কুষ্টিয়ার সাবেক এমপি হানিফ ও তাঁর এপিএসের ব্যবসা ঠিকই চলছে - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

কুষ্টিয়ার সাবেক এমপি হানিফ ও তাঁর এপিএসের ব্যবসা ঠিকই চলছে

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৫

নিজ সংবাদ ॥ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনের পরপরই লাপাত্তা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ ও তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী (এপিএস) আমজাদ হোসেন রাজু। তবে কুষ্টিয়ায় তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ঠিকই চলছে। রাতারাতি ভোল পাল্টে বিএনপি নেতাদের নিয়ে ব্যবসা ও সম্পদ দেখভাল করছেন জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান চঞ্চল। তিনি সম্পর্কে রাজুর ভায়রা। গত এক দশক ভায়রার রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে অঢেল সম্পদ গড়েছেন চঞ্চল। অবশ্য রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর শুরুতে কিছুটা চাপে ছিলেন তিনি। এখন বিএনপি নেতাদের ‘ম্যানেজ’ করে চঞ্চল ঠিকাদারি কাজে ফিরেছেন পুরোনো চেহারায়। জানা যায়, সরকারি চাকরির কারণে চঞ্চল ঢাকার বাবর অ্যাসোসিয়েট, কুষ্টিয়ার গ্যালাক্সি অ্যাসোসিয়েটসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নামে লাইসেন্স করে ঠিকাদারি করেন। তাঁর সহযোগী হিসেবে আছেন স্থানীয় ঠিকাদার শাকিল।

রাজুর মাধ্যমে পাওয়া গণপূর্ত, পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, কুষ্টিয়া সার্কিট হাউস, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের ভবন ছাড়াও মেহেরপুরের গাংনীর শিশু পার্ক, ব্রিজসহ বিভিন্ন কাজ করছেন চঞ্চল। অভিযোগ রয়েছে, রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় থাকা হানিফ ও রাজুর ফ্ল্যাট, জমি এবং ব্যবসা দেখাশোনা করছেন চঞ্চল। দু’জনের কোটি কোটি টাকা চঞ্চলের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে। চঞ্চল সম্প্রতি জেলা বিএনপির সাবেক এক নেতার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে উপহার নিয়ে হাজির হন। পাশাপাশি ব্যাংকের এক নারী এজিএম ও তাঁর স্বামী বিএনপি নেতা কলেজ শিক্ষককে ব্যবসায়িক অংশীদার করে অবৈধ সম্পদ রক্ষার চেষ্টা করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনতা ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে চঞ্চল দিনের পর দিন অফিস না করলেও মাস শেষে বেতন তুলতেন।

হানিফের লোক হওয়ায় কোনো ব্যবস্থাপক চঞ্চলকে কিছু বলার সাহস পেতেন না। সম্প্রতি শহরের চৌড়হাস শাখা থেকে বদলি হয়ে পুলিশ লাইন্সের সামনে আঞ্চলিক শাখায় এলেও কমেনি তাঁর দাপট। বর্তমানে গণপূর্ত বিভাগের অধীনে কুষ্টিয়া কৃষি বিপণন কেন্দ্র নির্মাণের কাজ করছেন চঞ্চল। যদিও কাগজ-কলমে বাস্তবায়নের দায়িত্বে আছেন ঠিকাদার বাবর ও সৌরভ। মেহেরপুরের গাংনী পৌরসভায় পার্ক নির্মাণসহ প্রায় ১৩ কোটি টাকার কাজ পেয়েছেন চঞ্চল। কুষ্টিয়া ও মেহেরপুরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর মোহাম্মদপুর-শ্যামপুর, নাতনাপাড়া-গোয়ালগ্রাম ও কোদালকাঠি-খলিশাকুন্ডি নামে তিনটি সেতুর কাজ করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। গাংনী উপজেলা প্রকৌশল অফিস সূত্র জানায়, কাজগুলোর ঠিকাদার ছিলেন মেহেরপুর-২ আসনের আওয়ামী লীগদলীয় সাবেক এমপি ডা. নাজমুল হক সাগর ও তাঁর খালাতো ভাই বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান বাবলু। কাগজে তারা সেতু তিনটির কাজে থাকলেও নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছেন চঞ্চল।

