কুমারখালী প্রতিনিধি ॥ ঘড়ির কাঁটায় দুপুর একটা বেজে ৪৩ মিনিট। তখনও চেয়ারম্যান কক্ষে ঝুলছিল তালা। পরিষদের বারান্দায় বসে আছেন গুটি কয়েক মেম্বর, গ্রাম পুলিশ ও জনগণ। সুনসান নিরবতা। অলস সময় কাটাচ্ছেন সচিবও। কুষ্টিয়ার কুমারখালীর যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদে গতকাল বুধবার (১৪ আগষ্ট) এমন দৃশ্য দেখা যায়। গত মঙ্গলবার সকালে সরেজমিন গিয়েও এমন দৃশ্য দেখা যায়। অথচ সপ্তাহখানেক আগেও এই পরিষদ চত্বরে থাকত উপচে পড়া ভিড়।
আর কাজে ব্যতিব্যস্ত থাকত সংশ্লিষ্টরা। এদিন পরিষদে সেবা নিতে আসা ইউনিয়নের জোতমোড়া গ্রামের গৃহিনী সুরাইয়া পারভীন জানান, তিনি ব্যবসায়ীক ট্রেড লাইসেন্সের জন্য গেল তিন দিন ধরে পরিষদে ঘুরছেন। কিন্তু চেয়ারম্যান না থাকায় প্রতিদিনই ফিরে যাচ্ছেন। পরিষদের সচিব মো. রেজাউল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগের পর থেকেই আত্মগোপনে রয়েছেন চেয়ারম্যান। পরিষদে আসেনা।
এতে মুখ থুবড়ে পড়েছে পরিষদের কার্যক্রম। অনেকেই এসে ফিরে যাচ্ছেন। মুঠোফোনে যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. মিজানুর রহমান বলেন, ৫ আগষ্ট সরকার পদত্যাগের পরপরই বিরোধী দলের লোকজন বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর, চাঁদাবাজি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করে চলেছে। তার পরিষদেও এসেছিল। সেজন্য আপাতত পরিষদে যাচ্ছেন না। তার ভাষ্য, পরিবেশ শান্ত হলে পরিষদে ফিরবেন তিনি। জানা গেছে, গেল ৫ আগষ্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন।
এর পরই সারাদেশের ন্যায় কুমারখালীতেও বিভিন্ন স্থাপনা, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এতে আতঙ্কিত হয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও আওয়ামী লীগ পন্থি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। আরো জানা গেছে, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান খান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। পৌরসভার মেয়র সামছুজ্জামান অরুন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহবায়ক। সদকী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিনহাজুল আবেদীন দ্বীপ সাবেক আওয়ামী লীগ এক এমপির ভাই। কয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী হোসেন আওয়ামী লীগ নেতা। তাঁরা ৫ আগষ্টের পর থেকে আর কার্যালয়ের আসেন না। এতে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কার্যক্রম। চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ জনগণ। এবিষয়ে কুমারখালী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী ও সচিব (ভারপ্রাপ্ত) মো. ওয়াহিদুর রহমান জানান, মেয়র না থাকায় কার্যক্রমের ছন্দপতন হয়েছে। সকলেরই ভোগান্তি হচ্ছে। মেয়রকে কার্যালয়ে ফিরে আনতে চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান।
পৌরসভার প্যানেল মেয়র এস এম রফিক ফোনে জানান, বিরোধীদলের লোকজন মেয়র, প্যানেল মেয়রসহ বিভিন্ন বাড়িতে ভাঙচুর-লুটপাট করছে। পৌর কার্যালয়ে গিয়েও হুমকি দিচ্ছে। সেজন্য ভয়ে তারা আত্মগোপনে রয়েছেন। সদকী ইউনিয়ন পরিষদের সচিব সুকুমার বিশ্বাস জানান, চেয়ারম্যান কার্যালয়ে আসেনা। লোকজনের উপস্থিতিও কম। প্যানেল চেয়ারম্যান দিয়ে কোনোমতে চলছে পরিষদ। কয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী হোসেন জানান, চারিদিকের পরিস্থিতি ভাল না।
পরিবেশ ভাল হলে পরিষদে যাবেন তিনি। ফোনে পাওয়া যায়নি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান খানকে। তবে তাঁর সিএ রাজু আহমেদ জানান, চেয়ারম্যান স্যার অসুস্থজনিত কারণে ১৭ জুলাই থেকেই ঢাকায় ছিলেন। আর ফিরে আসেননি। কাউকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দাঁয়িত্বও দিয়ে যাননি তিনি। ভাইস চেয়ারম্যানরাও আসেনা কার্যালয়ে। জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ও পান্টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান জানান, হামলা, ভাঙচুর, চাঁদাবাজির সাথে বিএনপির কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
তবে এ কথা সত্য যে, আতঙ্কে অনেক চেয়ারম্যান, মেম্বররা কার্যালয়ে আসেনা। তিনি তাঁদের ফিরে আসার আহবান জানিয়েছেন। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা কার্যালয়ে না আসায় স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম। তিনি জানান, কিছুটা আইন শৃঙ্খলার অবনতি হয়েছিল। তবে পুলিশ কাজে ফিরেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে টহল দেওয়া হচ্ছে। সবাইকে সচেতন করা হচ্ছে। আত্মগোপনে থাকা জনপ্রতিনিধিদের কার্যালয়ে ফেরাতে যোগাযোগ চলছে।
