দৌলতপুরে অবৈধ ইটভাটা মালিক-শ্রমিকদের মানববন্ধন - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

দৌলতপুরে অবৈধ ইটভাটা মালিক-শ্রমিকদের মানববন্ধন

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: ডিসেম্বর ৯, ২০২৫

দৌলতপুর প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে দুর্নীতিবাজ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আব্দুল হাই সিদ্দিকীর বদলি ঠেকাতে অবৈধ ইটভাটা মালিক-শ্রমিকদের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মানববন্ধনে ইটভাটা মালিকরা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নানা ধরণের হুমকি ও বিষোদগার করে বক্তব্য দিয়েছেন। এতে দৌলতপুরের সর্বস্তরের সাংবাদিকদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল সোমবার (৮ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলা পরিষদ চত্বরের সামনে দৌলতপুর-থানা মোড় সড়কে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

সদ্য বদলি হওয়া দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আব্দুল হাই সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও ফাইল আটকিয়ে অর্থবাণিজ্যের অভিযোগ উঠলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ হয়। প্রকাশিত সংবাদের সূত্র ধরে মানববন্ধনে অংশ নেয়া অবৈধ ইটভাটা মালিকরা দৌলতপুরের সাংবাদিকদের দেখে নেয়ার হুমকিসহ নানা ধরণের হুমকি ও বিষোদগার করে বক্তব্য রাখেন। এতে সাংবাদিকদের মাঝে চরম উদ্বেগ উৎকন্ঠা ও নিরাপত্তাহীনতার সৃষ্টি হয়েছে।

দৌলতপুর ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মো. ফজলুর রহমানের সভাপতিত্বে দৌলতপুর উপজেলাবাসীর ব্যানারে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, ভুয়া চক্ষু চিকিৎসক সাইফুল ইসলাম, দৌলতপুর উপজেলা বিএনপি’র সাবেক যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আকবর আলী ও ইটভাটা মালিক নুরুজ্জামান হাবলু মোল্লা। ঘন্টাব্যাপী চলা মানববন্ধনে দৌলতপুরের অবৈধ সব ইটভাটার মালিক ও শ্রমিকরা অংশ নেয়। মানববন্ধন শেষে তারা দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল হাই সিদ্দিকীর বদলির আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে। উল্লেখ্য, নড়াইল জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে বদলির আদেশ হওয়া দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল হাই সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে দৌলতপুরে কর্মকালীন সময়ে নানা ধরণের অনিয়ন ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠে।

উপজেলা পরিষদ অভ্যন্তরে বিভিন্ন আবাসিক, অনাবাসিক ভবন ও দপ্তর সংস্কারের নামে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের এডিবি’র বিশেষ বরাদ্দের ১ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠে। একই অর্থ বছরে বিভিন্ন ইউনিয়নে সড়ক সংস্কার ও উন্নয়নের প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ, হাট-বাজারের ইজারার শতকরা ১ভাগের টাকা ইউপি সচিবদের মাধ্যমে উত্তোলন ও আত্মসাৎ এবং ইউপি সচিবদের কক্সবাজার ট্যুরে পাঠানো, সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির অর্থের ভাগ নেওয়ার অভিযোগসহ নানা ধরণের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। এছাড়াও উপজেলা পরিষদের সরকারী ৩টি গাড়ীও একাই ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। একটি গাড়ী তার পরিবারকে দিয়ে রেখেছিলেন নিয়মিত গাংনী উপজেলায় নিজ বাড়িতে যাতায়াত ও উপঢোকন পাওয়া বাজার সদায় সরবরাহের কাজে।

গত ২ মে থেকে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত প্রশিক্ষণে থাকা এসিল্যান্ড না থাকাকালীন সময়ে তার গাড়ীসহ দু’টি গাড়ী তিনি নিজে ব্যবহার করেছেন। তবে গাড়ী ব্যবহার না হলেও গাড়ীর মেইনটেনেন্স ও ফুয়েল খরচও নিজে উত্তোলন করারও অভিযোগ রয়েছে ইউএনও আব্দুল হাই সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে। এছাড়াও এসিল্যান্ড না থাকাকালীন সময়ে ৫ মাসে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল হাই সিদ্দিকী অর্থের বিনিময়ে প্রায় ১৫ হাজার জমির নামজারি বা খারিজ করেছেন এমন অভিযোগ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের। নিয়ম নীতি না মেনে নাম খারিজ করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযাগ উঠে ইউএন’র বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। তবে এসব অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন।

উল্লেখ্য, এর আগে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের আস্থাভাজন ইউএনও ছিলেন মো. আব্দুল হাই সিদ্দিকী। এছাড়াও মেহেরপুরের সাবেক এমপি ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের আস্থাভাজন ও নিকটজন বলে পরিচিতি রয়েছে। হাসিনা সরকারের পতন হলে তিনি ২০২৪ সালের ১০ নভেম্বর দৌলতপুর উপজেলায় যোগদান করেন মো. আব্দুল হাই সিদ্দিকী। তিনি বিসিএস’র ৩৫ ব্যাচের কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। গত সপ্তাহে আব্দুল হাই সিদ্দিকীকে নড়াইল জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করা হলেও তিনি কর্মস্থলে যেতে গড়ি মসি ও অবৈধ ইটভাটা মালিক-শ্রমিকদের দিয়ে মানবন্ধন ও তাদের দিয়ে সাংবাদিকদের শায়েস্তা করার মিশনে নামেন। এ ঘটনা নিয়ে দৌলতপুরের সচেতন মহলে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।