খোকসায় আ.লীগ নেতার ভেজাল গুড়ের কারবার - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

খোকসায় আ.লীগ নেতার ভেজাল গুড়ের কারবার

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: নভেম্বর ২৪, ২০২৫

খোকসা প্রতিনিধি ॥ মূল উপাদান ভারত থেকে আমদানি করা ‘গো-খাদ্য’। তার সঙ্গে মেশানো হচ্ছে চিনি, ময়দা, ডালডা, মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হাইড্রোজ এবং টেক্সটাইলের বিষাক্ত রং। শুনলে গা শিউরে উঠলেও, কুষ্টিয়ার খোকসায় এসব অখাদ্য মিশিয়েই দেদারসে তৈরি হচ্ছে মানুষের খাবার ‘খাঁটি গুড়’! জনস্বাস্থ্যের তোয়াক্কা না করে বিষাক্ত এই গুড়ের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন খোকসা পৌর ৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দিলীপ বিশ্বাস ষষ্ঠী।

প্রশাসনের সিলগালা, জেল কিংবা জরিমানা কোনোকিছুই যেন স্পর্শ করতে পারছে না এই প্রভাবশালী নেতাকে। সর্বশেষ চলতি বছরের ৬ মার্চ ২ লাখ টাকা জরিমানা ও কারখানা বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হলেও ভ্রাম্যমাণ আদালত চলে যাওয়ার পরপরই সেই নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ফের চালু হয়েছে ভেজাল গুড়ের মহোৎসব। অনুসন্ধানে জানা যায়, খোকসা উপজেলার পৌর এলাকার ৪ নং ওয়ার্ডের কালীবাড়ি রোডে অবস্থিত ‘মেসার্স দিলীপ ট্রেডার্স’ এবং ‘নিত্য গোপালের মাতৃভান্ডার’ নামের দুটি কারখানায় দীর্ঘ দিন ধরে এই অপকর্ম চলছে। দিলীপ বিশ্বাস ষষ্ঠী ও তার কাকা নিত্য গোপাল মিলে আবাসিক এলাকায় গড়ে তুলেছেন এই ভেজাল কারখানা। এখান থেকে উৎপাদিত বিষাক্ত গুড় প্রতিদিন কুষ্টিয়া ও রাজবাড়ী অঞ্চল ছাড়িয়ে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

আবাসিক এলাকায় গুড় জ্বালানোর বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় অতিষ্ঠ স্থানীয় বাসিন্দারা। ৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা এস.এম শাহনেয়াজ খোকন বলেন, “গুড় জ্বালানোর কালো ধোঁয়ায় শ্বাস নেওয়াই দায়। আমার পরিবারের সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বাড়িটি এখন বসবাসের অনুপযোগী। দিলীপ বিশ্বাস ও তার কাকা প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করেই বছরের পর বছর মানুষকে এই বিষ খাইয়ে আসছে।” একই এলাকার প্রবীর ভৌমিক বলেন, “আবাসিক এলাকায় এমন কারখানা বন্ধে বহুবার অভিযান দেখেছি। কিন্তু অভিযান শেষ হওয়া মাত্রই আবারও শুরু হয় উৎপাদন। আমরা প্রশাসনের কাছে এর স্থায়ী সমাধান চাই।”

ফারজানা খাতুন ও শামিম হোসেন জানান, জনস্বার্থে এই মৃত্যুফাঁদ অবিলম্বে বন্ধ না হলে বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে মানুষ। এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রদীপ্ত রায় দীপন জানান, ‘আমি খুলনাতে প্রশিক্ষণে আছি। প্রশিক্ষণ শেষে খোকসাতে ফিরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ বারবার জরিমানা দেওয়ার পরেও কীভাবে বহাল তবিয়তে এই মরণঘাতী ব্যবসা চলছে, তা নিয়ে জনমনে এখন একটাই প্রশ্ন নেতার প্রভাবের জোর কি আইনের চেয়েও বেশি?