মোঃ কনক হোসেন ॥ মানুষের পাঁচটি মৌলিক অধিকারের মধ্যে সুচিকিৎসা অন্যতম একটি মৌলিক অধিকার। মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন হলে মানব জীবন বিপন্ন হয়। সুচিকিৎসা পাওয়া একজন নাগরিকের অধিকার। বর্তমান সরকার চিকিৎসা সেবার মানোন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও আমরা স্বার্থান্ধ কিছু মহল সেবাখাতকে দূষিত করে ফেলছি। অথচ বর্তমান বিশ্বে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে। উন্নত ও আধুনিক প্রযুক্তির অভাবনীয় সাফল্যে চিকিৎসা ব্যবস্থা পেয়েছে নতুন গতি। এদিকে বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। কিন্তু কিছু কিছু চিকিৎসক , হাসপাতালে দায়িত্বরত কর্মচারী ও ঔষধ কোম্পানী নীতিনৈতিকতাকে বিসর্জন দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই সেবাখাতকে দূর্বিসহ করে তুলেছে। এতে নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সাধারণ রোগীরা। ইদানিং ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানীর মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভরা রোগীদের দেয়া চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্রের ছবি তোলার এক অ-ঘোষিত প্রথা চালু করেছে।যা অনেকের কাছে এখন প্রশ্ন হয়ে দাড়িয়েছে। ঠিক এমন এক ভোগান্তিতে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে আসা রোগীদের, হাসপাতাল হতে প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে বের হতে না হতেই ঔষধ কোম্পানীর লোকদের কাছে হেনেঁস্তার শিকার হয় প্রতিনিয়ত। কে কার আগে প্রেসক্রিপশনে ক্যামরা বসাবে তার জন্য প্রস্তুত করে রাখে মুঠোফোনের ক্যামরাটা। তাদের এধরণের হামাগুড়িতে অতিষ্ট সাধারণ রোগীরা। ডাক্তার এবং রোগীর একান্ত ব্যক্তিগত প্রেসক্রিপশনে ক্যামরায় ছবি তুলা অনেকটা অনৈতিক ও বিব্রতকর। যা চোখে না দেখলে বুঝা কঠিন হয়ে যায়। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে প্রসূতি ও মারাত্মকভাবে অসুস্থ রোগীরাও বাদ যায়না তাদের হেনেঁস্তার কবল থেকে। এ নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা এক অসুস্থ রোগীকে থামিয়ে জোরপূর্বক হাত থেকে প্রেসক্রিপশন কেড়ে নিয়ে ছবি তুলতে শুরু করে যার শেষ হয়না! এদিকে রোগীর অবস্থা খারাপ হতে থাকে তাদের গোলমাল ও টানাহেঁচড়ার কারনে। রোগীর স্বজন রোগীর খারাপ অবস্থা দেখে আর ধোর্য ধারণ করতে পারে না, প্রেসক্রিপশন চাইলে রিপ্রেজেন্টিভদের সাথে কথা কাটাকাটি শুরু হয় এক পর্যায়ে হাতাহাতিতে রূপ নেয়। প্রেসক্রিপশনে ছবি উঠানো যেন তাদের একধরণের বাধ্যগত প্রতিযোগীতা। এ নিয়ে প্রায় সময় এম.আর.দের সাথে রোগীদের বাকবিতন্ডা করতে দেখা যায় প্রায় সময়ই। এছাড়া একেবারে অজপাড়া গাঁ থেকে আসা মহিলা রোগীরা বেশী বিব্রত বোধ করেন এসব দৃশ্যে। সংশ্লিষ্ট রোগীর অনেক গোপন রোগের তথ্য থাকে প্রেসক্রিপশনে যা অন্যের জানার অধিকার নেই। রোগীরা এতটা ইতস্থবোধ করেন দেখলেই যেনো মনে হয় তারা নিরুপায়। বিষয়টি নিয়ে অনেকবার কিছু সংখ্যক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমআরদের বক্তব্য হল, কোম্পানীর নির্দেশেই তারা ব্যবস্থাপত্রের ছবি তোলে কার্যালয়ে পাঠান। এমনকি কোম্পানীর নানা প্রেসারের কারণে এম.আর’দের এই পথ অবলম্বন করতে হয় বলে জানাযায়। একটি সূত্র জানায়,দেশে ঔষধ কোম্পানী ব্যাপকহারে বাড়ছে।

