ভূমি রেকর্ড জালিয়াতিতে বিপাকে কুমারখালীর ৪৪ পরিবার - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

ভূমি রেকর্ড জালিয়াতিতে বিপাকে কুমারখালীর ৪৪ পরিবার

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: ডিসেম্বর ১১, ২০২৫

কুমারখালী প্রতিনিধি ॥ কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কৌশলে আরএস রেকর্ড করে স্কুল সহ প্রভাবশালী কয়েকজনের বিরুদ্ধে হতদরিদ্র ৪৪ পরিবারের সম্পত্তি ভোগ দখলের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে শিলাইদহ ইউনিয়নের কল্যাণপুর মাঝগ্রাম। ৪৪ টি পরিবারের মধ্যে ২৬ পরিবারের আর্থিক অবস্থা দারিদ্র সীমার নিচে। অসহায় পরিবারগুলো সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন সম্পত্তি ফিরে পেতে। মোছাই, সোনাই, নজরুল ইসলাম সহ একাধিক ভুক্তভোগী জানান, এসএ রেকর্ড অনুযায়ী জোড়ারপুর মৌজার ৪৪ শতাংশ সম্পত্তি তাদের পূর্বজ বাছের সরদার, লবু সরদার, জবু সরদার ও ছহিরন্নেছা বিবির নামে লিপিবদ্ধ ছিলো।

১৯৬৩ সালে তৎকালীন মাঝগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি আজিজ এই সম্পত্তি বিদ্যালয়ের নামে লিখে দিতে বাছের সরদার সহ তার অন্য অংশীদারদের চাপ সৃষ্টি করেন। তারা রাজী নাহলে আজীজ বলপ্রয়োগ করে তাদের উল্লেখিত সম্পত্তি থেকে উৎখাত করেন। এবং আরএস রেকর্ডের সময় আজিজ নিজ নামে ৩০ শতাংশ এবং বিদ্যালয়ের নামে ১৪ শতাংশ জমি রেকর্ড করিয়ে নেন। আরএস রেকর্ড নিজ নামে করার বিষয়টি জানাজানি হলে বাছের সরদারের অংশীদাররা আজিজকে জিজ্ঞেস করলে তিনি নিলাম শর্তে জমি কিনেছেন বলে তাদেরকে জানান। পরবর্তীতে বিষয়টি ভিন্ন খাতে নিয়ে যেতে আজিজ তার নামের ৩০ শতাংশ সম্পত্তি মসজিদের নামে দান করেন। এবং মসজিদ কর্তৃপক্ষ এই সম্পত্তি আকমল নামের ব্যক্তির সাথে (এওয়াজ) বিনিময় করেন। একপর্যায়ে আকমল বর্তমান ভোগদখলে থাকা ব্যক্তিদের নিকট বিক্রি করেন।

বর্তমানে আবদুর রশিদ ও তার স্ত্রী ডলি খাতুন ১৫ শতাংশ, সামছুদ্দিন শেখ ১১ শতাংশ এবং আমিরুলের অংশীদার মুশফিকুর রহমান, নুরজাহান ও তার স্ত্রী মালা খাতুন ৪ শতাংশ দখলে আছেন।  বিষয়গুলো নিয়ে ২০২২ সালে স্কুল কর্তৃপক্ষ উপজেলা সহকারী কমিশনার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট দরখাস্ত দেন। এবং বর্তমান যারা জমি ভোগদখলে আছেন তাদেরকে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শুনানি করেন এবং এসএ রেকর্ড থেকে কিভাবে সম্পত্তি পেয়েছে সেই ডকুমেন্টস নিয়ে হাজির হবার তারিখ ধার্য করা হয়। কিন্তু পরবর্তিতে তারা আর হাজির হননি বলে জানান। ৪৪ জন অংশীদারের মধ্যে ২৬ টি পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছেন উল্লেখ করে সম্পত্তি ফিরে পেলে মাথা গোঁজার ঠাঁই পাবেন বলে জানান তারা।

বিষয়গুলো জানতে সরেজমিনে গিয়ে মাঝগ্রাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মতিউর রহমানের কাছে বিদ্যালয় কিভাবে সম্পত্তি পেয়েছে বা তাদের দলিল আছে কিনা জিজ্ঞেস করলে জানান, ৪৪ শতাংশ জমির মধ্যে ১৪ শতাংশ জমি স্কুলের নামে রেকর্ড হয় বাকী ৩০ শতাংশ জমি ব্যক্তি মালিকানা হয়ে গেছে। এখনো স্কুলের আরএস পরচার মন্তব্য কলামে ৪৪ শতাংশ জমি উল্লেখ রয়েছে। এবিষয়ে স্কুলের সাবেক সভাপতি উপজেলা সহকারী কমিনার ও নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট দরখাস্ত দিয়েছেন বলে জানান।

আলোচিত জোড়ারপুর মৌজার ১৪ শতাংশ সম্পত্তি যেটা বিদ্যায়ের নামে আরএস রেকর্ড আছে। এই সম্পত্তির কোন দলিল বা ডকুমেন্টস তাদের কাছে নেই শুধু পরচা ছাড়া বলে উল্লেখ করেন তিনি। অপরদিকে বর্তমান ভোগদখলে থাকা সামছুদ্দিন শেখের বাড়িতে গেলে তিনি সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে বাড়ি থেকে শটকে পড়েন এবং মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে ডিসেম্বর মাসে কোর্ট বন্ধ থাকলেও তিনি মামলার তারিখ আছে উল্লেখ করে জমির কাগজ দেখানোর জন্য সময় নেন। এবং নির্ধারিত দিনে যোগাযোগর চেষ্টা করা হলে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি।