ক্লাস চালুর দাবীতে ইবি শিক্ষক সমিতির কার্যালয় ঘেরাও - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

ক্লাস চালুর দাবীতে ইবি শিক্ষক সমিতির কার্যালয় ঘেরাও

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: আগস্ট ২২, ২০২৪

ইবি প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী ফ্যাসিবাদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ এবং অতিদ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস পরীক্ষা চালুর দাবিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। গতকাল বুধবার (২১ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে ইবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন সহ সমিতির বেশ কয়েকজন শিক্ষক অনুষদ ভবনের নিচে অবস্থিত কার্যালয়ে একটি আনঅফিসিয়াল মিটিংয়ে একত্রিত হলে খবর পেয়ে ক্যাম্পাসে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা সেখানে উপস্থিত হয়। তাদের পদত্যাগ দাবি এবং আওয়ামী ফ্যাসিবাদীদের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে তারা।

এসময় শিক্ষার্থীরা আওয়ামী লীগের দালালেরা, হুশিয়ার সাবধান; দালালদের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না; বাঁশের লাঠি তৈরি কর, দালালদের বিদায় কর; একশন একশন,  ডাইরেক্ট একশান; ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট একশান; দালালের চামড়া, তুলে নেব আমরা; ধর ধর দালাল ধর, ধইরা ধইরা সাইজ কর ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস পরীক্ষা চালুর ক্ষমতা শিক্ষক সমিতির নেই। ক্লাস পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে ডিনস কমিটি। ডিনস কমিটি থাকতে তারা কেনো আজকে এখানে এসেছে? অবশ্যই তাদের কোন অসৎ উদ্দেশ্য আছে।

তারা আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারকে আবারো ক্ষমতায় আনার ষড়যন্ত্র করছে। তাদের এই উদ্দেশ্য আমরা কখনোই সফল হতে দেব না। ইবি সহ-সমন্বয়ক নাহিদ হাসান বলেন, শিক্ষার্থীদের উপরেও শিক্ষকদের এখন কিছুটা ভরসা রাখা উচিত। আমরা চাচ্ছি আগামী সপ্তাহের প্রথম দুই তিন দিনের মধ্যে যেন বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাস পরীক্ষা চালু হয়। কারণ এই বিশ্ববিদ্যালয় এমনি সেশন জটের দীর্ঘ ইতিহাস আছে। যেহেতু ভিসি, প্রো-ভিসি, ট্রেজারার নেই, এখন দায়িত্ব গুলো ডিনদের উপরেই বর্তায়। আমি মনে করি, ডিনেরা যদি স্ব স্ব অনুষদে ক্লাস চালু করে, তাহলে আইনি কোন বাধা নেই। আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহজাহান মন্ডল বলেন, এককভাবে ডিনদের কোন ক্ষমতা নেই তবে ডিনস কমিটির সিদ্ধান্তের একটি ক্ষমতা আছে। শিক্ষার্থীরা বলেছে যে প্রশাসন না থাকলে ডিনদের উপরে দায়িত্ব বর্তায়, এটা ঠিক।

তারা ক্লাস চালু করবে কি করবে না, সেটা ডিনস কমিটির সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল। শিক্ষক সমিতি এই ব্যাপারে দাবী জানাতে পারে কিন্তু সিদ্ধান্ত দিতে পারেনা। প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতি অধ্যাপক ড. আসাদুজ্জামান শিক্ষার্থীদের বলেন, আমরা মনে করি তোমাদের প্রতিনিধি এবং আমাদের প্রতিনিধিরা একসাথে বসে সংকট সমাধান সম্ভব। তোমরা গাইডলাইন দেও, আমরা সেভাবে আগাই। আমরা মূলত এখানে শিক্ষকতা করতে আসছি, প্রশাসনিক দায়িত্ব গুলো আমাদের অপশনাল।

