ভেড়ামারা প্রতিনিধি ॥ গাছ প্রেমিক পিয়ারুল ইসলাম প্রচন্ড দাবদাহে পাখির পিপাসা মেটাতে গাছে ও বিদ্যুৎ এর খুঁটিতে পানির পাত্র বেঁধে রাখে। কুকুরসহ অন্যান্য প্রাণীদের জন্য বিভিন্ন স্থানে মাটির তৈরি পানির পাত্র গর্ত করে তার উপরে বসিয়ে রাখে। তার এ উদ্যোগ চলবে তাপদাহ যতদিন থাকবে এবং পুকুর জলাশয়, খাল-বিলে যতদিন না পানি জমছে ততদিন পর্যন্ত। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার কলেজ পাড়ার গাছ প্রেমিক খ্যাত পিয়ারুল ইসলামের (৫০) ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। জানা গেছে, গাছ প্রেমিক পিয়ারুল ইসলাম গাছ লাগানো ও পরিচর্যা করা তাঁর নেশা। নিয়মিত সড়ক ও রেললাইনের ধারে গাছের চারা রোপণ করে আসছেন। সরকারি দপ্তরে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চত্বরে ওষুধী গাছের চারা রোপণ ও সেগুলো পরিচর্যা করছেন। অভাবের সংসারে খরচ বাঁচিয়ে এখন পর্যন্ত তিনি ৭ হাজার তাল বীজ ও ৮হাজার ঔষুধী গাছসহ বিভিন্ন জাতের গাছ লাগিয়েছেন। এছাড়াও শত-শত গাছকে পেরেক মুক্ত করেছেন। এখনও করে যাচ্ছেন। এটা তার নেশা-পেশা দুটোই বলা যায়। গাছকে পেরেক মুক্ত করতে তিনি উদ্যোগ নিয়েছেন। গাছে পেরেক দিয়ে বিজ্ঞাপনের ব্যানার-ফেস্টুন লাগানো বন্ধ করতে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি সেগুলো উপড়ে ফেলার কাজ করে যাচ্ছেন নিয়মিত। এবার তিনি তাপদাহে পাখির পিপাসা নির্বারণের জন্য গাছে গাছে পানির ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়েছেন। ভেড়ামারা ও ঈশ্বরদী উপজেলায় ৩০০ গাছে ও বিদ্যুৎ এর খুঁটিতে পানির পাত্র বেঁধে দিবেন বলে জানান। প্রথম দিনে ভেড়ামারা শহরের বিভিন্ন স্থানে পাত্র বেঁধেছেন। কুকুরসহ অন্যান্য প্রাণীদের জন্য বিভিন্ন স্থানে ১০০ মাটির তৈরি পানির পাত্র গর্ত করে তার উপরে বসিয়ে রাখে। এগুলোতে তিনি ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় নিয়মিত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করবেন। ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আকাশ কুমার কুন্ডু বলেন, প্রচন্ড তাপদাহে প্রাণিকুল ওষ্ঠাগত। তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠা-নামা করছে। টানা তাপদাহের মধ্যে পাখিরা অতিষ্ঠ। পিয়ারুল ইসলাম নিজ উদ্যোগে প্রকৃতি ও পরিবেশের অনেক কাজ করেন। এই তীব্র তাপদাহে প্রাণি কুল ওষ্ঠাগত। এসময় তিনি পাখিদের পানি খাওয়ানোর জন্য পাত্র বেঁধে দিচ্ছেন। এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। তার উদ্যোগে সরকারের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। আমরা তাকে কিছু পাত্রের ব্যবস্থা করে দিতে চেয়েছি। এসব পাত্রে নিয়মিত পানি সরবরাহ করতে সেই স্থানের বাসিন্দাদের প্রতি তিনি আহবান জানান। ভেড়ামারা সরকারি কলেজের ক্রীড়া বিভাগের প্রধান জাহাঙ্গীর হোসেন জুয়েল বলেন, শহর বা গ্রামে পুকুর, জলাশয়, খাল-বিল, নালা কমে গেছে। যে কয়টা রয়েছে তাতে পানি নেই। টিউবওয়েলগুলোতে এক মাস ধরে পানি ওঠছে না। এক ফুটা বিশুদ্ধ পানির জন্য মানুষের যেখানে হাহাকার, দৌড়া-দৌড়ি শুরু হয়ে গেছে। সেখানে পিপাসা নিবারণে প্রাণি কুলের অবস্থা আরও খারাপ। বিশেষ করে পশু-পাখিরা পানির জন্য কষ্ট পাচ্ছে। পশু-পাখির জন্য পানি সরবরাহের এই উদ্যোগ খুবই মহৎ একটি কাজ। পিয়ারুল ইসলামের দেখানো পথে আমরাও পশু-পাখির পিপাসা মেটাতে এগিয়ে আসতে হবে। সবার প্রতি অনুরোধ প্রত্যেকে তার বাড়ীর আঙিনায় এই মানবিক কাজ শুরু করতে পারেন। জানবার হোসেন বলেন, পিয়ারুল ইসলামকে গাছ প্রেমিক হিসাবে এতদিন চিনতাম। তার এ উদ্যোগ পশু-পাখিরা তৃষ্ণা মেটাতে পারবে। তার এই অসাধারণ মানবিক উদ্যোগ নেওয়ায় খুবই ভালো লাগছে। পানির পাত্র বেঁধে দেওয়ার পর পানি দিতে বলে গেছে। গাছ প্রেমিক পিয়ারুল ইসলাম বলেন, এ বছর তীব্র গরম পড়ছে। দেশজুড়ে চলছে তাপদাহ। পাশাপাশি পানির তীব্র সংকট শুরু হয়ে গেছে। মাঠে, খালে-বিলে কোথাও পানি নেই। কোথাও কোনও টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। মানুষের বিশুদ্ধ পানির জন্য নাভিশ্বাস উঠেছে। পশু-পাখিরাও পানির জন্য কষ্ট পাচ্ছে। তাই আমি পশু-পাখিদের পিপাসা নির্বারণের জন্য পানির ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নিয়েছি। এক মাস ধরে পানির পাতিল বাঁধতে শুরু করেছি। একটি মাটির পাতিল বাঁধতে ৩০টাকা খরচ হচ্ছে। গাছে এই পাত্র বেঁধে ঝুলিয়ে দিচ্ছি। কুকুরসহ অন্যান্য প্রাণীদের জন্য বিভিন্ন স্থানে মাটির তৈরি পানির পাত্র গর্ত করে তার উপরে রাখা হচ্ছে। প্লাস্টিকের পাত্র না নিয়ে মাটির পাত্র ব্যবহারের কারণ পানি ঠান্ডা থাকবে। খাল, বিল, নদী-নালা ও টিউবওয়েলের নিচে পানি জমা না হওয়া পর্যন্ত তিনি এই কাজ করে যাবেন। অভিযোগ করে বলেন অনেক স্থানে মাটির তৈরি পানির পাত্র চুরি হয়ে গেছে।
