ভেড়ামারায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে টিপুর ইউরোপে যাওয়ার স্বপ্ন পুড়ে গেল আগুনে - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

ভেড়ামারায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে টিপুর ইউরোপে যাওয়ার স্বপ্ন পুড়ে গেল আগুনে

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: মার্চ ১৪, ২০২৪

ভেড়ামারা প্রতিনিধি ॥ সন্তানের মতো করেই আদর স্নেহ আর যত্ন করে ধীরে ধীরে গড়ে তুলেছিলেন ৭শ’ পিলি পানবরজ। মন ভরানো, প্রাণ জুড়ানো পান বরজ যেন আশা জাগিয়েছিল ভাগ্যের চাকা ঘুরানোর। অধিক কষ্ট করে পানবরজ আগলে রেখেছিলেন। পারিবারিক চাহিদা মেটানোর জন্য ৩-৪ দিন পান বিক্রয়ও করেছিলেন। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার অসহায় টিপু স্বপ্ন দেখেছিলেন, এবারের পান বিক্রয়ের টাকা দিয়ে পাড়ি দেবেন পোল্যান্ডে। এখন একটু কষ্ট করে, খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছিলেন। রোজার ঈদের পরই একটু বেশি দামে বিক্রি করবেন পান। ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবেন। কিন্তু সে স্বপ্ন পুড়ে গেছে আগুনে। গত রোববার (১০ মার্চ) ভয়াবহ আগুন ট্র্যাজেডিতে সবকিছু শেষ হয়ে গেছে তার। এক নিমিষেই চোখের সামনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ৭ বিঘা জমির উপর প্রতিষ্ঠিত ৭০০ পিলি পানের বরজ। আগুনের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করে এখন নির্বাক হাবিবুর রহমান টিপুর পরিবার। তার মতোই ভাগ্য পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ভেড়ামারা উপজেলার ৫টি গ্রামের কয়েক হাজার যুবকের। গত রোববার (১০ মার্চ)  সকাল ১১টার দিকে ভেড়ামারার রায়টা গ্রামের পাথরঘাটা এলাকায় প্রথমে আগুনের সূত্রপাত হয় পান বরজে। হালকা বাতাস আর শুষ্ক মৌসুমের কারণে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। পড়ে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুড়ে ছাই করে ফেলে পানবরজ, ফসলি জমি, বসতবাড়ি, কলাবাগানসহ সবকিছু। কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের আড়কান্দি গ্রামের মৃত সিরাজ প্রামাণিকের পুত্র টিপু। ৫ বছর আগে স্থানীয় এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে পানবরজ গড়ে তোলার কাজে হাত দেন। সঙ্গী হোন দুই ভাই লেবু এবং শাহাবুল। প্রতি বিঘা জমি ৩০ হাজার টাকা ব্যয় করে অন্যের জমি খাজনা নেন। ৩ ভাইয়ের হাড়ভাঙা খাঁটুনিতে মন ভরানো পানবরজ গড়ে ওঠে। যা আয় হতো, তাই দিয়েই চলতো ৩ ভাইয়ের যৌথ পরিবার। টিপু জানান, ইউরোপ যাওয়ার স্বপ্নে বিভর ছিলাম। স্বপ্ন দেখেছিলাম আমি পোল্যান্ড যাবো পান বিক্রিয়ের টাকা দিয়ে। আর ছোট ভাইয়ের জন্য করে দিবো গ্রামেই মুদিখানার দোকান। আগুনে হাজার হাজার কৃষকের পানবরজের মতো আমার ৭ বিঘা জমির পানবরজও নিমিষেই ছাই হয়ে গেছে। লেলিহান আগুনের কাছে পরাস্ত হয়েছি। দূরে দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না। এখন ৮ সদস্যের পরিবার কীভাবে চলবে সে ভাবনাতেই চোখে পানি চলে আসছে।