দৌলতপুর উপজেলা - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

দৌলতপুর উপজেলা

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ১০, ২০০০

দৌলতপুর উপজেলা কুষ্টিয়া জেলার অন্তর্গত একটি বৃহৎ উপজেলা। এর মোট আয়তন ৪৬৮.৭৬ বর্গকিলোমিটার। উপজেলার ভৌগোলিক অবস্থান ২৩°৫২´ থেকে ২৪°১২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৪২´ থেকে ৮৮°৫৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে বিস্তৃত।

সীমানা:

  • উত্তরে: রাজশাহীর বাঘা ও নাটোরের লালপুর উপজেলা

  • দক্ষিণে: মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলা ও কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা

  • পূর্বে: ভেড়ামারা ও মিরপুর উপজেলা

  • পশ্চিমে: ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সীমান্ত

 

জনসংখ্যা ও ধর্মীয় বিবরণ (২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী):
মোট জনসংখ্যা ৪,৪৩,৬৫৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২,২৮,০৩২ জন এবং মহিলা ২,১৫,৬২৩ জন।
ধর্মভিত্তিক জনসংখ্যা:

  • মুসলিম: ৪,৪০,৫৭১ জন

  • হিন্দু: ২,৯৫৬ জন

  • বৌদ্ধ: ৬৪ জন

  • খ্রিস্টান: ১৩ জন

  • অন্যান্য ধর্মাবলম্বী: ৫১ জন

প্রাকৃতিক জলাশয় ও ভূপ্রকৃতি:
উপজেলাটির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ দুইটি নদী—গঙ্গা ও মাথাভাঙ্গা। এছাড়াও বেশ কিছু বিল রয়েছে যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ, যেমন:

  • কালুয়া বিল

  • পঙ্খীর বিল

  • বোয়ালিয়া বিল

  • ফকিরধরা বিল

প্রশাসনিক ইতিহাস:
দৌলতপুর থানা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৫৪ সালে। পরবর্তীতে, ১৯৮৩ সালে এটি পূর্ণাঙ্গ উপজেলায় রূপান্তরিত হয়।

প্রাচীন নিদর্শন ও প্রত্নসম্পদ:
এই উপজেলায় রয়েছে ঐতিহাসিক ও স্থাপত্যিক গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্থাপনা, যেমন:

  • হোসেনাবাদ রাজবাড়ী

  • মহিষাকুন্ডি নীলকুঠি

  • রেফায়েতপুর জমিদার বাড়ি

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস:
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দৌলতপুর উপজেলায় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
প্রধান যুদ্ধক্ষেত্রসমূহ:

  • ব্যাংগাড়ি মাঠ

  • বালিয়াডাঙ্গা মাঠ

  • মহিষকুন্ডি

  • শ্যামপুর

  • শেরপুর

  • চিলমারী

  • ফরাজী বাড়ি

  • গোয়াল গ্রাম

বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, ১৩ নভেম্বর পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের এক সংঘর্ষে বহু সংখ্যক পাকসেনা নিহত হয়।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্নসমূহ:

  • গণকবর: ৬টি

  • স্মৃতিসৌধ: ১টি

  • মুক্তিযোদ্ধা শহীদদের স্মরণে নির্মিত সড়ক: ১০টি

 

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান

দৌলতপুর উপজেলায় মুসলিম, হিন্দু এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয় রয়েছে। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • খাস মথুরাপুর শেখ পাড়ার বায়তুল মামুর জামে মসজিদ
  • দৌলতখালী জামে মসজিদ
  • আন্দিয়া কালীবাড়ি মন্দির
  • পাঁচপীরের মাজার

 

শিক্ষা ব্যবস্থা শিক্ষার হার

দৌলতপুর উপজেলায় শিক্ষার সার্বিক গড় হার ৩৫.৬%। এর মধ্যে পুরুষদের শিক্ষার হার ৩৮.৭% এবং নারীদের ৩২.৩%।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা:

  • কলেজ: ১৪টি
  • ভোকেশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ: ১টি
  • কারিগরি কলেজ: ১টি
  • মাধ্যমিক বিদ্যালয়: ৯৫টি
  • প্রাথমিক বিদ্যালয়: ১৮৭টি
  • কমিউনিটি স্কুল: ৩টি
  • আনন্দ স্কুল: ১১৬টি
  • মাদ্রাসা: ১২টি

উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান:

  • দৌলতপুর গার্লস কলেজ (১৯৯৮)
  • ফিলিপনগর মরিচা কলেজ (১৯৯৪)
  • প্রাগপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০৫)
  • শ্যামপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২৩)
  • মথুরাপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৮)
  • দৌলতপুর পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৬৩)
  • দৌলতখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৬৭)
  • মরিচা মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৭৩)
  • চিলমারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৭৩)
  • দৌলতপুর পাইলট বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৭৯)
  • দৌলতপুর দাখিল মাদ্রাসা (১৯৯৪)

 

পত্র-পত্রিকা সাময়িকী

উপজেলায় স্থানীয় পত্রিকা ও সাহিত্যচর্চার পরিবেশ বিদ্যমান।

  • সাপ্তাহিক: কুষ্টিয়ার কণ্ঠ
  • মাসিক: দৌলতপুর বার্তা
  • সাময়িকী: প্রদীপ, চাঁদের হাসি, বাঁধ ভেঙেছে, হিসনা, পলাশী, পারাবার

