দৌলতপুর এখন মাদকের স্বর্গরাজ্য : উদ্ধারে মন্থর গতি
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর এখন মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। ভারত থেকে অবাঁধে পাচার হয়ে আসা ফেনসিডিল, গাঁজা, হেরোইন ও ইয়াবাসহ বিভিন্ন প্রকার মাদক দৌলতপুরের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ায় এখন মাদক রাজ্যে পরিণত হয়েছে দৌলতপুর।

দৌলতপুর এখন মাদকের স্বর্গরাজ্য : উদ্ধারে মন্থর গতি
দৌলতপুর উপজেলা ভারত সীমান্তবর্তী হওয়ায় এ উপজেলা বরাবরই মাদক ব্যবসায়ীদের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত। ভারত থেকে পাচার হয়ে আসা মাদক দৌলতপুরের সীমান্তবর্তী গ্রামের মাদক পাচারকারীদের হাত বদল হয়ে বিভিন্ন প্রকার মাদক দৌলতপুরসহ দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লেও উদ্ধার অভিযানে রয়েছে মন্থর গতি।
সীমান্তরক্ষী বিজিবি’র অভিযানে মাঝে মধ্যে আসামি ছাড়াই মাদক উদ্ধার হলেও তা ভারত থেকে পাচার হয়ে আসা মাদকের তুলনায় নগণ্য বলে সচেতন মহলের অভিমত। একই অবস্থা দৌলতপুর থানা পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও।
তথ্যানুসন্ধানে জানাগেছে, দৌলতপুর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে শতাধিক বা তারও বেশি মাদক ক্রয়-বিক্রয় ও মাদক সেবনের স্থান বা ঘাটি রয়েছে। এরমধ্যে খোদ দৌলতপুর থানা ও উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন এলাকার মধ্যেই রয়েছে একডজনের বেশী মাদক সেবন ও বিক্রয় কেন্দ্র। এরমধ্যে রয়েছে স্বরুপপুর ব্র্যাকপাড়া, সাদিপুর, সাহাপুর, মানিকদিয়াড়, বেগুনবাড়ী ও দৌলতপুর গোরস্থানপাড়া উল্লেখযোগ্য। এসব স্থানে দিন-রাত মাদক ক্রয়-বিক্রয় ও সেবন হয়ে থাকে। বিভিন্ন এলাকা থেকে আশা মাদক সেবীরা খুব সহজেই চিহ্নিত এসব স্পট থেকে মাদক সংগ্রহ ও সেবন করে থাকে।
মাদক সেবী ও বিক্রেতারা প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এমন অপরাধ কর্মকান্ড ঘটালেও সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজন ভয়ে মুখ খুলতে সাহস করেনা। আবার কেউ পুলিশকে জানালেও তার উপর নেমে আসে নানারকম নির্যাতন খড়গো অথবা তার কপালেই জুটে উল্টো মাদকের মামলা। ফলে তারা মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের দ্বারা অতিষ্ঠ থাকলেও মুখ খুলতে সাহস করেনা। ফলে সীমান্ত এলাকা দিয়ে বিভিন্ন প্রকার মাদক দৌলতপুরের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ায় মাদক সেবী ও বিক্রেতাদের হাতের মুঠোই সহজে চলে আসছে মাদক। আর এ মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছে কিশোর থেকে যুবসমাজ। যার কারণে চরম হতাশা ও দুশ্চিন্তাগ্রস্থ অভিভাবকমহল।
মাদকাসক্ত এক সন্তানের পিতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দৌলতপুরে মাদক এতটাই বেড়েছে যে, এটা নিয়ন্ত্রণ করা না হলে দৌলতপুরসহ দেশের যুব সমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে। আবার জয়রামপুর গ্রামের মাদকাসক্ত সন্তানের মা ভানুয়ারা খাতুন ও তারাগুনিয়া হলবাজার এলাকার রাশেদা জানান, তাদের মাদকাসক্ত ছেলে মাদক সেবন ও চুরি ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত। তাদের গ্রেফতারে দৌলতপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন কাজ হয়নি। উল্টো মাদকাসক্ত ছেলেদের ধরাতে পুলিশ ঘুষ দাবী করেছে। আমরা গরীব ও অসহায় দিনমজুর শ্রেণীর মানুষ। মাদকাসক্ত ছেলেদের ধরানোর জন্য পুলিশকে ঘুষ দিব কিভবে।
মাদক প্রসঙ্গে সীমান্ত সংলগ্ন প্রাগপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান মুকুল সরকার জানান, বিগত সময়ের চেয়ে বর্তমানে মাদকের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মাদক নিয়ন্ত্রিত না হওয়ার ফলে শিক্ষার্থীসহ যুব সমাজ মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছেন।
![]()
অপরদিকে অপর সীমান্ত সংলগ্ন রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজ মন্ডল জানান, সীমান্ত দিয়ে আসা মাদক দৌলতপুরসহ দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে। মাদক উদ্ধারে প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তার কারনে সীমান্ত এলাকার মাদক ব্যবসায়ীরা রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছে। তিনি মাদক উদ্ধারে প্রশাসনের জোর তৎপরতা দাবী করেন।
মাদক উদ্ধার ও নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম মাদকের প্রবণতা বৃদ্ধির বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, বিগত সময়ে মাসে প্রায় ৮০ থেকে ৯০টি মাদকের মামলা হতো। কিন্তু বর্তমানে গত মাসে মাত্র ২৭টি মাদকের মামলা হয়েছে। সীমান্ত দিয়ে মাদক পাচার ও মাদক সেবন নিয়ন্ত্রণ না হলে শিক্ষার্থীসহ যুবসমাজ ধ্বংশের পাশাপাশি অভিভাবকরা হয়ে পড়বেন অসহায় ও শিক্ষাবিমুখ। এমনটাই মনে করে সচেতন মহল।
