষমতার প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের সাথে সথে নিজেদের বদলাতে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও কর্মিরা। সাগরখালী নদীর সদরপুর থেকে কাতলামারী পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার অবৈধভাবে দখল করে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন মিরপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল হকের ভাই মোশাররফ হোসেন মুসা ও আওয়ামী নেতা হামিদ। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেত্রী প্যারী সুন্দরী দেবীর এক গৌরবময় ইতিহাসের সাক্ষী সাগরখালী নদী আজ বিপন্ন। সাগরখালী নদী কুষ্টিয়া জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত একটি ছোট নদী। প্যারীসুন্দরী দেবী এই ব্রিটিশ বিরোধীন আন্দোলন করেন।
তিনি প্রায় দুই শতাধিক ব্রিটিশকে জমিদার বাড়িতে বলি দেন এবং সেই ব্রিটিশদের রক্ত সাগরখালী নদীতে বয়ে যায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নদীটির স্বাভাবিক প্রবাহ রুদ্ধ করতে বাঁধ নির্মাণ করেছে আব্দুল হকের ভাই মুসা ও আওয়ামী নেতা হামিদ। তাদের অবৈধ দখলের কারণে নদীটি বর্তমানে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কৃষক শাহিন ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, দীর্ঘদিন ধরে তারা সাগরখালী নদীর পানি নির্ভর করে নিজেদের ফসল উৎপাদন করছেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাঁধ দেওয়ার পর নদীর পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফসলগুলো তলিয়ে যাচ্ছে, যা তাদের জন্য এক বড় দুর্ভোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবৈধ দখল ও বাঁধ নির্মাণের কারণে নদীটির প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে দৌলতপুর উপজেলার ৭-৮টি গ্রামের শত শত একর জমির ফসল পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে।
এলাকাবাসী জানান, কিছুদিন আগে সেনাবাহিনী ও গ্রামবাসী যৌথ প্রচেষ্টায় একটি বাঁধ কেটে দেওয়া হয়। কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতে পুনরায় ড্রেজার মেশিন এনে বাঁধ দিয়েছে আব্দুল হকের ছোট ভাই মোশাররফ হোসেন মুসা ও আওয়ামী লীগ নেতা হামিদ। এলাকার কৃষক জমির বলেন, আমরা বছরের পর বছর ধরে এখানকার জমিতে ফসল চাষ করে আসছি। কিন্তু এখন যদি এভাবে নদী দখল করা হয়, তাহলে আমাদের সংসার চালানো কঠিন হয়ে যাবে। পরিবেশকর্মী খলিলুর রহমান মজু জানান তিনি প্রতিদিন সকালে সাগরখালী নদীর পাড় দিয়ে হাঁটতে বের হন। কিন্তু নদীর দিকে তাকালে দখল ও দূষণ দেখে কষ্ট লাগে। তিনি বলেন, দখলদারদের যখন চিহ্নিত করা গেছে তখন তাদের আইনের আওতায় আনতে বাধা কোথাই? এদিকে নদীটির অবাধ প্রবাহ রক্ষা করার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
নদীটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং কৃষকদের ক্ষতির কথা বিবেচনায় দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে। নদী দখল করে বাঁধ বিষয়ে জানতে মোশাররফ হোসেন মুসা ও আওয়ামী নেতা হামিদের যোগাযোগের চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। সাগরখালী নদীর দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে মিরপুর উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী বিবি করিমুন্নেছা কর্মকর্তা বলেন, নদ-নদী ও খাল দখলকারীদের তালিকা আমাদের কাছে রয়েছে। যেকোনো উপায়ে সাগরখালী নদী প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা সাগরখালী নদী দখল মুক্ত করতে ইতিমধ্যে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী সোহাগ মিয়া বিষয়টি স্বীকার করে জানান, আওয়ামী লীগ সময় দীর্ঘদিন ধরে জেলায় উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ ছিল। তবে খুব শিগগিরই সাগরখালীর অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
