বাঁধনের পরিবর্তে মহিবুল ইসলাম বাঁধনকে আটক করেছে পুলিশ - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

বাঁধনের পরিবর্তে মহিবুল ইসলাম বাঁধনকে আটক করেছে পুলিশ

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: জানুয়ারি ১৬, ২০২৫

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের উপর হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত হত্যা চেষ্টা মামলার আসামি বাঁধনকে আটক করেছে পুলিশ। তবে আটককৃত বাঁধন ও এজাহারনামীয় আসামি বাঁধন একই ব্যক্তি নয় বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। গত মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং এলাকা থেকে পুলিশের হাতে আটক হয়। মহিবুল ইসলাম বাঁধন শহরের পেয়ারাতলা এলাকার নজরুল ইসলাম বাবুর ছেলে। অন্যদিকে, কুষ্টিয়া মডেল থানায় দায়েরকৃত এই হত্যা চেষ্টা মামলার এজাহারনামীয় ৪৪ নং আসামি মো. বাঁধন শহরের ঈদগাহ পাড়া এলাকার বাসিন্দা ও জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন সহ-সভাপতি। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ শিহাবুর রহমানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

পরবর্তীতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুষ্টিয়া মডেল থানার উপপরিদর্শক সায়মুম হাসানের সাথে কথা হলে, তিনি উল্লেখিত মামলায় বাঁধনের আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে ‘আটক বাঁধন ও এজাহারনামীয় আসামি বাঁধন একই ব্যক্তি নয়’ সে প্রসঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলতে রাজি হননি তিনি। প্রতিবেদককে আগামীকাল (আজ) থানায় এসে সরাসরি কথা বলার জন্য বলেন তিনি। এদিকে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মহিবুল ইসলাম বাঁধনকে আটকের পর একাধিক গণমাধ্যমে বাঁধনকে মাহমুদুর রহমান হত্যা চেষ্টা মামলার আসামি উল্লেখ করে বক্তব্য দেন কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ শিহাবুর রহমান। সুত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে মাহমুদুর রহমানের উপর হামলার ঘটনায় এজাহারভুক্ত আসামি মো. বাঁধন কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের তুষার-সাদ কমিটির সহ-সভাপতি। ঐ কমিটির মেয়াদ শেষে কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠিত হয়। সেই কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন আতিকুর রহমান অনিক ও শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ। অনিক ও চ্যালেঞ্জের কমিটিতে সহ-ক্রীড়া সম্পাদক হিসেবে পদ পান পুলিশের হাতে আটক মহিবুল ইসলাম বাঁধন। সাবেক সহ-সভাপতি বাঁধন ও পুলিশের হাতে আটক বাঁধন একই ব্যক্তি নয়।

পুলিশের হাতে আটক বাঁধন ২০১৮ সালে ১০ম শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন। সেসময় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন না তিনি। বাঁধনের জাতীয় পরিচয়পত্র ও শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ যাচাই পূর্বক যার সত্যতাও মিলেছে। ঘটনার বরাত দিয়ে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২২ জুলাই বিকেল সাড়ে ৪টার সময় কুষ্টিয়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে মানহানির মামলায় জামিন নিয়ে বের হওয়ার সময় মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলা হয়। আদালত প্রাঙ্গণ ছাড়ার সময় লাঠি ও ইটের আঘাতে গুরুতর আহত হন তিনি। তাকে বহনকারী গাড়ির গ্লাসও ভেঙে ফেলা হয়। পরে বিকেল ৫টার দিকে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে অ্যাম্বুলেন্স যোগে মাহমুদুর রহমান ও তার সহযোগীরা ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। সাবেক  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক সম্পর্কে মানহানিকর বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইয়াসির আরাফাত তুষার মামলাটি দায়ের করেন।

এ ঘটনার ৬ বছর পর শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে গত বছরের ১০ অক্টোবর মজলুম সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান ভারতে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব উল আলম হানিফ, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, তৎকালীন পুলিশের মহাপরিদর্শক জাবেদ পাটোয়ারী, কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মেহেদী হাসান ও কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি নাসির উদ্দিনসহ ৪৭ জনের নামোল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরো ২০/৩০ জনের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি হত্যা চেষ্টার মামলা দায়ের করেন। এই মামলার ৪৪ নং আসামি করা হয় কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন সহ-সভাপতি মো. বাঁধনকে। মামলার দায়ের করার ৩ মাস অতিবাহিত হলেও গত ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত কোন আসামিকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। ১৪ জানুয়ারি বাঁধন নামের যে আসামিকে পুলিশ আটক করেছে তার সাথে এজাহারনামীয় আসামি বাঁধনের কোন মিল পাওয়া যায়নি। আটক প্রসঙ্গে বাঁধনের বাবা নজরুল ইসলাম বাবু প্রতিবেদককে জানান, মামলার এজাহারভুক্ত আসামি বাঁধন আর আমার ছেলে বাঁধন একই ব্যক্তি না। ২০১৮ সালে সাংবাদিক মাহমুদ সাহেব যখন হামলার শিকার হন তখন আমার ছেলে দশম শ্রেণিতে পড়ে। রাজনীতির সাথে তখন তার কোন সম্পৃক্ততা ছিল না। আমার ছেলে খুলনা বিভাগের মধ্যে লিফটিং চ্যাম্পিয়ন ছিল। তাকে জোর করে অনিক-চ্যালেঞ্জের কমিটিতে সহ-ক্রীড়া সম্পাদক পদ দেওয়া হয়। তারপরও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তার উপস্থিতি ছিল না। বরাবরই আমার ছেলে খেলাধুলা নিয়ে ব্যস্ত থাকে।