কুষ্টিয়ায় মোহিনী মিলের সম্পদ চুরির চেষ্টা
কুষ্টিয়া শহরের মোহিনী মিল বিদ্যাপিঠ সড়কে রেল স্লিপার দিয়ে তৈরি করা বৈদ্যুতিক পিলার চুরি চেষ্টার সত্যতা মিলেছে। স্থানীয় মুসা খান নামের এক ব্যক্তি সরকারি জমি দখল করে দোকান নির্মাণের অন্তরালে এই বৈদ্যুতিক পিলার চুরির চেষ্টা করেন। চুরির চেষ্টাকালে পুলিশ, সাংবাদিক ও স্থানীয় জনতা উপস্থিত হলে আনুমানিক ৪০ ফিট লম্বা পিলারটি ফেলে রেখে পালিয়ে যান মুসা খান ও তার সহযোগীরা।

কুষ্টিয়ায় মোহিনী মিলের সম্পদ চুরির চেষ্টা
সরেজমিনে ঘটনাস্থলে হাজির হলে দেখা যায়, মিলপাড়া মুসা খানের দখল করা সরকারি জমিতে নির্মাণরত দোকানের মধ্যে বৈদ্যুতিক পিলারটি মেশিন দিয়ে কাটা হচ্ছে। সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে কাজ বন্ধ করে দেন তারা। তারই মধ্যে পিলারটি কেটে মাটিতে রেখে দিয়েছেন তারা।
উপস্থিত প্রতিবেদক দলের বেশ কয়েকজন সাংবাদিক উপস্থিত মুসা খানকে বৈদ্যুতিক পিলার কাটার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি মোহিনী মিলের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের থেকে লিখিত অনুমতি নিয়ে কেটেছি। তারা আমাকে কাটতে বলেছে। আমি তাদের ডেকে আনছি। এই বলে মোটর সাইকেল চালিয়ে মিল অফিসের দিকে চলে যান তিনি। কিছুক্ষণ পর মিলের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব থাকা হেদায়েত ও জীবন নামের ২ জন নিরাপত্তা রক্ষীকে মোটরসাইকেলের পিছনে বসিয়ে নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন তারা। এরপর নিরাপত্তারক্ষীদের রেখে কৌশলে পালিয়ে যান মুসা খান ও তার সহযোগীরা।
সেসময় উপস্থিত নিরাপত্তারক্ষী জীবন ও হেদায়েত জানান, মোহিনী মিলের সম্পদ এই বৈদ্যুতিক পিলার কাটার কোন অনুমতি নেই। মুসা খান ফোন করে মিলের ম্যানেজারকে বলেছেন একটি বৈদ্যুতিক পিলার অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। তাই ম্যানেজার সাহেব ফোন করে আমাদের ঐ পিলারটি নিয়ে যেতে বলেছেন। কিন্তু ঘটনাস্থলে এসে দেখি তারা পিলারটি কেটে নামিয়েছেন। আমরা ম্যানেজার স্যারকে বিস্তারিত বলেছি। তিনি এই অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। আপনারা ম্যানেজার স্যারের সাথে কথা বলেন।
মুঠোফোনে ম্যানেজার সাইফুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত দায়িত্বে আছি। মাসে ৩/৪ বার সেখানে যায়। মুসা সাহেব বলেছেন অরক্ষিত অবস্থায় বৈদ্যুতিক পিলার পড়ে আছে তাই আমি সেটি হেফাজতে নেওয়ার জন্য নিরাপত্তারক্ষীদের পাঠিয়েছি। কিন্তু শুনলাম অরক্ষিত নয়, মুসা খান পিলারটি কেটে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। আমি আপাতত আগের মতো করে পিলারটি লাগিয়ে দিতে বলেছি। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে আগামী সোম অথবা মঙ্গলবার দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

উপস্থিত স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানান, পৌরসভার জমি দখল করে মুসা খান দীর্ঘদিন ধরে এখানে দোকান করে রেখেছে। দোকানের সংস্কার কাজ করছে তিনি। সেই সাথে ঐ দোকানের ভিতরে পুঁতে রাখা বৈদ্যুতিক পিলার মুসা খান ও তার সহযোগীরা কেটে নিয়ে যাচ্ছিলেন। ঐ বৈদ্যুতিক পিলারটি আরেক বৈদ্যুতিক পিলারের সাপোর্ট পিলার হিসাবে রাখা ছিল। এই পিলারটি কেটে ফেলার ফলে আরেকটি বৈদ্যুতিক পিলার একটু ভারী বাতাস হলে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া এই পিলারটি পড়ে গেলে প্রাণহানি সহ বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে মিলের ম্যানেজার এবং নিরাপত্তারক্ষীদের যোগসাজশে এই মুসা খান ও তার সহযোগীরা মিলের সম্পদ লুটপাটে ব্যস্ত। তাছাড়া এই মুসা খানের বিরুদ্ধে জমি দখল সহ নানান অভিযোগ রয়েছে বলে জানান তারা।
এদিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের এএসআই আসাদ ও শাহীন বলেন, কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ স্যারকে এখান থেকে কেউ ফোন দিয়ে বিষয়টি জানালে স্যারের নির্দেশে আমার এখানে উপস্থিত হয়েছি। বিষয়টি নিয়ে মিলের ম্যানেজার ও মুসা খানের সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে কথা হয়েছে। জনগণের সমস্যার বিষয়টি মাথায় রেখে মুসা খানকে যত দ্রুত সম্ভব পিলারটি ভালো করে ঝালাই করে মজবুত ভাবে লাগিয়ে দিতে বলা হয়েছে। পরবর্তীতে মিলের ম্যানেজার আসলে অভিযোগ প্রাপ্তি সাপেক্ষে অফিসার ইনচার্জ স্যারের নির্দেশনা মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