কোম্পানীর মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভরা ডাক্তারদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকেন। ব্যবস্থাপত্রে চিকিৎসক ঔষধ কোম্পানীর কোন কোন প্রোডাক্টস লিখেছে তা তাদের প্রতিনিধিরা ছবি তুলে কোম্পানীর কাছে প্রদর্শন করে। কোম্পানীর সাথে সংশ্লিষ্ট এম.আর দের এতে করে তাদের বেতন ভাতা বৃদ্ধি ও প্রমোশন হয়। এম.আর’দের কে ডাক্তারখানায় দেখলে রোগীদের অনেকের ধারণা হয়, ডাক্তার হয়তো প্রেসক্রিপশনে নিম্নমানের ঔষধ লিখছে। আবার বেশকিছু ডাক্তার চেম্বারে এম আর’দের প্রবেশকে নিষিদ্ধ করা হয়। বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীদের ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে অহেতুকভাবে এম আর’দের প্রবেশকে নিষেধ করেও কাজ হয়না। চক্ষু লজ্জার কারণে অনেকে বিষয়টিকে এড়িয়ে চলে। গত কয়েকদিন যাবৎ কুষ্টিয়া সদর হাসপাতাল আউটডোরে ও হাসপাতাল গেইট, ডাক্তার চেম্বারে গিয়ে রোগীর চিকিৎসাপত্রে ছবি তোলার দৃশ্যটা বিবেকে বিদ্ধ করে। রোগীদের অনেকে এ পরিস্থিতির কবলে পড়ে বিব্রত হতে দেখেছি। ডাক্তার চেম্বারে যেখানে রোগীদের ভীড় থাকার কথা সেখানে সুষ্ঠু সবল এক শ্রেনীর মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভদের দল রোগীদের বিড়ম্বনার সৃষ্টি করে তাদের কোম্পানীর পন্যের প্রচার এবং রিপ্রেজেন্ট কাজে হামাগুড়িতে ব্যতিব্যস্ত থাকে। এই যেন নিত্য নৈমত্তিক কান্ড। কেউ যেন দেখার নেই। দেশের নামকরা ঔষধ কোম্পানী সহ বেশ কিছু কোম্পানীর প্রতিনিধিরা বিভিন্ন সময়ে রোগীদের ব্যবস্থাপত্রের ছবি তোলা নিয়ে নানা তর্কাতর্কি হয়। বিব্রতকর এই পরিস্থিতি থেকে অনেকে আজ মুক্তি চায়। উচ্চ ডিগ্রীধারী বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ এম.আর’দের ছবি উঠানো ও তাদের প্রচলিত প্রথা-পদ্বতিকে কোন কিছুতেই সমর্থন করেনা। অনেক সময় কিছু কিছু অসাধু ডাক্তার সামান্য বিনিময়ের ফলে নিম্নমানের প্রোকাক্ট লিখে থাকে বলে জানান সচেতন কিছু মহল। অথচ চিকিৎসা “বিজ্ঞানীরা বলেন, এই পদ্ধতি চিকিৎসা বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সমর্থন করতে পারে না। ছবি তোলার এই পদ্ধতি বন্ধ হওয়া দরকার বলে তারা মন্তব্য করেন। পক্ষান্তরে এই পদ্ধতি চিকিৎসকদের রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে ঔষধ নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্বাধীন মতামতকে প্রভাবিত করতে পারে। এ বিষয়ে হাসপাতালের আর এম ওর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে হাসপাতালের তত্বাবধায়ক রফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, রিপ্রেজেন্টেটিভদের হয়রানির বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা সপ্তাহের নির্দিষ্ট ২ দিন দুপুর ১ ঘটিকার সময় সাক্ষাতের বিষয়টি তাগিদ দিয়েছি তবুও কিছু সংখ্যক এম আর নির্দেশনা না মেনে হাসপাতাল এরিয়াতে এ ধরনের বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করছে, এ বিষয়ে পুনরায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সচেতন মহলের দাবি অবিলম্বে এই জনভোগান্তি দূর পূর্বক রোগীদের স্বাধীন ও সুচিকিৎসা ত্বরান্বিত করা হোক।
