বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সন্ত্রাস বিরোধী আইনের মামলায় কুষ্টিয়া মিরপুর উপজেলা ছাত্রলীগের ৫নং সাংগঠনিক সম্পাদক সাগর আহমেদকে গ্রেফতার করেছে ইবি থানা পুলিশ। গ্রেফতারের বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন ইবি থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মেহেদী হাসান। গ্রেফতারকৃত সাগর আহমেদ মিরপুর উপজেলা কুর্শা ইউনিয়নের কুন্টিয়ারচর গ্রামের বোরহান উদ্দিনের ছেলে। ইবি থানা সূত্রে জানা যায়, সাগর আহমেদকে ২০০৯ সালের সন্ত্রাস বিরোধী আইনের ৮, ১০ ও ১২ ধারার একটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। মামলাটি এই বছরের ১২ই আগস্ট ইবি থানায় রুজু করা হয়। মামলা নং-৮।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের কুন্টিয়ারচর গ্রামের মৃত মোবারক হোসেন (ডুবা)’র পুত্র মোঃ লালন আলী ও তার ভাগিনা একই গ্রামের বোরহান উদ্দিন এর পুত্র মিরপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাগর আহম্মেদ এর বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও মারধরে অতিষ্ঠ কুন্টিয়ারচর গ্রামের সাধারণ জনগন। গতকাল শনিবার (১৫ নভেম্বর) ছাত্রলীগ নেতা সাগর আহমেদ ইবি পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার হলেও লালন এখন পর্যন্ত গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীরা। লালন আলী পূর্ব বাংলা কমিউনিষ্ট পার্টির আঞ্চলিক লিডার হিসেবে সন্ত্রাসী গন-বাহিনী পরিচালনা করতেন।
সেসময় সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ী ইউনিয়নের মাঝিলা গ্রামের মৃত জলিল মন্ডলের পুত্র আজিমুদ্দিন হত্যা মামলা সহ পার্শ্ববর্তী গোপালপুর গ্রামের মৃত রহম বকস্ এর পুত্র ইয়াজুদ্দিন হত্যা মামলা ও চরপাড়া গ্রামের মৃত মকসেদ আলীর পুত্র নুর ইসলামের তিন টি ধানের গোলা এবং বাড়ীতে অগ্নিসংযোগ সহ একাধিক মামলার আসামী ছিলেন। লালন পূর্বে ক্রস ফায়ারের আসামি ছিলো বলেও। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তার বাবার মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় ব্যবহার করে তৎকালীন মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সহায়তায় নিজ নামের মামলা ও ক্রসফায়ার কাটিয়ে প্রকাশ্যে এলাকায় ঘোরাফেরা শুরু করেন। দীর্ঘ আওয়ামী সরকারের আমলে সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে আসছিলেন। ৫ ই আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী সরকারের পতনের পর ই হঠাৎ নিজেদের খোস পাল্টে নিজেদের কে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কর্মী সমর্থক দাবী করেন লালন এবং তার ভাগিনা মিরপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাগর আহমেদ নিজেকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক দাবী করে ৫ ই আগষ্ট কুন্টিয়ারচর গ্রামের মুন্তাজ মন্ডল এর পুত্র আব্দুল হান্নান এর দোকান ভাংচুর, মাহাতাব আলীর পুত্র পল্লী চিকিৎসক নওশাদ আলী গাজুর দোকান ভাংচুর লুটপাট, মৃত পচাই মন্ডল এর দুই পুত্র মোঃ মুন্নাত আলীর বসত বাড়ীতে অগ্নিসংযোগ ও মুনতাজ আলী মন্ডলের গোখাদ্য খড়ের পালায় অগ্নিসংযোগ, বাগানে রোপনকৃত গাছ কর্তন এবং মৃত রবজেল আলীর পুত্র মোঃ শহিদুল ইসলাম শহিদ কে বেধড়ক মারপিট সহ নানান তান্ডব চালান মামা- ভাগিনা ও তার দোসরা।
সেসময় এসমস্ত বিষয়ে উপরোক্ত ভুক্তভোগীরা বাদী হয়ে মিরপুর থানায় পৃথক পৃথক অভিযোগ দায়ের করেছিলেন বলে জানিয়েছেন। লালনের পড়শী মুদি দোকানী মৃত মোজাম্মেল এর পুত্র আনার আলীর দায়ের কৃত অভিযোগ সূত্রে জানাযায় লালন ও তার পরিবারের লোকজন আনার আলীর মুদি দোকান থেকে নগদ ও বাকীতে মালামাল ক্রয় করে আসছিলেন, লেনদেনের এক পর্যায়ে প্রায় ৬২,০০০ (বাঁষট্টি হাজার) টাকা দোকান বাকী হলে পাওনা টাকা চাওয়ায় লালন ও তার ভাগিনা ছাত্রলীগ নেতা সাগর তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে তাকে প্রান নাশের হুমকি প্রদান করে তার নিকট ২,৫০,০০০ (দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা চাঁদা দাবি করেন। পরে ভুক্তভোগী আনার আলী বাদী হয়ে মিরপুর থানায় তাদের নামে অভিযোগ দায়ের করেন। উল্লেখ্য, জমিজমা নিয়ে পূর্ব শত্রুতার জেরে সন্ত্রাসী লালন কৌশলে তার চাচা মৃত পচাই মন্ডল এর পুত্র মুন্তাজ আলী মন্ডল ও তার পুত্র কুর্শা ইউপি সদস্য আব্দুল হান্নান কে আলোচিত জালাল ফারাজী হত্যা মামলার আসামী করে তাদের হয়রানি করে আসছে বলেও জানা যায়।