 

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান

  • লাইব্রেরি: ৮টি
  • শিল্পকলা একাডেমি: ১টি
  • নাট্যদল: ৪টি
  • সিনেমা হল: ৩টি
  • ক্লাব: ১৫৬টি
  • মহিলা সংগঠন: ৪টি
  • সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংগঠন: ২টি
  • খেলার মাঠ: ৮৫টি

 

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস

  • কৃষি: ৬০.০২%
  • অকৃষি শ্রমিক: ৬.৬৩%
  • শিল্প: ২.২০%
  • ব্যবসা: ১৭.১৬%
  • পরিবহন ও যোগাযোগ: ২.৬৬%
  • চাকরি: ৩.৮২%
  • নির্মাণ: ০.৭১%
  • ধর্মীয় সেবা: ০.১২%
  • রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স: ০.৩০%
  • অন্যান্য: ৬.৩৮%

 

কৃষি কৃষিজমি

  • ভূমিমালিক: ৫৫.০৭%
  • ভূমিহীন: ৪৪.৯৩%
  • শহরে কৃষিজমির মালিকানার হার: ৫২.৭৮%
  • গ্রামে কৃষিজমির মালিকানার হার: ৫৫.১৭%

প্রধান কৃষি ফসল: ধান, গম, পাট, তামাক, তুলা, আলু, টমেটো, ভুট্টা, পান
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসল: কাউন, তিসি

 

ফল-ফলাদি

  • প্রধান ফল: আম, কলা, কাঁঠাল, পেঁপে, লিচু, পেয়ারা, তাল
  • বিলুপ্ত বা হারিয়ে যাওয়া বাহন: পালকি, গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি

 

শিল্প কুটিরশিল্প

  • শিল্প কারখানা: বিড়ি কারখানা, দিয়াশলাই কারখানা, সিগারেট কারখানা
  • কুটিরশিল্প: স্বর্ণশিল্প, তাঁতশিল্প, বাঁশ ও বেতের কাজ, কাঠের কাজ

 

 

 

google news

গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

 

এই উপজেলায় মোট হাটবাজারের সংখ্যা ৬৭টি এবং বার্ষিক ও মৌসুমি মেলার সংখ্যা ৩টি। উল্লেখযোগ্য হাটগুলোর মধ্যে রয়েছে—আল্লারদরগা হাট, খলিশাকুন্ডি হাট, বাড়াগারদিয়া হাট, প্রাগপুর হাট ও মহিষাকুন্ডি হাট।
বিখ্যাত মেলার মধ্যে রয়েছে—মনসাতলা মহরম মেলা ও মথুরাপুর দরগাবাড়ি মেলা, যা ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় ও লোকজ সংস্কৃতির ধারক ও বাহক।

 

প্রধান রপ্তানিযোগ্য পণ্য

উপজেলার অর্থনীতিতে কৃষিপণ্য রপ্তানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এখানকার প্রধান রপ্তানিযোগ্য দ্রব্যসমূহ হলো—

  • তামাক তামাকজাত পণ্য
  • পান
  • টমেটো
  • পাট

এছাড়া মৌসুমি শাকসবজি ও কিছু হস্তশিল্পজাত সামগ্রীও বাণিজ্যিকভাবে স্থানীয় ও জাতীয় বাজারে সরবরাহ করা হয়।

 

বিদ্যুৎ সুবিধা

উপজেলার সকল ইউনিয়ন পল্লীবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাভুক্ত হলেও বাস্তব প্রয়োগে মোট ২৩.৮৬% পরিবারের মধ্যে বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। এটি এখনও কাঙ্ক্ষিত মাত্রার নিচে অবস্থান করছে, যার ফলে অনেক পরিবার বিকল্প আলো ও শক্তির উৎসের ওপর নির্ভরশীল।

 

পানীয়জলের উৎস

নিম্নোক্ত উৎসগুলো থেকে উপজেলাবাসী নিরাপদ পানীয়জলের চাহিদা মেটান:

  • নলকূপ – ৯৫.৩৩%
  • ট্যাপ – ০.৬০%
  • পুকুর – ০.১০%
  • অন্যান্য উৎস (যেমন—বৃষ্টির পানি, কুয়া ইত্যাদি) – ৩.৯৭%

 

স্যানিটেশন ব্যবস্থা

উপজেলার স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন ব্যবহারের চিত্র নিম্নরূপ:

  • স্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে ১৯.৪৮% পরিবার (গ্রামে ১৯.১৩%, শহরে ২৭.২৩%)
  • অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে ৫০.৭৪% পরিবার (গ্রামে ৫০.৯৩%, শহরে ৪৬.৬২%)
  • ল্যাট্রিন সুবিধাবিহীন পরিবার ২৯.৭৮%

সার্বিকভাবে স্যানিটেশন ব্যবস্থা এখনও উন্নয়নের অপেক্ষায় রয়েছে।

 

স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রসমূহ

উপজেলায় স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ও প্রকারভেদ নিম্নরূপ:

  • উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স – ১টি
  • স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র – ১০টি
  • স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কমপ্লেক্স – ৬টি
  • কমিউনিটি ক্লিনিক – ৪৩টি
  • বেসরকারি ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার – ১৮টি

এ সকল প্রতিষ্ঠান প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, মাতৃ ও শিশুর যত্ন এবং রোগ নির্ণয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।