ভূমিদস্যুদের কবলে খাল, প্লাবিত কলেজ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

ভূমিদস্যুদের কবলে খাল, প্লাবিত কলেজ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন 

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৪

কুমারখালী প্রতিনিধি ॥ কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে কুষ্টিয়ার কুমারখালী সরকারি কলেজের প্রবেশপথ, খেলারমাঠ, নামাজঘর ও কয়েকটি শ্রেনি কক্ষে হাঁটু সমান পানি জমে আছে। এতে কলেজের সকল কার্যক্রম মুখ থবড়ে পড়েছে। চাকুরি বাঁচাতে শিক্ষক-কর্মচারীরা কলেজে আসলেও অনুপস্থিত প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী। বিষয়টি জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং পৌরসভাকে জানিয়েও কোনো ফল পাচ্ছেন না তারা।

সেজন্য জলাবদ্ধতা থেকে কলেজ কে রক্ষা করতে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী। গতকাল মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বেলা দুইটার দিকে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী সড়কস্থ কুমারখালী কলেজ মোড় এলাকায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোল্লা মো. রুহুল আমীন, সহকারী অধ্যাপক জিল্লুর রহমান মধু, প্রভাষক আব্দুল মজিদ, শিক্ষার্থী বুখারী আলম, সাদিয়া আক্তার প্রমূখ।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, কলেজটিতে প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী ও ৮৩ জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছে। তিন বছর আগেও জলাবদ্ধতা ছিলোনা। কিন্তু কিছু ভূমিদস্যুরা পানি প্রবাহের খাল বিল দখল করে নিয়েছে। এখন একটু বৃষ্টি হলেই হাঁটু সমান পানি জমে থাকে। বর্তমানে কলেজের প্রবেশপথ, খেলারমাঠ, নামাজ ঘর ও কয়েকটি শ্রেণি কক্ষে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে সকল কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে বারবার লিখিত অভিযোগ করেও কাজ হয়নি। জলাবদ্ধতা থেকে কুমারখালী সরকারি কলেজকে রক্ষার দাবি জানান তারা।

এদিকে নিম্নচাপের প্রভাবে কুষ্টিয়াতে রেকর্ড পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত শনিবার দুপুর ১২টা থেকে সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টায় ২৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা চলতি বছরে ও গেল পাঁচ বছরে সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছে কুমারখালী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগের পর্যবেক্ষক মো. আল আমিন। তিনি বলেন, ২০১৮ সালে ৭৯ মিলিমিটার, ২০১৯ সালে ৪৪, ২০২০ সালে ৪৯, ২০২১ সালের জুন মাসে ১০৫,  ২০২২ সালে ৬৪ ও ২০২৩ সালে ৭৫ এবং ২০২৪ সালে ১২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকোর্ড করা হয়েছে। অপরদিকে ভারী বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন খামারি ও কৃষকরা।

জলাবদ্ধতায় ডুবেছে ফসল। ভেসে গেছে পুকুর। ভেঙে পড়েছে বেশকিছু ঘরবাড়ি ও গাছপালা। উপজেলার যদুবয়রা, পান্টি, চাঁদপুর, সদকী ও জগন্নাথপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ও কুমারখালী পৌর এলাকা সরেজমিন ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। উপজেলা সদকী ইউনিয়নের গড়েরমাঠ এলাকায় প্রায় ২২ বিঘা জমির পুকুরে মাছ এবং পুকুরপাড়ে সবজি চাষাবাদ করেন খামারি সুজন আলী পলাশ। তিনি বলেন, মাস দুই পরেই প্রায় ৩০ লাখ টাকার মাছ বিক্রির প্রত্যাশ ছিল তার। কিন্তু কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে পুকুর ভেসে গেছে। লাউ ও ঝিঙে সবজি নষ্ট হয়েছে। মাছ ও সবজিতে তার প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

এসময় যদুবয়রা পশুহাট পরিচালনা কমিটির সদস্য মো. আব্দুল গনি বলেন, ভারী বৃষ্টির সঙ্গে বয়ছে দমকা হাওয়া। গত রোববার হাটে মাত্র দুইটি গরু এসেছিল। তাও বিক্রি হয়নি। নিম্নচাপে ৫০ হেক্টর জমির রোপা আমন, ৩০ হেক্টর মাসকালাই, ৬০ হেক্টর সবজি ও ৬০ হেক্টর জমির কলা ক্ষেতের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। এ তথ্য জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবাশীষ কুমার দাস। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, ভারী বৃষ্টির কারণে কিছু গাছপালা ও ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে। বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। তা নিরোসনের চেষ্টা চলছে।