কুষ্টিয়ার মুখরোচক তিলের খাজার চাহিদা - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

কুষ্টিয়ার মুখরোচক তিলের খাজার চাহিদা

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: জানুয়ারি ১৩, ২০২৪

অনেক সময় রাস্তাঘাটে ফেরি করে কুষ্টিয়ার তিলের খাজা বিক্রি করতে দেখা যায়। ছোটবড় বিভিন্ন বয়সী মানুষের কাছে মুখরোচক এই খাবার বেশ প্রিয়। শীতে তিলের খাজার চাহিদা বেড়েছে। সম্প্রতি খাবারটি ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের তালিকায় স্থান পেয়েছে। কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেউড়িয়ায় বছরজুড়ে তিলের খাজা তৈরি হলেও জেলার দৌলতপুরে তৈরি হয় মৌসুমভিত্তিক।

কুষ্টিয়ার মুখরোচক তিলের খাজার চাহিদা

বাংলা সনের কার্তিক মাসের শেষের দিক থেকে ফাল্গুনের প্রথম দিক পর্যন্ত তৈরি হয় এই খাজা। দৌলতপুরে ছোটবড় অন্তত ১০ থেকে ১২ জন কারিগর বাজারে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৭০০ কেজি তিলের খাজা পাইকারি বিক্রি করেন। চার ধাপে প্রস্তুত হয় এই তিলের খাজা। সাধারণত বাজারে পাওয়া যায় দুই ধরনের খাজা, যা চিনি অথবা গুড় দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে। উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের হোসেনাবাদ মাস্টার পাড়া এলাকায় তুহিন উদ্দিন টোকন নামের এক খাজা তৈরির কারিগরের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়িতে চলছে খাজা তৈরির কর্মযোগ। উঠানের এক পাশে মাটির চুলা। ওই চুলায় লোহার কড়াইয়ে জ্বাল দেওয়া হচ্ছে চিনি।কাজের ফাঁকে কথা হয় টোকনের সঙ্গে। তিনি জানান, প্রতিদিন পাইকারদের চাহিদার ওপর ভর করে ৫০ থেকে ১০০ কেজি চিনির খাজা তৈরি করেন। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত খাজা তৈরির কাজ করে তাঁর পুরো পরিবার। বিকেলে টোকন খাজা বিক্রি করেন বাজারের হাটে। অন্য মৌসুমে তিনি মিষ্টি তৈরি করেন এ ছাড়া টোকনের গুড় ও ময়দা দিয়ে তৈরি খুরমার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বাজারে। এভাবেই চলে তাঁর পরিবারে ৫ জনের ভরণপোষণ। টোকন আরও জানান, তাঁর তৈরি খাজা পাইকাররা ২৩০ টাকা কেজি দরে কিনে বাজারে ২৮০ টাকা কেজিতে খুচরা বিক্রি করেন। এ ছাড়া তিনি অল্প পরিমাণে নিজে বিক্রির জন্য ১০ কেজি করে গুড়ের খাজাও তৈরি করেন। টোকনের বাড়িতে উপস্থিত হন খাজা ব্যবসায়ী এনামুল হক। তিনি জানান, তিনি ২০ থেকে ২৫ কেজি খাজা প্রতিদিন বিভিন্ন হাটে বাজারে বিক্রি করেন। শীতের সময় খাজার কদর বাড়ে ক্রেতাদের কাছে। বাজারে বাজার করতে এলেই তিলের খাজা কেনেন না এমন লোক খুবই কম পাওয়া যায় বলে জানান তিনি। বৃহস্পতিবার বিকেলে মথুরাপুর বাজারে তরিতরকারি কিনতে আসা হিমেল বলেন, ‘বাজারে এলেই তিলের খাজা কেনা হয়। পরিবারের জন্য সবাই পছন্দ করে এই মিষ্টি খাবারটি। তবে উপকরণের দাম বাড়ায় আগের তুলনায় দাম বেড়েছে অনেক তাই একবারে বেশি কেনা সম্ভব হয় না।’ সৈকত নামের এক ক্রেতা দুই কেজি চিনির তৈরি তিলের খাজা কিনেছেন ঢাকায় বোনের বাসায় পাঠাবেন বলে। তিনি বলেন, ‘খাবার মুখরোচক হওয়ায় পরিবারের সবারই পছন্দ। যা এই শীত মৌসুমে হাটেবাজারে পাওয়া যায়।’ যেভাবে তৈরি হয় তিলের খাজা, বড় লোহার কড়াইয়ে চিনি বা গুড় জ্বাল দেওয়া হয়। পরে প্রয়োজন মতো ঘন হলে তা চুলা থেকে নামিয়ে হালকা ঠান্ডা করা হয়। ঠান্ডা হলে ওই ঘন দ্রবণ গাছের ডালে বা লোহার বাঁকানো দণ্ডে আটকায়ে হাত দিয়ে টানতে থাকতে হয়। একপর্যায়ে তা বাদামি রং থেকে সাদা হলে কারিগররা বিশেষ কায়দায় তা হাতের ভাঁজে ভাঁজে টানতে থাকেন। তখন এর ভেতরটা ফাঁপা হতে থাকে। ফাঁপা অংশগুলোকে বারবার টেনে টেনে ভাঁজ করা হয়, যাতে ভেতরে ফাঁপা ছিদ্র অনেক বেশি হয়। এরপর টানা শেষ হলে রাখা হয় পরিষ্কার স্থানে। নির্দিষ্ট মাপে কেটে তাতে মেশানো হয় খোসা ছাড়ানো তিল। এরপর খাওয়ার উপযোগী হয়ে যায় তিলের খাজা।