দৌলতপুর উপজেলা কুষ্টিয়া জেলার অন্তর্গত একটি বৃহৎ উপজেলা। এর মোট আয়তন ৪৬৮.৭৬ বর্গকিলোমিটার। উপজেলার ভৌগোলিক অবস্থান ২৩°৫২´ থেকে ২৪°১২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৪২´ থেকে ৮৮°৫৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে বিস্তৃত।
সীমানা:
উত্তরে: রাজশাহীর বাঘা ও নাটোরের লালপুর উপজেলা
দক্ষিণে: মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলা ও কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা
পূর্বে: ভেড়ামারা ও মিরপুর উপজেলা
পশ্চিমে: ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সীমান্ত
জনসংখ্যা ও ধর্মীয় বিবরণ (২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী):
মোট জনসংখ্যা ৪,৪৩,৬৫৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২,২৮,০৩২ জন এবং মহিলা ২,১৫,৬২৩ জন।
ধর্মভিত্তিক জনসংখ্যা:
মুসলিম: ৪,৪০,৫৭১ জন
হিন্দু: ২,৯৫৬ জন
বৌদ্ধ: ৬৪ জন
খ্রিস্টান: ১৩ জন
অন্যান্য ধর্মাবলম্বী: ৫১ জন
প্রাকৃতিক জলাশয় ও ভূপ্রকৃতি:
উপজেলাটির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ দুইটি নদী—গঙ্গা ও মাথাভাঙ্গা। এছাড়াও বেশ কিছু বিল রয়েছে যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ, যেমন:
কালুয়া বিল
পঙ্খীর বিল
বোয়ালিয়া বিল
ফকিরধরা বিল
প্রশাসনিক ইতিহাস:
দৌলতপুর থানা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৫৪ সালে। পরবর্তীতে, ১৯৮৩ সালে এটি পূর্ণাঙ্গ উপজেলায় রূপান্তরিত হয়।
প্রাচীন নিদর্শন ও প্রত্নসম্পদ:
এই উপজেলায় রয়েছে ঐতিহাসিক ও স্থাপত্যিক গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্থাপনা, যেমন:
হোসেনাবাদ রাজবাড়ী
মহিষাকুন্ডি নীলকুঠি
রেফায়েতপুর জমিদার বাড়ি
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস:
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দৌলতপুর উপজেলায় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
প্রধান যুদ্ধক্ষেত্রসমূহ:
ব্যাংগাড়ি মাঠ
বালিয়াডাঙ্গা মাঠ
মহিষকুন্ডি
শ্যামপুর
শেরপুর
চিলমারী
ফরাজী বাড়ি
গোয়াল গ্রাম
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, ১৩ নভেম্বর পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের এক সংঘর্ষে বহু সংখ্যক পাকসেনা নিহত হয়।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্নসমূহ:
গণকবর: ৬টি
স্মৃতিসৌধ: ১টি
মুক্তিযোদ্ধা শহীদদের স্মরণে নির্মিত সড়ক: ১০টি
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান
দৌলতপুর উপজেলায় মুসলিম, হিন্দু এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয় রয়েছে। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে:
শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষার হার
দৌলতপুর উপজেলায় শিক্ষার সার্বিক গড় হার ৩৫.৬%। এর মধ্যে পুরুষদের শিক্ষার হার ৩৮.৭% এবং নারীদের ৩২.৩%।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা:
উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান:
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী
উপজেলায় স্থানীয় পত্রিকা ও সাহিত্যচর্চার পরিবেশ বিদ্যমান।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস
কৃষি ও কৃষিজমি
প্রধান কৃষি ফসল: ধান, গম, পাট, তামাক, তুলা, আলু, টমেটো, ভুট্টা, পান
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসল: কাউন, তিসি
ফল-ফলাদি
শিল্প ও কুটিরশিল্প
এই উপজেলায় মোট হাটবাজারের সংখ্যা ৬৭টি এবং বার্ষিক ও মৌসুমি মেলার সংখ্যা ৩টি। উল্লেখযোগ্য হাটগুলোর মধ্যে রয়েছে—আল্লারদরগা হাট, খলিশাকুন্ডি হাট, বাড়াগারদিয়া হাট, প্রাগপুর হাট ও মহিষাকুন্ডি হাট।
বিখ্যাত মেলার মধ্যে রয়েছে—মনসাতলা মহরম মেলা ও মথুরাপুর দরগাবাড়ি মেলা, যা ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় ও লোকজ সংস্কৃতির ধারক ও বাহক।
প্রধান রপ্তানিযোগ্য পণ্য
উপজেলার অর্থনীতিতে কৃষিপণ্য রপ্তানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এখানকার প্রধান রপ্তানিযোগ্য দ্রব্যসমূহ হলো—
এছাড়া মৌসুমি শাকসবজি ও কিছু হস্তশিল্পজাত সামগ্রীও বাণিজ্যিকভাবে স্থানীয় ও জাতীয় বাজারে সরবরাহ করা হয়।
বিদ্যুৎ সুবিধা
উপজেলার সকল ইউনিয়ন পল্লীবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাভুক্ত হলেও বাস্তব প্রয়োগে মোট ২৩.৮৬% পরিবারের মধ্যে বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। এটি এখনও কাঙ্ক্ষিত মাত্রার নিচে অবস্থান করছে, যার ফলে অনেক পরিবার বিকল্প আলো ও শক্তির উৎসের ওপর নির্ভরশীল।
পানীয়জলের উৎস
নিম্নোক্ত উৎসগুলো থেকে উপজেলাবাসী নিরাপদ পানীয়জলের চাহিদা মেটান:
স্যানিটেশন ব্যবস্থা
উপজেলার স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন ব্যবহারের চিত্র নিম্নরূপ:
সার্বিকভাবে স্যানিটেশন ব্যবস্থা এখনও উন্নয়নের অপেক্ষায় রয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রসমূহ
উপজেলায় স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ও প্রকারভেদ নিম্নরূপ:
এ সকল প্রতিষ্ঠান প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, মাতৃ ও শিশুর যত্ন এবং রোগ নির্ণয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
