বিশেষ প্রতিনিধি ॥ কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে নাসির গ্রুপের আনোয়ারা বিশ্বাস মা ও শিশু হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় কুলসুম খাতুন (২৩) নামে এক প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। গত বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাতে ভুল অস্ত্রোপচারের কারণে ওই প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনার প্রায় এক মাস আগে ভুল চিকিৎসায় আরও এক রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এক মাসের ব্যবধানে দুই রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ও সেবার মান সন্তোষজনক না হওয়ায় পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এ হাসপাতালের সব ধরনের অপারেশন বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
একইসাথে ভুল অপারেশনে রোগীর মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাত কার্য দিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. পিযূষ কুমার সাহাকে। বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য বিভাগের পরিদর্শন টিম হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে এ নির্দেশনা জারি করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন আকুল উদ্দিন। এর আগে মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাতে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের আল্লাহরদর্গা এলাকার আনোয়ারা বিশ্বাস মা ও শিশু হাসপাতালে প্রসবকালীন অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকের ভুলের কারণে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন কুলসুম খাতুন। বুধবার সকালে ওই নারীর মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসকের ভুল ও অবহেলায় রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার ও স্বজনরা। এ ঘটনায় দোষী চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা। হাসপাতালে অভিযানে উপস্থিত ছিলেন – দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ তৌহিদুল হাসান তুহিন, দৌলতপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়সাল আহমেদ, দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরআমও) সামছুল আরেফিন সুলভ।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন আকুল উদ্দিন বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হয়েছে। অল্প দিনের ব্যবধানে ভুল চিকিৎসায় দুই রোগীর মৃত্যু সহ বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুল অপারেশনে রোগীর মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাত কার্য দিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এবিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ তৌহিদুল হাসান তুহিন বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে অভিযান চালানো হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত ওই হাসপাতালের সব ধরনের অপারেশন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
নিহত কুলসুম খাতুন (২৩) কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার রিফাইতপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের লক্ষীকোলা গ্রামের রায়হান আলীর স্ত্রী। তার স্বামী পেশায় কাঠমিস্ত্রী। নিহতের শ্বশুর সবুজ আলী বলেন, প্রসবজনিত কারণে মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাত ৭টার দিকে প্রসূতি কুলসুমকে আল্লাহরদর্গা এলাকার আনোয়ারা বিশ্বাস মা ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং ভর্তি করি। হাসপাতালের চিকিৎসকরা ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন। রাত ৮টার দিকে তারা অস্ত্রোপচার করেন। একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। অস্ত্রোপচারের পর থেকে ক্রমেই রোগীর অবস্থা আশংকাজনক খারাপ হতে থাকে।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় অবস্থা বেগতিক দেখে রোগীকে জোরপূর্বক রাজশাহী মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। আমরা হাসপাতাল থেকে যেতে চাইনি। রোগীর অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গেলেও কোনও চিকিৎসা দেননি চিকিৎসক বা হাসপাতালের কোনও স্টাফ। বুধবার সকালে চাপ প্রয়োগ করে জোরপূর্বক হাসপাতাল থেকে বের করে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আশংকাজনক অবস্থায় তাকে নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে সেখানকার চিকিৎসক সাড়ে ১১টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকের ভুলের কারণে নিহতের ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
প্রসবকালীন অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকের ভুলের কারণে কুলসুমের মৃত্যু হয়েছে। যারা হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে অপারেশন বন্ধ করে দিয়েছেন তাদেরকে ধন্যবাদ। সুষ্ঠু নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
