খোকসা উপজেলা বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক এলাকা। এর আয়তন ১০৬.৭০ বর্গ কিলোমিটার। ভৌগোলিকভাবে এটি ২৩°৪৪´ থেকে ২৩°৫৩´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°১৫´ থেকে ৮৯°২২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত।

খোকসা উপজেলা
সীমানা:
- উত্তর: কুমারখালী উপজেলা ও পাবনা সদর উপজেলা
- দক্ষিণ: শৈলকূপা উপজেলা
- পূর্ব: পাংশা উপজেলা
- পশ্চিম: কুমারখালী উপজেলা
জনসংখ্যা ও ধর্ম
২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী খোকসা উপজেলার মোট জনসংখ্যা ছিল ১,১৪,১৮৮ জন।
- পুরুষ: ৫৮,১৩১ জন
- নারী: ৫৬,০৫৭ জন
ধর্মভিত্তিক বণ্টন:
- মুসলিম: ১,০০,৭০৪
- হিন্দু: ১৩,৪৬৯
- বৌদ্ধ: ১৩
- অন্যান্য: ২
প্রাকৃতিক জলাশয়
খোকসা উপজেলার প্রধান নদী হলো গড়াই নদী, যা এখানকার কৃষি ও মৎস্য খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
প্রশাসন
খোকসা থানা ১৯৮৩ সালে পূর্ণাঙ্গ উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। এটি বর্তমানে একটি সুসংগঠিত প্রশাসনিক কাঠামো দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।
প্রত্নতত্ত্ব ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান
প্রাচীন নিদর্শন ও প্রত্নসম্পদ:
- কালীমন্দির
- নীলকুঠি
গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান:
- রায়পুর পীরবাড়ি জামে মসজিদ
- ফুলবাড়ি জামে মসজিদ
- চাঁদোট জামে মসজিদ
- হিজলাবট জামে মসজিদ
- উথলি ব্যাপারীপাড়া জামে মসজিদ
- মিয়াবাড়ি জামে মসজিদ
- খোকসা কালী মন্দির
- ফুলবাড়ি মন্দির
শিক্ষা
সার্বিক শিক্ষার হার: ৩৯.৭%
- পুরুষ: ৪৩.৬%
- নারী: ৩৫.৬%
উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান:
- খোকসা জানিপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (প্রতিষ্ঠিত ১৯০০)
- ফুলবাড়ি হাইস্কুল (১৯০০)
- সেনগ্রাম হাইস্কুল (১৯০৭)
- ঈশ্বরদী মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৬৪)
- খোকসা ডিগ্রি কলেজ (১৯৭২)
সংস্কৃতি ও গণমাধ্যম
পত্র–পত্রিকা:
- দ্রোহ (সাপ্তাহিক)
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান:
- লাইব্রেরি: ১৩টি
- নাট্যদল: ৪টি
- যাত্রাদল: ২টি
- সিনেমা হল: ৩টি
- মহিলা সংগঠন: ৩টি
অর্থনীতি ও কৃষি
আয়ের প্রধান উৎস:
- কৃষি: ৫১.৯০%
- অকৃষি শ্রমিক: ৪.৬৮%
- শিল্প: ১০.২৩%
- ব্যবসা: ১৫.৩২%
- পরিবহণ ও যোগাযোগ: ৩.৯৭%
- চাকরি: ৬.৩৫%
- নির্মাণ: ১.২৯%
- ধর্মীয় সেবা: ০.০৮%
- রেন্ট ও রেমিটেন্স: ০.১৬%
- অন্যান্য: ৬.০২%
ভূমি মালিকানা:
- ভূমিমালিক: ৫১.৪৬%
- ভূমিহীন: ৪৮.৫৪%
- শহরে কৃষিজমি মালিক: ২৪.১২%
- গ্রামে কৃষিজমি মালিক: ৫৮.১৬%
প্রধান ফসল:
- ধান, গম, পাট, আলু, আখ
বিলুপ্ত/প্রায় বিলুপ্ত ফসল:
- নীল, কাউন, যব
প্রধান ফল:
- আম, জাম, কলা, কাঁঠাল, পেঁপে, লিচু
মৎস্য ও পশুপালন
এ উপজেলায় ছোট-বড় বহু মৎস্য খামার, হাঁস–মুরগির খামার ও হ্যাচারি রয়েছে, যা এখানকার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
যোগাযোগ ব্যবস্থা
- পাকা রাস্তা: ৫৪.০৮ কিমি
- কাঁচা রাস্তা: ২০২.৭০ কিমি
- নৌপথ: ৩০ নটিক্যাল মাইল
- রেলপথ: ৫.২ কিমি
- রেলস্টেশন: ১টি
বিলুপ্ত বাহন: পাল্কি, গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি
শিল্প ও কুটিরশিল্প
শিল্প ও কলকারখানা:
- বরফকল
- চালকল
- তেলকল
- আটাকল
- করাতকল
কুটিরশিল্প:
- তাঁতশিল্প
- মৃৎশিল্প
- বাঁশের কাজ
- নকশী কাঁথা
হাটবাজার ও মেলা
বিখ্যাত হাট:
- একতাপুর হাট
- গদাই হাট
- মোড়াগাছা হাট
- সেনগ্রাম হাট
- আমবাড়িয়া হাট
- ফুলবাড়ি হাট
প্রসিদ্ধ মেলা:
- মহিষবাথান রাশমেলা
- খোকসার কালী মেলা
প্রধান রপ্তানিপণ্য: পাট ও আখ
বিদ্যুৎ ও পানীয়জল
বিদ্যুৎ:
সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতের আওতায়, তবে কেবল ২২.৫৫% পরিবার বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারছে।
পানীয়জলের উৎস:
- নলকূপ: ৯৪.৯০%
- ট্যাপ: ০.৮৯%
- পুকুর: ০.১৪%
- অন্যান্য: ৪.০৭%
স্যানিটেশন ব্যবস্থা
- স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন: ৪২.৫৯% (গ্রামে ৫৯.২৫%, শহরে ৩৮.৮৪%)
- অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন: ৩৭.১৬% (গ্রামে ২৯.৭১%, শহরে ৩৮.৮৪%)
- কোনো ল্যাট্রিন নেই: ২০.২৫%
স্বাস্থ্যসেবা
- উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স: ১টি
- স্যাটেলাইট ক্লিনিক: ২টি
- পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র: ১টি
- কমিউনিটি ক্লিনিক: ৯টি
খোকসা উপজেলা একটি ঐতিহ্যবাহী ও সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ জনপদ। প্রাচীন নিদর্শন, ধর্মীয় সম্প্রীতি, কৃষিনির্ভর অর্থনীতি ও শিক্ষার বিকাশ—সব মিলিয়ে খোকসা কুষ্টিয়া জেলার অন্যতম সম্ভাবনাময় এলাকা হিসেবে বিবেচিত। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও প্রশাসনিক অবকাঠামো আরও সুযোগ তৈরি করছে এ উপজেলার সার্বিক উন্নয়নে।
