কুষ্টিয়া জেলার প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

কুষ্টিয়া জেলার প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: আগস্ট ১৪, ২০০০
Tomb of Lalon Shai, Source - Own work, This file is licensed under the Creative Commons Attribution-Share Alike 4.0 International license.

কুষ্টিয়া জেলার প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব বা কুষ্টিয়া জেলার উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গ নিয়ে আজকের আলোচনা। বাংলাদেশের সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং রাজনৈতিক অঙ্গনের স্বনামধন্য অনেক ব্যক্তি এ জেলায় জন্মগ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেনঃ

কুষ্টিয়া জেলার প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব/

কুষ্টিয়া জেলার উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গের তালিকা

 

  • লালন শাহ্ – প্রখ্যাত বাউল ও মরমী গানের স্রষ্টা;
  • মীর মশাররফ হোসেন – প্রখ্যাত সাহিত্যিক;
  • অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় – ইতিহাসবিদ, আইনজীবী ও সাহিত্যিক এবং বিজ্ঞান সম্মত প্রণালীতে বাংলা ভাষায় ইতিহাস রচনায় পথিকৃৎ
  • কাঙাল হরিনাথ – সাময়িক পত্রসেবী, সমাজ বিপ্লবী ও বাউল কবি
  • ড. কাজী মোতাহার হোসেন – সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, সঙ্গীতজ্ঞ ও দাবাড়ু;
  • সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় – কিংবদন্তি অভিনেতা, কবি, সাহিত্যিক। (পৈতৃক নিবাস)
  • মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা – বাঙ্গালী মুসলিম মহিলাদের মধ্যে প্রথম সনেট ও গদ্য ছন্দে কবিতা লিখেছেন;
  • ব্যারিস্টার এম, আমীর-উল-ইসলাম – বিশিষ্ট আইনজীবী ও মুক্তিযোদ্ধা
  • যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় (বাঘা যতীন) – অগ্নিযুগের প্রখ্যাত স্বদেশী নেতা ও সশস্ত্র সংগ্রামী;
  • ড. রাধা বিনোদ পাল – প্রখ্যাত আইনজীবী, আইন সম্পর্কিত বহু গ্রন্থের রচয়িতা ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আন্তর্জাতিক সামরিক আদালতের বিচারকের দায়িত্ব পালনকারী
  • প্যারীসুন্দরী দেবী – নীলকর টমাস আইভান কেনির কৃষকদের উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে কৃষক আন্দোলন করেন;
  • গগন হরকরা – প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ;
  • শাহ আজিজুর রহমান – রাজনীতিবিদ ও বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী;
  • মোহিনী মোহন চক্রবর্তী – প্রখ্যাত ব্যবসায়ী ও পূর্ববাংলার সর্ববৃহৎ কাপড়ের কল চক্রবর্তী এন্ড সন্স-এর প্রতিষ্ঠাতা;
  • হাসানুল হক ইনু- একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী, কুষ্টিয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য, সভাপতি -জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)।
  • মাহবুবুল আলম হানিফ – বর্তমান সংসদ সদস্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ;
  • খগেন্দ্রনাথ মিত্র – খ্যাতনামা শিশু সাহিত্যিক।
  • এম শমশের আলী: শিক্ষাবিদ ও গবেষক।
  • কাজী আরেফ আহমেদ – মুক্তিযুদ্ধের বিশিষ্ট সংগঠক ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার রূপকার;
  • স্যার মন্মথনাথ মুখোপাধ্যায় – কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি ও আইনশাস্ত্রবিদ
  • শিবেন্দ্রমোহন রায় – ব্রিটিশ আমলের কমিউনিস্ট কর্মী এবং মানবাধিকার আন্দোলনের শহীদ;
  • জলধর সেন – ভ্রমণ কাহিনী ও উপন্যাস লেখক।
  • শরফুদ্দীন আহমেদ:-বীর উত্তম
  • হাবিবুল বাশার সুমন – বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক;
  • সালাউদ্দিন লাভলু-বাংলাদেশী অভিনেতা, চিত্রনাট্যকার এবং টিভি পরিচালক
  • জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত:-বাংলানদেশী লেখক।
  • মিজু আহমেদ -অভিনেতা ৷
  • আহমেদ শরীফ- অভিনেতা।
  • আব্দুল বারী – মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক।
  • কচি খন্দকার- বাংলাদেশী অভিনেতা, চিত্রনাট্যকার এবং টিভি পরিচালক
  • সালমা আক্তার (জন্মঃ ১ জানুয়ারি ১৯৯১) – হলেন একজন বাংলাদেশী সঙ্গীত শিল্পী;
  • মোহাম্মদ কোরবান আলী – সাবেক খাদ্য প্রতিমন্ত্রী
  • এনামুল হক বিজয় – বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ওপেনার;
  • বন্যা মির্জা- মঞ্চ ও টিভি অভিনেত্রী
  • মোহাম্মদ মিঠুন – বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য।
  • আজিজুর রহমান – কবি, গীতিকার ও কুষ্টিয়ার ইতিহাস সন্ধানী;
  • রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই – খ্যাতনামা শিশু সংগঠক;
  • আবদুর রউফ চৌধুরী – মুক্তিযোদ্ধা, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের রাজনীতিবিদ এবং কুষ্টিয়া-২ (ভেড়ামারা-মিরপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য।
  • শফি মন্ডল- জনপ্রিয় বাউল শিল্পী।

