দৌলতপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

দৌলতপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু 

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: আগস্ট ২২, ২০২৪

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ কলেজ পড়ুয়া ছেলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় কারণে বাবাকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। গত ৯ আগস্ট রাত ১০টার দিকে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় দুর্বৃত্তদের হামলায় গুরুতর আহত হন আন্দোলকারী শিক্ষার্থী তামিমের বাবা মইনুল ইসলাম (৪২)। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বুধবার (২১ আগস্ট) সকালে মারা গেছেন।

এ ঘটনায় দৌলতপুর থানার মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নিহতের ছোট ভাই ও মামলার বাদী মোজ্জামেল হক। নিহত মইনুল ইসলাম কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বালিরদিয়ার গ্রামের গাজী পরমানিকের ছেলে। সে ইজিবাইক চালক ছিলেন। একইসাথে গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসাও করতেন। কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র। তামিম তার ছেলে তামিম কোটা সংস্কার আন্দোলনে জড়িত থাকায় বাবার ওপর হামলা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন নিহতের পরিবার ও স্বজনরা।

জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা। এ ঘটনায় গত ১৩ আগস্ট ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে দৌলতপুর থানায় মামলা করা হয়। আরও ৫-৭ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দৌলতপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুবুর রহমান। এজাহারে উল্লেখিত আসামিরা হলেন-আলম মোল্লা (৪৮), ইউসুফ মোল্লা (৩৮), রাজিব মোল্লা (৩০), শিপুল মোল্লা (৩০), সবুজ মোল্লা (২৫), বক্কর মোল্লা (৫৬), টিপু মোল্লা (৪০), চঞ্চল মোল্লা (৩২), জাদু মোল্লা (৪২),  টুকন মোল্লা (৩৮), সোহেল মোল্লা (৪০), জানবার মোল্লা, শামীম মোল্লা (২৫), শাকিল মন্ডল (৩২) ও কলম মোল্লা (৪০)। নিহতের ভাই ও মামলার বাদী মোজাম্মেল হক বলেন, আমার ভাইয়ের ছেলে তামিম কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে পড়ে। সে কুষ্টিয়ায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে  অংশগ্রহণ করার কারণে তার বাবাকে কুপিয়ে হত্যার করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন।

তারা স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত। গত ৯ আগস্ট রাত ১০টার দিকে বালিরদিয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে মোল্লা বংশের লোকজন আমার বড় ভাইয়ের উপর হামলা করে গুরুতর আহত করে। পরে আজ ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। সাবেক মেম্বার আলম মোল্লার নেতৃত্বে ইউসুফ, রাজিব, শিপুল, বক্কর, সবুজ, টিপু, চঞ্চল, জাদু, টোকন সহ তাদের লোকজন আমার ভাইকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হামলা করে হত্যা করেছে।

আমি বাদী হয়ে এ ঘটনায় মামলা করেছি। আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। মামলার বাদী মোজাম্মেল হক এজাহারে উল্লেখ করেছেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে মইনুল ইসলামের ছেলে তামিম অংশ নেওয়ায় কারণে আসামিরা হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করে। গত ৯ আগস্ট রাত ১০টার দিকে আমার ভাই মইনুল ইসলাম মোটরসাইকেল চালিয়ে গ্রামের বাজার থেকে নিজ বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়।

পথিমধ্যে তার উপর হামলা করে গুরুতর আহত করে আসামিরা। ধারালো রামদা, ধারালো চাপাতি, লোহার রড, লাঠি বাটাম সহ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তার হামলা চালিয়ে আমার ভাইয়ের ডান হাত কনুইয়ের নিচ থেকে কেটে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। এছাড়াও বাম হাত সহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে ককটেল বিস্ফোরণ এবং ফাঁকা গুলি করে আসামিরা পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং চিকিৎসাধীন ছিলেন। সর্বশেষ তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নেয়া হয়।

সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। এবিষয়ে নিহতের ছেলে তামিম জানান, তিনি প্রথম থেকেই কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নিচ্ছিলেন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালানোর পর তামিম কুষ্টিয়া শহর থেকে গ্রামের বাড়িতে যান। বাড়িতে গিয়েও দৌলতপুরে শান্তি মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। এসব দেখে তাদের গ্রামের আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী তাদের বাড়িতে গিয়ে তার বাবা মইনুল হক ও তার পরিবারের সদস্যদেরকে হত্যার হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিল।

তিনি আরও জানান, ৯ আগস্ট রাতে আওয়ামী লীগের ওইসব হুমকিদাতা নেতাকর্মীরা ও তাদের লোকজন তামিমের বাবা মইনুল ইসলামের উপর হামলা করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। গুরুতর অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ওইদিনই উপজেলা সদর হাসপাতাল, সেখান থেকে রাজশাহী হাসপাতাল, পরবর্তীতে নিয়ে আসা হয় ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে। সেখানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া তার ডান হাতটি কেটে ফেলা হয়। অবস্থার অবনতি দেখে ১৫ আগস্ট তাকে ঢাকা মেডিকেলে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার সকালে মারা গেছেন মইনুল ইসলাম।

এবিষয়ে কথা বলার জন্য আসামিদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাদের পাওয়া যায়নি। বিষয়টি নিশ্চিত করে দৌলতপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুবুর রহমান বলেন, এবিষয়ে একটি মামলা হয়েছে। এখনো পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাদের গ্রেফতার করার জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।