আজাদ সানি ॥ কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী খেজুরতলা পাটিকাবাড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি ও উপস্থিতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আলোচনা ও অভিভাবক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার (৮ নভেম্বর) সকাল ১১টায় বিদ্যালয়ের হলরুমে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজের প্রভাষক আবু সাইদ। প্রধান বক্তা হিসেবে শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন পাটিকাবাড়ী ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি সেলিম বেজা বিশ্বাস।
অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ সালেহীন-এর সভাপতিত্বে এবং ক্রীড়া শিক্ষক আমলগীর হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে শিক্ষার মান উন্নয়নে মূল্যবান আলোচনা তুলে ধরেন, ইবি থানা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মাওঃ ইব্রাহীম খলিল, পাটিকাবাড়ী ইউনিয়ন জামায়াতের আমীর ইকবাল হোসেন, ইউনিয়ন বিএনপি’র সেক্রেটারি শরিফুল ইসলাম, বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য উসমান গণি, সদর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম-আহবায়ক ও ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য সচিব মতিউর রহমান লিটন মেম্বার। এ সময় বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক কোহিনুর খানম সহ অন্যান্য শিক্ষকমণ্ডলী, আমন্ত্রিত অতিথিগণ ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষার মান উন্নয়ন নিয়ে বক্তাদের বক্তব্যঃ বক্তারা তাদের বক্তব্যে শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেন, প্রধান অতিথি আবু সাইদ তাঁর বক্তব্যে বলেন, “শিক্ষার মান শুধু পাঠ্যবইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না। শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য হল একজন শিক্ষার্থীকে জীবনের প্রতি সচেতন, দায়িত্বশীল, এবং সৃজনশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। এজন্য অভিভাবকদের সচেতনতা, শিক্ষকদের উৎসাহ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকরী ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।” প্রধান বক্তা সেলিম বেজা বিশ্বাস বলেন, “আজকের যুগে প্রযুক্তির প্রভাব খুবই বড়, কিন্তু স্মার্টফোনের আসক্তি শিক্ষার্থীদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি তাদের মানবিক গুণাবলীর বিকাশও জরুরি। শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য আমাদের সকলকে একসাথে কাজ করতে হবে।” বিশেষ অতিথি মাওঃ ইব্রাহীম খলিল শিক্ষার মান উন্নয়ন নিয়ে বলেন, “বর্তমান সমাজে শিক্ষার ক্ষেত্রে অনেক বাধা রয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল বাল্যবিয়ে।
বাল্যবিয়ের কারণে মেয়েরা স্কুল থেকে ঝরে পড়ে এবং তাদের শিক্ষার সুযোগ হ্রাস পায়। এটা আমাদের সকলের দায়িত্ব, যে, এই ধরনের সামাজিক কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করা।” পাটিকাবাড়ী ইউনিয়ন জামায়াতের আমীর ইকবাল হোসেন বলেন, “আমরা যদি সত্যিই শিক্ষার মান বৃদ্ধি করতে চাই, তাহলে অভিভাবকদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। সন্তানদের প্রতি পর্যাপ্ত মনোযোগ এবং শিক্ষা বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য তাদের সাহায্য করা প্রয়োজন।” শরিফুল ইসলাম আরও বলেন, “শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য সরকার, শিক্ষক এবং অভিভাবকদের একযোগে কাজ করতে হবে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, আমরা শিক্ষার্থীদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারি কিনা—এটা আমাদের উচিত সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া।”
উসমান গণি বলেন, “বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছেন, কিন্তু অভিভাবকদের সহযোগিতা ছাড়া কোনো কিছুই সফল হতে পারে না। অভিভাবকদের উচিত শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করা এবং তাদের স্কুলে নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করা।” শিক্ষার মানে প্রভাবক বিষয়গুলোঃ শিক্ষার গুণগত মান নিম্নমুখী হওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে বক্তারা উল্লেখ করেন— ছাত্রদের মধ্যে বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি, ছাত্রীদের বাল্যবিয়ে, শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোন আসক্তি এবং অভিভাবকদের উদাসীনতা।