 

ফকির লালন শাহ‌্

বাউল সম্রাট লালন শাহ‌্ এর জন্ম বৃত্তান্ত নিয়ে যথেষ্ট মতান্তর রয়েছে। তার জাতি ধর্ম বিষয়েও সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য পাওয়া যায় না। প্রবাদ আছে যে তার জন্ম হিন্দু কায়স্থ পরিবারে। কোন এক সময় তিনি এক বাউল দলের সঙ্গী হয়ে গঙ্গাস্নানে যান। পথিমধ্যে বসন্ত রোগে আক্রান্ত হলে সঙ্গীরা তাকে নদীর তীরে ফেলে যান। সিরাজ শাহ নামক এক মুসলমান বাউল তাকে কুড়িয়ে সেবা করে সুস্থ করে তোলেন। সিরাজ শাহর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে তিনি মরমি সাধনায় আত্মনিয়োগ করেন।

কুষ্টিয়া জেলার প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব : বাউল সম্রাট লালন শাহ‌্

বাউল সম্রাট লালন শাহ‌্

 

সিরাজ শাহর মৃত্যু হলে তিনি কুষ্টিয়ার ছেউঁড়িয়ায় আখড়া স্থাপন করে সেখানে তাঁর প্রতিভার বিকাশ ঘটান। নিজ সাধনায় তিনি হিন্দু-মুসলমান শাস্ত্র সর্ম্পকে বিশেষ বুৎপত্তি অর্জন করে বাউল সঙ্গীতে শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেন। তাঁর গান আধ্যাত্মিক, মরমি ও শিল্পগুণে সমৃদ্ধ। লালন শাহ‌্ এর রচিত গানের সংখ্যা সহস্রাধিক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সর্বপ্রথম লালনের ২৯৮টি গান সংগ্রহ করে ২০টি গান তৎকালীন ‘‘প্রবাসী’’ প্রত্রিকায় প্রকাশ করেন। লালন শাহ‌্ এর খাচার ভিতর অচিন পাখী, বাড়ির পাশে আরশি নগর, মিলন হবে কত দিনে আমার মনের মানুষের সনে, আমার ঘরখানায় কে বিরাজ করে ইত্যাদি গান বাউলতত্ত্ব বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। ১২৯৭ বঙ্গাব্দের ১ কার্তিক ছেউঁড়িয়ায় তিনি দেহত্যাগ করেন।

মোহিনী মোহন চক্রবর্তী

কুমারখালীর এলঙ্গী গ্রামে জন্ম। ১৯০৮ সালে পূর্ববঙ্গের প্রাচীনতম কাপড়ের মিল মোহিনী মিলস্ এর প্রতিষ্ঠাতা।

মোহিনী মোহন চক্রবর্তী

মোহিনী মোহন চক্রবর্তী

কাঙাল হরিনাথ মজুমদার

কুমারখালীর কুন্ডুপাড়া গ্রামে জন্ম। তিনি সমাজবিপ্লবী-সাময়িক পত্রসেবী হিসেবে পরিচিত। তার পরিচালিত গ্রামবার্তা প্রকাশিকা (১৮৬৩-৮৫) সমকালে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। তার প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে ব্রহ্মান্ড দেব, ফিকির চাঁদের গীতাবলী, বিজয় বসন্ত উল্লেখযোগ্য। তার প্রতিষ্ঠিত এম এন (মথুরানাথ এর নামে) প্রেসে মীর মশাররফ হোসেনের বিষাদ সিন্ধু গ্রন্থটি ছাপানো হয়। গ্রামবার্তা পত্রিকাটিও এখান থেকে প্রকাশিত হতো। প্রেসটির ধ্বংসাবশেষ এখনো পর্যটকদের আকর্ষণ করে।

