ভেড়ামারা প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় নওদা ক্ষেমিরদিয়াড় ও ইসলামপুর এলাকায় রঙিন ফুলকপি চাষ করে চমক দেখিয়েছেন সাইদুল ইসলাম ও সারিজুল হক নামের দুই কৃষক। বেগুনি ও হলুদ রঙের এই ফুলকপি দেখতে ভীড় করছে মানুষ। চলতি মৌসুমে ৪০শতক জমিতে কৃষি অফিসের পরামর্শে প্রথমবার এমন ব্যতিক্রম রঙের ফুলকপি আবাদ করে সাড়া ফেলেছেন ঐদুই কৃষক। সবুজ পাতার ভেতর থেকে উঁকি দিচ্ছে রঙিন ফুলকপি। একটি ক্ষেতের ফুলকপির রং বেগুনি, অপরটির হলুদ। বাহারি রঙের ফুলকপি দুটির নামও সুন্দর। বেগুনি রঙের ফুলকপির নাম ভ্যালেন্টিনা আর হলুদ রঙের ফুলকপির নাম ক্যারোটিনা। ভেড়ামারায় পরীক্ষামূলকভাবে এই প্রথমবার বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে রঙিন ফুলকপির চাষাবাদ। এই ফুল কপি খেতেও যেমন সুস্বাদু, আবার পুষ্টিগুনও রয়েছে অনেক। বাজারে ক্রেতাদের চাহিদা বেশি থাকায় এর দামও বেশ ভালো পাওয়ায় চাষীদের মুখে হাঁসি। এই উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে এ রঙিন ফুলকপি চাষ ও কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনীসহ উপকরণ চারা,সার,জৈব,বালাইনাশক দিয়ে সার্বিক ভাবে সহযোগিতা করছে ভেড়ামারা কৃষি অফিস। প্রথমে কেউ আগ্রহ দেখাননি। পরে নওদা ক্ষেমিরদিয়াড় গ্রামের কৃষক সাইদুর রহমান ২০ শতাংশ জমিতে ও পরে ইসলামপুর গ্রামের সারিজুল হক ২০ শতাংশ জমিতে আবাদ শুরু করে তারা সফল হয়েছেন। তাদের মতে, সাধারণ ফুলকপি চাষের যে পদ্ধতি ওই একই পদ্ধতিতে রঙিন ফুলকপি চাষ হয়। খরচ ও পরিশ্রম একই। স্থানীয় উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল হক জানান, চারা রোপণের পর থেকে আড়াই মাসের (৮০ দিনের) মধ্যে জমি থেকে রঙিন ফুলকপি তোলা যাচ্ছে। এই ফুলকপি চাষে রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হচ্ছে না। শুধু জৈব সার ছিটানো লাগে। কৃষক সাইদুল ইসলাম জানান, আমি এই রঙিন ফুলকপির চাষ কোনো দিন করিনি। পেঁয়াজ ও বিভিন্ন সবজির আবাদ করি। এবার কৃষি অফিসের পরামর্শে ও তাদের সহযোগিতায় ২০ শতক জমিতে রঙিন ফুলকপির চাষ করেছি। ভালো ফলন ও সাধারণ ফুলকপির চেয়ে বেশি দাম পাচ্ছি। তাই আগামী মৌসুমে পুরো জমিতেই এই রঙিন ফুলকপি চাষ করবো। ইসলামপুর গ্রামের সারিজুল হক কৃষক জানান, মরিচ, বাঁধাকপি, টমেটো, বেগুনের চাষ করি। এ বছর আমি রঙিন ফুলকপির চাষ করেছি। বাজারে এ রঙিন ফুল কপির চাহিদা বেশি। কৃষি অফিস থেকে বীজ, সার, পরিচর্যার খরচও দিয়েছে। আগামীতে এই এলাকায় অনেক চাষীই এই রঙিন কপির চাষ করবে। দুই কৃষকই জানান, এই রঙিন ফুলকপির সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন কৃষকসহ উৎসুক মানুষ। তারা কেউ কেউ রঙিন ফুলকপি কিনছেন, কেউ চাষের বিষয়ে পরামর্শ নিচ্ছেন।এলাকার মানুষ আগ্রহী হয়ে ভালো দাম দিয়ে খেত থেকেই এই ফুলকপি কিনে নিচ্ছেন। বাজারে নেওয়া মাত্রই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে এসব রঙিন ফুলকপি। মাঝারি আকৃতির একটি ফুলকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বাজারে। উপ সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা বিশ্বনাথ পাল বলেন, রঙিন ফুলকপির মধ্যে রয়েছে বিটা কেরোটিন এবং এন্টি অক্সডিন্টে থাকার কারনে স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারি। মানব শরীরের ক্যান্সার ও হৃদ রোগের ঝুকিগুলো অনেকাংশে কমায়। চোঁখ ও ত্বককে সুন্দর রাখে। পুষ্টির চাহিদাটাও মেটাতে অতি সক্ষম। ভেড়ামারা কৃষি অফিসার মাহমুদা সুলতানা বলেন, পুষ্টিগুণ ও বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় সাদা ফুলকপির চেয়ে রঙিন ফুলকপি চাষ বেশি লাভজনক। অত্র উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে ২টি ইউনিয়নের ২টি গ্রামে রঙিন ফুলকপি চাষ করা হয়েছে। অফিস থেকে সার ও বীজ সরবরাহের পাশাপাশি প্রতিনিয়ত পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই ফুলকপিতে পুষ্টিগুণ বেশি। দেখতেও নজর কাড়ার মতো। ফলন ভাল হওয়ায় চাষীরা বলছে,আগামিতে এই উপজেলায় ব্যাপকভাবে রঙিন ফুল কপির চাষ করবে তারা। অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা শাহানাজ ফেরদৌসী বলেন, কৃষকের মধ্যে কৃষিবিষয়ক নতুন তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে কৃষি বিভাগ নিরলসভাবে মাঠপর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছেন। আগামী বছর রঙিন ফুলকপির চাষির সংখ্যা আরও বাড়বে। বাজারে রঙিন ফুলকপির চাহিদাও বেশ। বাজারে নিয়ে বসে থাকতে হয় না আগ্রহ নিয়ে ক্রেতারা কিনে নিয়ে যাচ্ছে।ইতোমধ্যে কৃষকরা এ রঙিন ফুলকপি বাজারজাত করে বেশ ভালো লাভবান হচ্ছে। পুষ্টিগুণ এবং বাজারে দাম ভালো হওয়ায় কৃষকরা বেশ আগ্রহী এ রঙিন ফুলকপি চাষে। কৃষকরা বলছে চাষ পদ্ধতি সাদা ফুলকপির মতো হলেও সাদা ফুলের তুলনায় রঙিন ফুল কপি বেশি লাভজনক বলে জানান কৃষকরা।
