খাজানগর মোকামে চালের দাম আরও কমেছে
বোরো মৌসুম ঘিরে কুষ্টিয়ার চাল মোকাম খাজানগর এখন সরগরম হয়ে উঠেছে। ধানের বাম্পার ফলনের পর মোকামে চালের দাম নতুন করে আরো একদফা কমেছে। বাজারে ধানের সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম তুলনামুলক সহনীয় থাকায় চালের বাজারে প্রতিনিয়ত প্রভাব পড়ছে। সরু চালের দাম দীর্ঘদিন পর ৬০ টাকার নিচে নেমেছে। এছাড়া মাঝারি মানের চালের কেজি এখন ৫০ টাকার নিচে বিক্রি হচ্ছে মিলগেটে। মোটা চালের কেজিও এখন ৪০ টাকায় নেমেছে।

খাজানগর মোকামে চালের দাম আরও কমেছে
তবে মোকামের ছোট মিল মালিকদের অভিযোগ তাদের তুলনায় অটো মিল মালিকরা সব ধরনের চাল সব সময় ২ থেকে ৩ টাকা বেশি দামে বিক্রি করেন। এ কারনে খুচরা বাজারে কোম্পানীর ভিন্নতা অনুযায়ী চালের দাম প্রতি বস্তায় ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত কমবেশি থাকে। এদিকে বোরো মৌসুমে চালকল মালিকদের মাঝে মজুদ করার প্রবণতা থাকে। মজুদ ঠেকাতে নিয়মিত মিলে নজরদারি ও পাক্ষিক ছাঁটাই ক্ষমতা অনুযায়ী কোন মিলে কত মজুদ আছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। চলতি বছরের শুরুতেও খাজানগর মোকমে মানভেদে সরু চালের দাম ছিল ৬৬ থেকে ৬৮ টাকা। এরপর এই দাম বেশ কিছুটা সময় স্থির থাকে।
গত আমন মৌসুমেও চালের বাজারে অস্থিরতা ছিল। সর্বশেষ বোরো মৌসুম শুরু আগেই থেকে চালের বাজারে প্রভাব পড়তে শুরু করে। মাসখানেক আগে বোরো ধান ওঠার সময় চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা কমে যায়। ৬৩ থেকে ৬৫ টাকা নেমে আসে সরু চালের দাম। গত ১৬ মে খাজানগর মোকাম ঘুরে চালের দাম আরো কম পাওয়া গেছে। বোরো নতুন ধান থেকে যেসব চাল উৎপাদন হচ্ছে তা মানভেদে দাম আগের তুলনায় আরো ২ থেকে ৩ টাকা কমেছে। এখন সরু চাল মিলগেটে বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৫৭ টাকা থেকে শুরু করে ৬২ টাকায়। কাজল লতা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকা থেকে ৫০ টাকায় স্বর্ণা চাল মোটা বিক্রি হচ্ছে ৩৯ থেকে ৪১ টাকার মধ্যে।
শাহিন এগ্রো ফুডের মালিক জাহাঙ্গীর আলম জাহান এসব তথ্য দেন। তিনি বলেন,‘আমরা যারা ছোট ব্যবসায়ী তারা বিভিন্ন মোকাম থেকে ধান কিনে এনে চাল তৈরি করে দোকানে দোকানে সরবরাহ করি পাইকারি দরে। আমাদের থেকে যারা বড় মিলার আছে তারা এ দরের থেকে দুই থেকে ৩ টাকা বেশি দামে পাইকারিতে বিক্রি করছে। তারা চাল ব্রান্ডের হওয়ার কারনে ক্রেতারা বেশি দামে কিনে খাচ্ছে। খাজানগর মোকামে এখন রাতদিন একভাবে কাজ চলছে। শ্রমিকরা ব্যস্ত ধান সিদ্ধ, শুকানো ও মাড়াই কাজে। পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের বড় অংশগ্রহন আছে এসব কাজে। তবে মাঝে-মধ্যে বৃষ্টি হওয়ার ফলে হাসকিং মিলের শ্রমিকদের বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে। মোকামে অটো মিলের সংখ্যা ৪৩টির মত আর হাসকিং মিল আছে ৪ শতাধিকের বেশি। বছরের সব থেকে কর্মচাঞ্চল্য থাকে এ সময়টাতে। বেশি চাল উৎপাদন করা হয়। প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক চাল দেশের নানা জেলায় যাচ্ছে খাজানগর মোকাম থেকে।
