বছরে ১২ লাখ টাকার বেশি ভাগবাটোয়ারা কুষ্টিয়ায় ১০ বছরে ওএমএস’র ৩৬০ মেট্রিক টন গম গুদাম কর্মকর্তাদের পেটে!  - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

বছরে ১২ লাখ টাকার বেশি ভাগবাটোয়ারা কুষ্টিয়ায় ১০ বছরে ওএমএস’র ৩৬০ মেট্রিক টন গম গুদাম কর্মকর্তাদের পেটে! 

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: মার্চ ৭, ২০২৪

নিজ সংবাদ \\ কুষ্টিয়ায় ওপেন মার্কেট সেল (ওএমএস) এর গম সরকারি খাদ্য গুদাম থেকে আটা তৈরির জন্য মিল মালিকদের গোডাউনে পৌঁছানো পর্যন্ত নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়ে আসছে। বিগত ১০ বছরের বেশি সময় ধরে অনিয়ম হয়ে আসলেও মিল মালিকরা মুখ বুজে সহ্য করছেন। হয়রানীর ভয়ে তারা মুখ খুলতে ভয় পান। খাদ্য বিভাগের গুদাম কর্মকর্তাদের সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি মিল মালিকরা মাসের পর মাস সরকারি বরাদ্দের গম ওজমে কম পেয়ে আসছেন। ৫০কেজির গমের বস্তায় ওজনে কম পান প্রায় ৭০০ গ্রাম গম। এভাবে প্রতি টনে কম পান ১৪ কেজি। এক হিসেবে দেখা গেছে, ২২০ মেট্রিক টন ডিও হয় প্রতি মাসে। এ গম থেকে ৩ টন গম গুদাম কর্মকর্তাদের পেটে যায়। ৬টি উপজেলার গুদাম কর্মকর্তারা এ অনিয়মের সাথে জড়িত। প্রতি বছর গরীবের জন্য বরাদ্দকৃত প্রায় ৩৬ মেট্রিক টন গম হাওয়া হয়ে যাচ্ছে।  বর্তমান বাজারে প্রতি টন গমের দাম প্রায় ৩৬ হাজার টাকা।  অনুসন্ধানে গরীবের ওএমএস’র গম নিয়ে বেরিয়ে এসেছে থলের বিড়াল। একই সাথে সরকারি গুদাম থেকে চকচকে গম মিলারদের গোডাউনে গেলেও পচা ও নি¤œামানের ভাঙ্গা দানার গম দিয়ে আটা তৈরি করে সরবরাহের প্রমানও মিলেছে। জেলা খাদ্য অফিসের তথ্য মতে কুষ্টিয়া জেলায় প্রতি মাসে সরকারি গম বরাদ্দ আসে ২০০ থেকে ২২০ মেট্রিক টন। যে মাসে সরকারি ছুটি থাকে সেই মাসে ২০ মেট্রিক টন কম বরাদ্দ আসে। জেলার ১০টি ফ্লাওয়ার মিলের মধ্যে পাক্ষিক সাঁটাই ক্ষমতা অনুযায়ী এসব গম বিভাজন হয়ে থাকে। জেলার ৬টি উপজেলার এলএসডি ( স্থানীয় খাদ্য গুদাম) থেকে মিল মালিকরা বরাদ্দ অনুযায়ী ডিও উত্তোলন করেন। তবে বেশির ভাগ কুষ্টিয়া সদর ও জগতি এলএসডি থেকে উত্তোলন করেন মিল মালিকরা। সর্বশেষ চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ২২০ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ আসে জেলায়। এসব গম বিভাজন হয় ১০টি অটো ফ্লাওয়ার মিলের মধ্যে। মিল মালিক ও অথবা তাদের বৈধ প্রতিনিধির মাধ্যমে এসব গম উত্তোলন করা হয়। ট্রাকে বস্তা বোঝায় করে গুদামের স্কেলে পরিমাপ করা হয়। ওএমএস আইন ২০১২ সালের পরিপত্র অনুযায়ী মিল মালিকরা গম উত্তোলনের সময় খালি বস্তার ওজনের সমপরিমান গম পাবেন। খাদ্য বিভাগের ভাষায় টিআর বলা হয়। তবে কাগজে-কলমে এই গম মিল মালিকরা পেলেও বাস্তবে পান না। ২০টন গম উত্তোলনে প্রায় ২৮০ কেজি গম কম পান সব মিল মালিক। জেলার ১০জন মিল মালিকের মধ্যে ৫জনের সাথে কথা হয় । এছাড়া খাদ্য বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি  জানা যায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার দুইজন ফ্লাওয়ার মিল মালিক বলেন,‘ গুদাম থেকে গম নেওয়ার সময় ৫০কেজির বস্তায় সরবরাহ করা হয়। প্রতিটি খালি বস্তার ওজন হয় ০.