বিগত আওয়ামী লীগ আমলে গোপালগঞ্জে পানি উন্নয়ন বোর্ডের খাল খননের কাজ চঞ্চল ইউনাইটেড ব্রাদার্সের নামে করেন। কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈদ্যুতিক প্লান্ট স্থাপনের কাজও করেন তিনি। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে লাইটিং অ্যারেস্টার, কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসকের অফিস চত্বরের আরসিসি ঢালাই রাস্তা ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনের কাজ অন্য ঠিকাদারের লাইসেন্সে বাগিয়ে নিয়ে বাস্তবায়ন করেন চঞ্চল। কুষ্টিয়া সার্কিট হাউস পুনর্র্নিমাণ প্রকল্পের সিসি ক্যামেরা ও অ্যারেস্টারের কাজও বাগিয়েছেন এ ব্যাংকার। জনতা ব্যাংকের চৌড়হাসের পর পুলিশ লাইন্স শাখাপ্রধানকে নগদ অর্থ, নানা উপঢৌকন দিয়ে বছরের পর বছর ব্যাংকের কাজে ফাঁকি দিয়ে চঞ্চল ঠিকাদারি করছেন বলে জানিয়েছন তাঁরই দুই সহকর্মী। জানতে চাইলে কুষ্টিয়া গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুজ্জামান হোসেন জাহির বলেন, ‘আমার বক্তব্য নিতে হলে নিয়ম মেনে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করতে হবে।

এ ছাড়া আমি কোনো বক্তব্য দেব না।’ তবে ওই কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দাবি করেন, চঞ্চলের সঙ্গে নির্বাহী প্রকৌশলীর দহরম-মহরম। চঞ্চল প্রকৌশলী জাহিরের কার্যালয়ে নিয়মিত আড্ডা দেন। এ কারণে তিনি তথ্য দিতে গড়িমসি করছেন। অফিস ফাঁকি দিয়ে ঠিকাদারি করার বিষয়ে কুষ্টিয়ায় কর্মরত জনতা ব্যাংকের উপমহাব্যবস্থাপক জাকির হোসেন জানান, এ ধরনের তথ্য তাঁর জানা নেই। রাজু-চঞ্চলের যত সম্পদ-অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর কারওয়ান বাজারের টিসিবি ভবনে রাজুর মালিকানাধীন অর্ণব ট্রেডিং এবং ম্যাট্রেক্স কেমিক্যাল নামে দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কুষ্টিয়ার মঙ্গলবাড়িয়া বাজারে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে রয়েছে নগদের এজেন্ট ব্যবসা ও পুলিশ লাইন্সের সামনে কয়েক কোটি টাকার ইলেট্রনিক্স পণ্যের শোরুম। কুষ্টিয়া ও ঢাকার অভিজাত এলাকায় রাজু ও তাঁর স্ত্রী রেবা খাতুনের নামে অ্যাপার্টমেন্ট ও ফ্ল্যাট রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার ৬৯ গ্রিন রোডে দুই কোটি ও ১২৫ কলাবাগান লেক সার্কাসে তিন কোটি টাকা মূল্যের দুটি ফ্ল্যাট এবং কুষ্টিয়া ছয় রাস্তার মোড়ে ফয়সাল টাওয়ারে রয়েছে আরেকটি ফ্ল্যাট।

কুষ্টিয়া শহরের প্রাণকেন্দ্র পরিমল টাওয়ারে দুটি ও ভেড়ামারা কাঠের পুলে একটি দোকান রয়েছে। ঢাকার মোহাম্মদপুরের বছিলার আটিবাজার হাউজিংয়ে কিনেছেন ৮ কাঠার প্লট, যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। ঢাকার গাজীপুরে প্রায় আট কোটি টাকার এক বিঘার প্লট, কুষ্টিয়া দৌলতপুরে রয়েছে ১০ বিঘা জমিতে বিশাল আমবাগান। এসব সম্পদে দুই ভায়রার যৌথ অংশীদারিত্ব রয়েছে বলে চঞ্চলের এক ঘনিষ্ঠজন জানিয়েছেন। গাংনীতেও কয়েক কোটি টাকা খরচে বাড়ি করেছেন চঞ্চল। ওয়াহিদুজ্জামান চঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিউজ না করার জন্য তদবির করেন। আগে থাকলেও, এখন ঠিকাদারি করেন না দাবি করে তিনি বলেন, ‘সম্পদ দেখভাল দূরে থাক, ভায়রা রাজুর সঙ্গে আমার কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য নেই।