মিল মালিকরা জানান,‘ ধানের এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। গত আমনেও ভাল ফলন হয়েছিল। তারপরও আমনে ১ হাজার ১০০ টাকার নিচে কোন ধান ছিল না। এবার সব থেকে ভাল মানের ধান পাওয়া যাচ্ছে ১ হাজার ৩৫০ টাকায়, আর মোটা ও মাঝারি জাতে ধান পাওয়া যাচ্ছে ১ হাজার ৪০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে। এছাড়া প্রান্তিক কৃষকদের ঘরে ধান থাকায় বাজারে ধানের কোন সংকট হচ্ছে না। মাসখানেক চালের বাজারে কমা ছাড়া বাড়বে না বলে মনে হচ্ছে।
দাদা রাইস মিলের এমডি আরশাদ আলীর সাথে কথা হলে বলেন,‘ বর্তমানে খাদ্য পন্যে চালের দামই কম আর অন্যসব পণ্যের দাম বাড়তির দিকে। চালের বাজার আগের তুলনায় মানভেদে ১০ টাকা পর্যন্ত কমেছে কেজি প্রতি। এটা বড় বিষয়। দেশের কৃষকরা ধান আবাদ করেছে, এবার ধানের সার্বিক ফলন ভাল হয়েছে। ধানও শুকনা, চালের পরিমানও বেশি হচ্ছে। এছাড়া সরকার মিল মালিকদের কাছ থেকে প্রচুর চালও কিনছে। সামনে কোন সংকট হবে না ইনশাআল্লাহ।

’ তবে মিল মালিকদের অভিযোগও আছে। তারা বলেন উত্তর নওগাঁসহ কয়েকটি মোকামে ৩৮ কেজিতে ধানের মণ কিনতে হচ্ছে। বাংলা মাপে এখনো ধান বিক্রি হচ্ছে এ দেশে। এটা প্রচলিত আইনের সাথে সাংঘর্ষিক। এতে লাভবান হচ্ছে কিছু মানুষ। তবে লোকসান হচ্ছে মিল মালিকসহ সাধারন ক্রেতাদের। বিষয়টি সরকারকে নজরে এনে এটা বন্ধ করতে উদ্যোগ নিতে হবে।
মিল মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক মিয়া অটো রাইস মিলের সত্বাধিকারি জয়নাল আবেদিন প্রধান বলেন,‘ খাজানগর মোকামে কোন মিল মালিক ধান ও চাল মজুদ করছে না। বরং অনেক মিল মালিকের ঘরে পুরাতন ধান ও চাল আছে। সেইসব ধানের চাল একটু বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে আর নতুন চাল কেজিতে ৫ থেকে ৬ টাকার বেশি কমেছে। তিনি বলেন, কর্র্পোরেট প্রতিষ্ঠান ও ফড়িয়ারা ধান ও চাল কিনে অবৈধভাবে মজুদ করছে এমন খবর আছে। তারা সরকারের চোখ ও আইন ফাঁকি দিয়ে সংকট সৃষ্টি করে।’ এদিকে মিলগেটে চালের দাম কমায় প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারের।
শহরের চৌড়হাস বাজারের ব্যবসায়ী শাহিন মিয়া বলেন,‘ নতুন চালে তারাও মিল গেট থেকে কিনে খরচ বাদে ৪ থেকে ৫ টাকা বেশি দামে কিনছেন। সরু চাল এখন তারা বিক্রি করছে ৬২ থেকে ৬৪ টাকা। কয়েক সপ্তাহ আগেও ৭০ টাকা কেজি ছিল সরু চাল। আর কাজললতাসহ অন্য মাঝারি জাতের চালও কম দামে কিনতে পারছেন ক্রেতারা।
জেলা খাদ্য কর্মকর্তা বাবুল হোসেন বলেন,‘ খাজানগরে অনেক বড় বড় মিল আছে। এসব মিল মালিকদের তথ্য তাদের কাছে আছে। কে কি পরিমান ধান ও চাল কিনছে তার হিসেব প্রতিনিয়ত আমাদের কাছে পাঠানোর একটি নিয়ম আছে। আমরাও নিয়মিত মিলগুলোতে নজরদারি রাখছি। কোন মিল মালিক মজুদ করলেই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