কাঙাল হরিনাথ মজুমদার

কাঙাল হরিনাথ মজুমদার

 

বিচারপতি ডঃ রাধা বিনোদ পাল

১৮৯৬ সালে দৌলতপুর উপজেলার সেলিমপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন। এছাড়া তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আন্তর্জাতিক সামরিক আদালতের প্রধান বিচারক হিসেবে বিচার কার্য পরিচালনা করেছিলেন। অন্যান্য দেশের বিচারকরা যখন জাপানকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে, তিনি তখন জাপানকে যুদ্ধাপরাধের দায় থেকে নির্দোষ প্রমাণ করে আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করেন। জাপানে কিয়োটো শহরে তার নামে একটি যাদুঘর ও রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে।

রাধা বিনোদ পাল

রাধা বিনোদ পাল

প্যারী সুন্দরী

বর্তমান মিরপুর উপজেলার সদরপুরের মহিলা জমিদার ছিলেন। তিনি কুষ্টিয়া অঞ্চলের নীল বিদ্রোহের নেত্রী ছিলেন। ১৮৬০ সালে বাংলাদেশে যে নীল বিদ্রোহ দেখা দেয় তা প্রকৃতপক্ষে কুষ্টিয়ায় শুরু হয়। কুষ্টিয়ার শালঘর মধুয়ার কুখ্যাত নীলকর টি. আই কেনির সঙ্গে আমলা সদরপুরের মহিলা জমিদার প্যারী সুন্দরীর লড়াইকে কেন্দ্র করে এ বিদ্রোহ প্রবল আকার ধারণ করে। শালঘর মধুয়ায় ছাউনী করে প্যারীসুন্দরীর নেতৃত্বে কৃষকরা জে. জি মরিসের দলকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়। তিনি শালঘর মধুয়ার নীলকুঠি কয়েকবার আক্রমণ করেছিলেন।

জমিদার প্যারি সুন্দরী খুনি বাবার গর্বিত কন্যা

জমিদার প্যারি সুন্দরী খুনি বাবার গর্বিত কন্যা

 

মীর মশাররফ হোসেন

১৮৪৭ সালে কুমারখালীর লাহিনী পাড়ায় জন্ম। তার পিতা ছিলেন জমিদার মীর মোয়াজ্জেম হোসেন ও মাতা ছিলেন দৌলতন নেছা। বাঙালী মুসলমানদের মধ্যে তিনিই প্রথম একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন যার নাম ছিল ‘‘আজিজুননেহার’’ (১৮৭৪-৭৬)। তার আরেকটি উল্লেখযোগ্য পত্রিকা ছিল ‘হিতকরী’’। তিনি অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করেন এবং এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিষাদসিন্ধু, জমিদার দর্পণ, উদাসীন পথিকের মনের কথা, গাজী মিয়ার বস্তানী, রত্নবতী, বসন্ত কুমারী, গোজীবন, আমার জীবনী, সংগীত লহরী ইত্যাদী। তাঁর স্মৃতিধন্য বাস্ত্তভিটায় তোরণ, কিছু ফলক, বিদ্যালয় ও লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

বাঘা যতীন

বাঘা যতীন

 

বাঘা যতীন

যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় (বাঘা যতীন) (৭ ডিসেম্বর, ১৮৭৯ – ১০ সেপ্টেম্বর, ১৯১৫) ছিলেন একজন বাঙালি ব্রিটিশ-বিরোধী বিপ্লবী নেতা। বাঘা যতীনের জন্ম হয় কুষ্টিয়া জেলার কয়া গ্রামে। তাঁর পিতার নাম উমেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় এবং মাতার নাম শরৎশশী। যতীন শৈশব থেকেই শারীরিক শক্তির জন্য বিখ্যাত ছিলেন। শুধুমাত্র একটি ছোরা নিয়ে তিনি একাই একটি বাঘকে হত্যা করতে সক্ষম হন বলে তাঁর নাম রটে যায় বাঘা যতীন।

এছাড়া শাহ্ আজিজুর রহমান, প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী, সংগীত বিশারদ আব্দুল জববার, ফরিদা পারভীন, কবি আজিজুর রহমান, আকবর হোসেন, রোকনুজ্জামান ওরফে দাদা ভাই, মাহমুদা খানম সিদ্দিকা, মন্মনাথ মুখোপাধ্যায় সহ আরও নাম না জানা অনেক গুণী ব্যক্তি এ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।

আরও পড়ুন: