স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হলে মেহেরপুর, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা মিলিয়ে গড়ে উঠবে পর্যটন জোন - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হলে মেহেরপুর, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা মিলিয়ে গড়ে উঠবে পর্যটন জোন

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: জুন ২৪, ২০২২

মেহেরপুর, ২৪ জুন ২০২২ (বাসস): স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের তিন জেলা—মেহেরপুর, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা—মিলে গড়ে উঠবে একটি সমন্বিত পর্যটন জোন। এ অঞ্চলের পর্যটনের কেন্দ্রবিন্দু হবে মেহেরপুর জেলা। নতুন এ পর্যটন জোন চালু হলে কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ও মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন

তিনি বলেন, “বর্তমানে পৃথিবীতে প্রতি দশটি কর্মসংস্থানের মধ্যে একটি সৃষ্টি হয় পর্যটন খাতে। দক্ষিণ এশিয়ার দ্রুত বিকাশমান পর্যটন শিল্পের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম, আর বাংলাদেশের জন্মস্থান মেহেরপুরের মুজিবনগর।”

স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হলে মেহেরপুর, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা মিলে গড়ে উঠবে পর্যটন জোন

পর্যটন জোনের সম্ভাবনা ও কেন্দ্রবিন্দু

প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন আরও বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে মেহেরপুরের মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্স, আমঝুপি কুঠিবাড়ি, কুষ্টিয়ার শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি, লালন ফকিরের আখড়া এবং চুয়াডাঙ্গার দর্শনার কেরু অ্যান্ড কোম্পানি নিয়ে একটি সমন্বিত পর্যটন অঞ্চল গড়ে তোলা হবে।

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, এই পর্যটন জোনকে ঘিরে স্থানীয় জনগণের জীবনমান উন্নত হবে, নতুন ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ তৈরি হবে, সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে এবং অঞ্চলের অর্থনীতি নতুন গতি পাবে।

মুজিবনগর: বাংলাদেশের সূতিকাগার

১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ অনুষ্ঠিত হয়। সেই ঐতিহাসিক স্থানে পরবর্তীতে গড়ে তোলা হয় মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্স, যা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অনন্য প্রতীক।

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের ৩১ আগস্ট ঐতিহাসিক স্থানটি সংরক্ষণের নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে গণপূর্ত অধিদপ্তর জাদুঘর, স্মৃতিসৌধ ও অতিথিশালা নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়। ১৯৮৮ সালে প্রায় ১ কোটি ৯৩ লাখ টাকায় স্মৃতিসৌধ নির্মাণ সম্পন্ন হয়।

১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ৬৬ একর জমির ওপর ১১টি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় মুজিবনগর কমপ্লেক্সের নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং ২০০০ সালে প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে তা সম্পন্ন হয়।

এখানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে দৃশ্যমানভাবে তুলে ধরা হয়েছে—যেমন হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ধ্বংস, রায়েরবাজার বধ্যভূমির নির্মমতা, পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের দলিল, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ প্রভৃতি।

বর্তমানে মুজিবনগর কমপ্লেক্স এলাকা একটি জনপ্রিয় অবকাশযাপন কেন্দ্র, যেখানে শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। স্থানীয় বিক্রেতা নূর হোসেন বলেন, “প্রতিদিন আমি ৪ থেকে ৫ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করি, প্রায় এক হাজার টাকার মতো লাভ হয়। পদ্মা সেতু চালু হলে পর্যটকের সংখ্যা আরও বাড়বে।”

আমঝুপি নীলকুঠি: ঐতিহ্যের সাক্ষ্য

ব্রিটিশ আমলে নীল চাষের জন্য ইংরেজরা ৭৪ একর জমির ওপর আমঝুপি নীলকুঠি স্থাপন করে। ১৭৭৮ সালে ইংরেজ ব্যবসায়ী ক্যারল ব্লুম কাজলা নদীর তীরে নীলকুঠির কার্যক্রম শুরু করেন। ১৮১৮ থেকে ১৮২০ সালের মধ্যে মেহেরপুর অঞ্চলে একাধিক নীলকুঠি স্থাপিত হয়, যার মধ্যে আমঝুপি অন্যতম।

১৯৭৮ সালের ১৩ মে খুলনা বিভাগ উন্নয়ন বোর্ডের এক সভায় এটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সংস্কার করা হয়। বর্তমানে প্রতিদিন পর্যটকের ভিড়ে মুখর থাকে এ ঐতিহাসিক স্থান, যেখানে শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

কুটির শিল্প বিক্রেতা আবু হানিফ বলেন, “পদ্মা সেতু চালু হলে এখানে পর্যটকের ভিড় বাড়বে, নতুন ব্যবসার সুযোগ তৈরি হবে।”

 

স্থানীয় উদ্যোক্তা ও প্রশাসনের প্রস্তুতি

স্থানীয় পরিবহন ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু চালুর পর তিনি আমঝুপি, মুজিবনগর, কেরু অ্যান্ড কোম্পানি ও শিলাইদহ কুঠিবাড়ি পর্যটন রুটে বাস সার্ভিস চালু করবেন এবং পর্যটকদের জন্য গাইড সার্ভিসও রাখবেন।

মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক ড. মুনসুর আলম খান বলেন, “জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী এই অঞ্চলে একটি পর্যটন জোন গড়ে তোলার জন্য নিরলসভাবে কাজ করছেন। পদ্মা সেতু চালুর ফলে মানুষের আগমন বৃদ্ধি পাবে, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে, এবং অনেক উদ্যোক্তা ইতিমধ্যেই উন্নতমানের হোটেল-মোটেল গড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।”

 

স্বপ্নের পদ্মা সেতু কেবল একটি সেতুই নয়—এটি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতি, পর্যটন ও সংস্কৃতির এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। মেহেরপুর, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতে থাকা এই সম্ভাবনাময় পর্যটন জোন ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অন্যতম আকর্ষণীয় ভ্রমণগন্তব্য হয়ে উঠতে পারে।