তীব্র গরমে চাহিদা বেড়েছে শরবতের-স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে সাধারণ মানুষ - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

তীব্র গরমে চাহিদা বেড়েছে শরবতের-স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে সাধারণ মানুষ

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: এপ্রিল ২৬, ২০২৪

কুমারখালী প্রতিনিধি ॥ গত একসপ্তাহ যাবৎ দেশের অন্যান্য জেলার মতো কুষ্টিয়াতে চলছে তীব্র তাপাদাহ। হিট এলার্ট জারি করা হয়েছে আবহাওয়া অফিসের তরফ থেকে। প্রকৃতির রুদ্রমূর্তির হলকা বাণে ছারখার চারদিক। এতে কদর বেড়েছে খোলা রাস্তা কিংবা মোড়ে বিক্রিত  ইনস্ট্যান্ট তৈরি শরবতের। কুষ্টিয়া ও কুমারখালী শহরে যত্রতত্র বরফ ও লবন মিশ্রিত লেবু বা ইনস্ট্যান্ট পাউডার মিশ্রিত শরবত বিক্রি হচ্ছে দেদারছে। যার বেশীরভাগ ক্রেতা রিকশাচালক, দিনমজুর, দোকানী ও সাধারণ পথচারী। শুধু খেটে খাওয়া দিনমজুর নয় অনেক সচেতন মানুষকেও দেখা গেছে অস্বাস্থ্যকর এসব শরবত পান করতে। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকলেও কর্তৃপক্ষের নেই কোন তদারকি। একটু স্বস্তির আশায় পান করা অস্বাস্থ্যকর উপাদান ও পরিবেশে তৈরি এই শরবতে বাড়ছে ডায়রিয়াসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি। এ দিকে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি নীরব প্রশাসনও। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সরজমিনে দেখা গেছে,কুষ্টিয়া শহরের চার রাস্তামোড়, পাঁচরাস্তা মোড়, মজমপুর গেইট, টার্মিনাল, স্টেশন, বড় বাজার, কুমারখালী বাসস্ট্যান্ড, গড়াই সেতু, হল বাজারসহ প্রধান সড়ক ও উপজেলা পর্যন্ত প্রায় ৩০থেকে ৩৫টি স্থানের বাইরে ও অলিগলিতে সেই সাথে পাড়া-মহল্লায় অসংখ্য শরবতের দোকান যার অধিকাংশই ভ্রাম্যমাণ। ছোট ভ্যানের ওপর একটি ফিল্টার, কিছুলেবু, কয়েকটি গ্লাস,পানি, সামান্য বরফ এবং বিভিন্ন কোম্পানির ইনস্ট্যান্ট পাউডারের ছোট প্যাকেট দিয়েই  সাজানো হয়েছে ভ্রাম্যমাণ এসব দোকান। শরবত তৈরিতে মানা হচ্ছে না কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধি। বিক্রেতারা ফিল্টারের ওপরে ঢাকনা খুলে খালি হাতেই নাড়া দিচ্ছেন বরফ-পানি ও লেবু দিয়ে তৈরি শরবত  আবার সেই হাতেই টাকা নিচ্ছেন কিংবা অন্যান্য কাজও করছেন। যে গ্লাসে শরবত পরিবেশন করা হচ্ছে, সেটি একজন পান করার পর ছোট বালতিতে থাকা একই পানিতে বারবার ধুয়েই  পান করার জন্য দেওয়া হচ্ছে অন্যজনকে । তাছাড়া  অস্বাস্থ্যকর উপায়ে  খালি রিকশা বা ভ্যানে ছালার চট বিছিয়ে আনা শরবত তৈরীর বরফ কতটা স্বাস্থ্যসম্মত সে প্রশ্নের উত্তরও জানা নেই কারোর।  এছাড়া যত্রতত্র থেকেই সংগ্রহ করা হচ্ছে শরবত তৈরিতে ব্যবহৃত পানি । কোথাও কোথাও বিক্রি হচ্ছে বেলের শরবত। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে খোলা অবস্থায়  ভেঙে রাখা হয়েছে বেলগুলি।ধুলোবালি মাথা এসব বেলই দেওয়া হচ্ছে  শরবতে। কয়েকজন বিক্রেতার সাথে কথা বললে তারা এবিষয়ে কিছুই বুঝেনা বলেই জানায়। ভ্যান চালক ফরিদ উদ্দীন জানায়, গরমে আর পারছিনা, তাই খাচ্ছি। মটরসাইকেল থামিয়ে এই শরবত পানকারী ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, গরমে জীবন রাখায় কষ্ট, অত ভেবে দেখার সময় কই? সহজে পেলাম, তাই খেয়ে নিলাম। মাত্র ১০ টাকায় এই শরবত খেয়ে খুব ভালো লাগছে। যদিও স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা স্বীকার করেন তিনি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাস্তার পাশের ভ্রাম্যমাণ শরবতের দোকানে যে বরফ ব্যবহার করা হচ্ছে তার অধিকাংশই মানুষের খাবার অনুপোযগী। বিভিন্ন বরফকল থেকে মাছ সংরক্ষণ করার জন্য তৈরি করা বরফের পাটালি পাইকারি দামে কিনে এনে শরবতে মেশান বিক্রেতারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন শরবত বিক্রেতা জানান, বরফকলে সাধারণত দুই ধরনের বরফ তৈরি করা হয়। একটি মাছ সংরক্ষণ ও অপরটি খাবার জন্য। এর মধ্যে মাছ সংরক্ষণের জন্য তৈরিকৃত বরফের মূল্য তুলনামূলক কম। এ কারণে বেশি লাভের আশায় মাছ সংরক্ষণের জন্য তৈরি বড় বরফই কেনেন তারা। বরফ কলের এক কর্মচারী জানান, মানুষ এসে বরফ কিনে নিয়ে যায়। কে কোন কারনে কিনছে তা জানা যায় না। তবে  শহরের মধ্যে লেবু পানি বিক্রি করে এমন অনেকেই বরফ কিনছে বলে তার ধারণা। এব্যাপারে কুমারখালী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিরুল আরাফাত বলেন, বিষয়টি স্যানিটারী ইন্সপেক্টরের। তারা সহায়তা চাইলে অভিযান করা হবে। কুষ্টিয়া জেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক আরাফাত আলীর ভাষ্য বিষয়টি আমাদেরও নজরে এসেছে। আমরা অচিরেই ব্যবস্থা নিবো। এসব শরবত খেয়ে কেউ অসুস্থ্য হলে অভিযান করায় দেরি করা হবেনা বলে ও জানান তিনি। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তাপস কুমার সরকার বলেন, বর্তমান এই তাপদাহের সময়ে স্বাভাবিক ও নিরাপদ খাবার পানির বিকল্প নেই। গরমে অতিরিক্ত ঠান্ডা, বরফ পানি কিংবা অনিরাপদ পানি পান করলে স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে য়ায়। বাইরের কৃত্রিম ফ্লেভার যুক্ত শরবত থেকে দূরে থাকার পরামর্শ ও দেন এই চিকিৎসক।