ইসলামী বিশ্ববিদ্যলয়ে ছাত্রীকে রাতভর র্যাগিং করার অভিযোগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যলয় (ইবি) শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরি অন্তরা ও তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে এক ছাত্রীকে রাতভর র্যাগিং করার অভিযোগ উঠেছে।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যলয়ে ছাত্রীকে রাতভর র্যাগিং করার অভিযোগ
অভিযুক্ত অন্তরা পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অপর অভিযুক্ত শিক্ষার্থী তাবাসসুম ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের এবং ভুক্তভোগী একই বিভাগের নবীন শিক্ষার্থী।
রবিবার রাতে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে রাত ১১টা থেকে প্রায় চারটা পর্যন্ত ভুক্তভোগীকে নির্যাতন করেছে বলে জানা গেছে। এ সময় মারধরের পাশাপাশি অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ ও ওই ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে ভাইরাল করার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর। এ ঘটনায় ভয় পেয়ে সোমবার সকালে নিজ বাড়িতে ফিরে গিয়েছেন ভুক্তভোগী।
ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যলয়ের প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হয়। এর আগে ভুক্তভোগী এক সিনিয়রের কক্ষে (৩০৬ নম্বর) গেস্ট হিসেবে থাকতেন। বিভাগের নবীন বরণে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের তাবাসসুম নবীন শিক্ষার্থীদের কারা দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে থাকেন জানতে চান। এ সময় ভুক্তভোগী হাত তুললে তাকে হলে উঠার আগে না জানানোয় চটে যান এবং হলের কক্ষে (প্রজাপতি-২) দেখা করতে বলেন।

ভুক্তভোগী অসুস্থ থাকার কারণে যেতে অপারগ হলে দেখা না করার কারণে শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) ক্লাসে ফের বকাঝকা করেন তাবাসসুম। পরে সেদিন রাতে দেখা করলে ছাত্রলীগ নেত্রী অন্তরার কাছে নিয়ে যায়। রাত ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত নানাভাবে ভুক্তভোগীকে নির্যাতন করতে থাকলে ভুক্তভোগী তাদের পায়ে পর্যন্ত ধরেন বলে জানা গেছে।
পরদিন রবিবার ভুক্তভোগীর বিরুদ্ধে ‘বেয়াদবি’ ও ‘অবৈধভাবে হলে থাকা’র অভিযোগ তুলে হল থেকে বের করে দিলে প্রভোস্টসহ অন্যান্যরা এসে তাকে হলে তুলে অন্তরার দায়িত্বে দিয়ে যান। একই সঙ্গে সিনিয়রদের সঙ্গে ‘বেয়াদবি’ করবেন না বলেও মুচলেকা দেন ভুক্তভোগী।
পরে রাত ১১টার দিকে তাবাসসুম ফের ভুক্তভোগীকে গণরুমে ডেকে নিয়ে যান। সেখানে অন্তরাসহ অন্যান্য ৫/৬ জন ছাত্রী ছিলেন। সকলে মিলে রাত প্রায় ৪টা পর্যন্ত ভুক্তভোগীকে নির্যাতন করেন বলে জানা গেছে। এ সময় মারধর অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ, বিবস্ত্র করা সহ নানাভাবে নির্যাতন করেছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর।
ভুক্তভোগী বলেন, গণরুমে এনে সবাই মিলে আমাকে মেরেছে। রাত ১১টা থেকে রাত প্রায় ৪টা পর্যন্ত আমাকে থাপড়াইছে, গায়ে-মাথায় মেরেছে, পায়ে পিন ফুটিয়েছে, অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেছে, জামা খুলতে বলেছে।

আপুরা প্রভোস্টের স্যারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিষয় লিখে দিয়ে বলেছে, হাসবি আর এগুলা বলবি। সব তারা ভিডিও করে রেখেছে। আপুরা মারার সময় বলতেছিল ‘মুখে মারিস না, গায়ে মার যেন কাউকে দেখাতে না পারে।’
তিনি আরো বলেন, অন্তরা আপু, তাবাসসুম আপু সহ ৫/৬ ছিল। তারা নানাভাবে আমাকে ভয়ভীতি দেখিয়েছে। আপুরা হুমকি দিয়ে বলছিল, ‘এসব বাইরে বললে একেবারে মেরে ফেলবো। তোকে ন্যাংটা করে এখান থেকে বের করে দেব। এই কথা বাইরে গেলে ভিডিও ভাইরাল করে দেব।
তুই হলের প্রভোস্ট স্যারকে বলবি, সব আমার দোষ, এই হলে থাকবো না। এসব বলে হল থেকে একেবারে চলে যাবি। এই কথা ১৪ তারিখ বলবি।’ পরে ভয় পেয়ে আজ সোমবার সকালে হল থেকে বাড়ি চলে আসছি।
অভিযুক্ত নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা বলেন, সে (নবীন ছাত্রী) সিনিয়রদের সঙ্গে বেয়াদবি করেছিল। ও আমাকে চেনেও না। নবীন ওই ছাত্রী ওর এক ভাইকে দিয়ে ওর বিভাগের সিনিয়রকে (তাবাসসুম) হুমকি ধামকি দিয়েছিল। রবিবার প্রক্টর স্যার, প্রভোস্ট স্যার থাকাকালীন একটা মীমাংসা হয়েছিল। রাতের মধ্যে আর কোনো কিছুই হয়নি। এ ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, রবিবার রাতের ঘটনা যতটুকু জেনেছি নবীন ওই ছাত্রী অবৈধভাবে এক সিটে থাকতেছে। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তাকে হল থেকে বের করে দেয়। বিষয়টি জানার পর ওই ছাত্রীর পারিবারিক অবস্থা শুনে আবার হলে রাখতে প্রভোস্টের কাছে অনুরোধ করি। গত রাতের ঘটনা আমি জানি না। তবে অভিযোগের সত্যতা পেলে প্রশাসনের কাছে বিচার দাবির পাশাপাশি সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেব।
হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, রবিবার ঝামেলা হওয়ার পর আমরা উভয় পক্ষকে ডেকেছিলাম। আমি যতদুর জেনেছি, ওর বড় বোন ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ে পড়ে। নবীন ছাত্রীটি তার বোনের পরিচিত একজনের রুমে থাকছে। মেয়েটা (ভুক্তভোগী) বিষয়টি স্বীকার করেছে। যেহেতু ও আবাসিক না তাই বলেছিলাম কয়েকদিন হলের বাইরে থাকতে। পরে পরিবারের অবস্থা শুনে হলেই থাকতে বলেছিলাম।
র্যাগিংয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর আমাদের হলে এমন ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। এবারই প্রথম শুনছি। এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।
প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদাত হোসেন আজাদ বলেন, রবিবার হল প্রভোস্ট আমাকে বিষয়টি জানানোর পর দুইজন সহকারী প্রক্টরকে পাঠিয়েছিলাম। তারা আর প্রভোস্ট মিলে বিষয়টি সমাধান করে এসেছিল। আজকের বিষয়টা ছাত্র উপদেষ্টা শেষ বেলায় আমাকে জানিয়েছিল। এটা তো হলের ঘটনা। হল বডির কাছে সমাধান না হলে ছাত্র উপদেষ্টার কাছে লিখিত অভিযোগ দিক। আমরা বসে পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।
আরও দেখুনঃ