৭৩৫গ্রাম পর্যন্ত। তবে সরকারি বিধান অনুযায়ী ০.৭০০ গ্রাম গম দেওয়ার বিধান আছে। তবে সেই গম তারা পান না। এভাবে ২০ মেট্রিক টন গম পরিবহন করতে প্রায় ৪০০  বস্তার প্রয়োজন হয়। ৪০০ বস্তার হিসেবে গমের পরিমান দাঁড়ায় ২৮০ কেজি। এভাবে ২২০ মেট্রিক টণ গম পরিবহনে প্রয়োজন পড়ে ৪ হাজার বস্তা। এই পরিমান বস্তার ওজনের গমের পরিমান প্রায় ৩ মেট্রিক টনের বেশি। নাদিম মন্ডল নামের একজন মিল মালিক বলেন,‘ ওএমএস নীতিমালা অনুযায়ী গমের ডিও উত্তোলনের সময় খালি বস্তার ওজনের সমপরিমান গম মিল মালিকদের পাওয়ার কথা। তবে বিগত ১০ বছরে ধরে বস্তার ওজনের গম কম পান মিল মালিকরা। এভাবে প্রতি মাসে মিল মালিকরা প্রায় ৩টন গম কম পান।  বিষয়টি নিয়ে কোন মিল মালিক ঝামেলায় জড়াতে চান না। তাই এ বিষয়টি মুখ বুজে সহ্য করেন। তবে বস্তা বিক্রি করে কিছু টাকা হয়, তাতে লোকসান কিছুটা কমে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মিল মালিকের ছেলে বলেন,‘ ওএমএস’র গম পরিবহন থেকে শুরু করে আটা তৈরিরে পদে পদে অনিয়ম হয়। গুদাম কর্মকর্তাদের কাছে জিম্মি মিল মালিকরা। তারা প্রতি বস্তায় ওজনে কম দেন, তারওপর প্রতি কেজিতে আলাদা ৫০ পয়সা নেন। বস্তার ওজনের গম যদি কোন মিল মালিক দাবি করেন সেই পরিমান গমের জন্য বাড়তি অর্থ দিয়ে আসতে হয়। তাই ঝামেলা এড়াতে বস্তার ওজনের গম কেউ দাবি করে না। এভাবে প্রতি মাসে গুদাম কর্মকর্তারা এসব গম বিক্রি করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন।’ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত ১০ বছরের বেশি সময় ধরে এ অনিয়ম চলে আসছে। ১০ বছরে প্রায় ৩৬০ হাজার মেট্রিক টনের বেশি গম কম পেয়েছেন মিল মালিকরা। এই পরিমান গম বিক্রি করে দিয়েছেন গুদাম কর্মকর্তারা। এ থেকে তারা লুটে নিয়েছেন প্রায় কোটি টাকা। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বড় বাজার এলএসডির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ঈসমাইল আদম বলেন,‘ মিল মালিকরা মিথ্যা কথা বলছেন। তারা নিজেরায় নানা অনিয়ম করেন, তাই তাদের অপকর্ম ঢাকতে আমাদের ওপর দোষা দিচ্ছেন। টিআরের গম কম দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। জেলা খাদ্য কর্মকর্তা বাবুল হোসেন বলেন,‘ সরকারি বিধির বাইরে কোন কিছু করার সুযোগ নেই গুদাম কর্মকর্তাদের। তাই এমন হয়ে থাকলে সেটা অন্যায়। বিষয়টি নিয়ে কেউ কোন সময় অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ দিলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’  আর জেলা প্রশাসক মোঃ এহেতেশাম রেজা বলেন,‘ সরকারি গম ও আটা নিয়ে কোন অরাজকতা ও অনিয়ম সহ্য করা হবে না। গুদাম কর্মকর্তা ও  মিল মালিকরা যদি কোন অনিয়ম করে সেটাও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।