তোমরা যদি মনে কর আমাদের থাকা দরকার আমরা থাকবো, নতুবা আজকেই পদত্যাগ করে চলে যাব। শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা প্রতিটি বিষয় ইতিবাচক ভাবেই ভাবছি। শিক্ষার্থীরা যদি মনে করে আমাদের সাথে মিটিং করবে আমরা রাজি, যদি বলে আমাদের সবার পদত্যাগ করতে হবে আমরা তাতেও রাজি। শিক্ষার্থীদের মঙ্গলের জন্য যা প্রয়োজন আমরা করব। শিক্ষার্থীদের অনিরাপদ রেখে আমাদের পদত্যাগ করা অনুচিত ভেবে আমরা এখনো রয়েছি। প্রশাসন আসলে আমরাও পদত্যাগ করে চলে যাব।

গত কয়েকদিন থেকে শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা শিক্ষা-কার্যক্রম স্বাভাবিক করার দাবি জানিয়ে এলেও তাতে সন্তোষজনক কোন অবস্থান নিতে দেখা যায়নি শিক্ষকদের। উল্টো বিএনপিপন্থী শিক্ষক নেতারা উপাচার্য হতে ক্যাম্পাস ছেড়ে ঢাকায় লবিংয়ে ব্যস্ত আছেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। অন্যদিকে আওয়ামীপন্থী শিক্ষক নেতারা নিজেদের বর্তমান পদগুলোতে থাকবেন কি না এ নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন।

গতকাল বুধবার আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের একটি অংশ শিক্ষক সমিতির কার্যালয়ে পদ পদবী নিয়ে সভা করেন। সেখানে একাধিক ডিন ও হল প্রভোস্টদের অংশ নিতে দেখা যায়। এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষক সমিতির কার্যালয়ের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করে। রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ডিনরা চাইলে মিটিং করে শিক্ষা-কার্যক্রম শুরু করতে পারবেন। কিন্তু ডিনরা মিটিং না করায় ক্লাস শুরু হচ্ছে না।

অভিযোগ রয়েছে, বিএনপিপন্থী শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দলের সভাপতি অধ্যাপক এ কে এম মতিনুর রহমান ঢাকায় অবস্থান করে ভিসি হওয়ার জন্য লবিং করছেন। তিনি ডিনস কমিটির আহবায়ক। এছাড়া জিয়া পরিষদের মহাসচিব ও কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক এমতাজ হোসেনও ভিসি হওয়ার তদবির করতে ঢাকায় আছেন। সরকার পদত্যাগের পর অনুষ্ঠিত হওয়া দুইটি ডিনস কমিটির মিটিংয়েও তিনি অংশ নেননি।

এছাড়া ধর্মতত্ত্ব অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সিদ্দিকুর রহমান আশ্রাফীও ঢাকায় অবস্থান করছেন। তবে তারা লবিংয়ের বিষয়টি অস্বীকার করেন। বাকী ডিনরা আওয়ামীপন্থী হওয়ায় নিজেদেরকে গুটিয়ে রেখেছেন। ফলে শিক্ষাকার্যক্রম নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। ডিনস কমিটির আহ্বায়ক এ কে এম মতিনুর রহমান বলেন, গত পাঁচদিন ধরে আমি ঢাকায় বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের টকশোতে অংশ নিচ্ছি। এগুলো তো আর গোপন না, লাইভ প্রচার হচ্ছে।

কেউ যদি লবিংয়ের কথা বলে সেটা তাদের ব্যক্তিগত মতামত। আমি আমার জায়গা থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা করছি শিক্ষাকার্যক্রম স্বাভাবিক করার। শনিবার ডিন কমিটির সভা ডেকেছি। কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক এমতাজ হোসেন বলেন, উপাচার্য হওয়ার জন্য ঢাকায় আছি বিষয়টি এমন নয়। আমি শারীরিক অসুস্থতার জন্য ঢাকায় আছি। আমি যখন ডিনের দায়িত্ব নিই তখনই প্রশাসনকে জানিয়েছিলাম শারীরিক অসুস্থতার জন্য কিছু দিন ক্যাম্পাসে ও কিছুদিন ঢাকায় থাকতে হবে। আমি অনুষদের কয়েকটি বিভাগকে ক্লাস শুরু করতে বলেছি ইতোমধ্যেই। ডিনস কমিটির আহ্বায়ক সভা আহ্বান করলে আমি অনলাইনে যুক্ত হবো।