রঞ্জুউর রহমান ॥ ঠিকাদারী ব্যবস্থাপনায় কৃষকদের জন্য তামাক চাষ নিরাপদ বাজির সাথে তুলনা করা যেতে পারে। এই ব্যবস্থাপনার অধীনে কৃষকরা তামাক পাতা ক্রয়কারী সংস্থাগুলির সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করে এবং কৃষকদেরকে তাদের তামাক চাষের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করে থাকে। তামাক পাতা সরবরাহের জন্য খরচ, ঋতু শেষে কৃষকদের পেমেন্ট থেকে কাটা হয়। তামাক কোম্পানিগুলি এই সরবরাহকৃত খরচ এবং ফলস্বরূপ ফসলের গ্রেড এবং কৃষক যে মূল্য পাবে তা উভয়ই নির্ধারণ করে। তারা চাইলে আন্ডার গ্রেড ও কম দামের ফসল করতে পারে। সরবরাহ জন্য উচ্চ খরচ এবং ফসলের জন্য কম অর্থ প্রদানের ফলে কৃষকরা মৌসুমের শেষে খুব কম লাভ বা ঋণের মধ্যে পড়ে যেতে পারে।
আর এভাবে আমাদের দেশের চাষীদের বৃটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি প্রতি একর জমির জন্য চাষীকে তামাক চাষে লোন প্রদান করে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা। তামাকের শুকানোর ঘর নির্মাণের জন্য প্রদান করে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা এবং দুই বস্তা এসোপি,একটা সেফটি বক্স এবং কিছু কীটনাশক দেয় ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো ও অন্যান্য তামাক কোম্পানিগুলো। কিন্তু তামাক চাষীদের দাবি প্রতি একক জমিতে তামাক চাষ করতে যে পরিমাণ অর্থ ও সারের প্রয়োজন হয় তার নাম মাত্র এক অংশও প্রদান করে না বৃটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি। মূলত ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি দেশে দরিদ্র কৃষকদের লোনের টাকায় তামাক চাষ শুরু করিয়ে চাষীকে কোম্পানির কাছে ঋণগ্রস্ত করে ফেলে। তরপর চাষী তার উৎপাদিত ফসল ঘরে আনা ও লোন পরিশোধ করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। দরিদ্র চাষী ক্ষতিকর তামাক চাষে অতিরিক্ত শ্রম ও অধিক অর্থ ব্যয় করতে বাধ্য হয়ে পড়ে।
আবার তামাক কোম্পানির ফিল্ড অফিসার কোম্পানির দেওয়ার লক্ষ্য মাত্রা তামাক সংগ্রহ করার জন্য তামাক চারা উৎপাদন ও তামাক চাষীদের পরামর্শ দেওয়ার নামে গরিব অসহায় চাষীদের উপরে চালায় মানসিক নির্যাতন। এই চক্রের মধ্যে কৃষকদের আটকানোর ফলে দারিদ্র্যের স্থায়ী অবস্থার সৃষ্টি করে,শিশুশ্রম এবং কৃষকদের জামানত হিসাবে ব্যবহার করে। উদাহরণস্বরূপ, মালাউইতে, যেখানে তামাক দেশের শীর্ষস্থানীয় কৃষি রপ্তানি পণ্য। সেখানে অধিকাংশ তামাক চাষী দারিদ্র্যের মধ্যে বাসবাস করে। ২০২০ সালে একটি গার্ডিয়ান তদন্তে পাওয়া গেছে যেব্রিটিশ আমেরিকান তামাক এবং ইম্পেরিয়াল ব্র্যান্ডগুলি শিশু শ্রম থেকে লাভবান হয়েছিল।স্থানীয় চাষীরা জানান,তামাক চাষের জন্য যে পরিমাণ অর্থ,সারের প্রয়োজন হয়, তার কোন কিছুই দেয় না তামাক কোম্পানিগুলো।
আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে আমাদের ফসলের ক্ষতি হলে আমাদের পথে বসা ছাড়া অন্য কোন উপায় থাকে না। মূলত তামাক চাষ হলো এক ধরনের বাজি খেলার মত।কুষ্টিয়ার ডাক্তার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডাক্তার রতন পাল বলেন, তামাক মূলত একটি মাদক জাতীয় জিনিস। শিশু হোক কিংবা বৃদ্ধ, সবার জন্যই তামাক চাষ এবং সেবন শ্বাসকষ্ট, ডায়াবেটিসসহ নানাবিধি রোগের সৃষ্টি হয়। তামাক সেবনে অন্যান্য মাদক দ্রব্য প্রতি মানুষের আকর্ষণ সৃষ্টি করে। তামাক পুড়ানোর সময় যে ধোঁয়া সৃষ্টি হয় তা ক্যান্সার রোগ সৃষ্টির অন্যতম কারণ। বিশেষ করে শিশুদের জন্য তামাক চাষ এবং তামাক উৎপাদনের কাজ বেশি ক্ষতিকর।কুষ্টিয়া আঞ্চলিক শ্রম দপ্তরে উপ পরিচালক মো. জহিরুল হোসেন বলেন, আমরা শ্রমিকদের শ্রম অধিকার নিয়ে কাজ করি।তামাক শিল্পের শ্রমিকদের তাদের শ্রম অধিকার ও স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে আমরা প্রশিক্ষণ দেই। কিন্তু তামাকের কাজে যদি শিশুশ্রম ব্যবহার হয় এটা ছাড় দেওয়ার কোন সুযোগ নেই।তামাক চাষ সবার জন্য ক্ষতিকর।
তামাক চাষে কিংবা যেকোনো জায়গায় শ্রম আইনের ব্যক্তই ঘটলে আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।কুষ্টিয়া সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুপালী খাতুন বলেন, তামাক মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।তামাক চাষ নিরুৎসাহি করতে আমাদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা সবসময় এই বিষয়ে সচেতন যাতে তামাক চাষ কমানো যায়। কুষ্টিয়া সদর উপজেলা তামাক চাষ না হলেও ভেড়ামারা, মিরপুর, দৌলতপুরে অনেক পরিমাণ তামাক চাষ হয়। সেসব উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ প্রতিনিয়ত উঠান বৈঠক এবং প্রণোদনার মাধ্যমে তামাক চাষে নিরুৎসাহি করে যাচ্ছে। কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর এর উপপরিচালক সুফি মো. রফিকুজ্জামান বলেন, তামাক চাষের মূলত স্বাস্থ্যঝুঁকি বেশী। তাছাড়া অতিরিক্ত রাসায়নিক বা সালফারসার ব্যবহারে জমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হয়।আমরা তামাক চাষীদের নিরুৎসাহী করার জন্য বিকল্প ফসলের সন্ধান দিয়েছে যেমন ভুট্টা,আলু,ফল বাগানের মাধ্যমে চাষীদের তামাক চাষ থাকে বের করার চেষ্টা করছি এবং সরকারের ভর্তুকি সার যেন তামাক চাষে ব্যবহার না করা হয়। এই বিষয়ে আমার প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি।
