ভেড়ামারা প্রতিনিধি ॥ কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার ভেড়ামারা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল হকের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগে জানা যায় যে তিনি আর্থিক ব্যয় নির্বাহ করার ক্ষেত্রে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে চলেছেন। এ ব্যাপারে অন্য কোন শিক্ষকদের সংশ্লিষ্টতা তিনি রাখেননি। তিনি যেভাবে যা ভাল মনে করেন তাই করে চলেছেন।
সম্প্রতি ঈদে মিলাদুন্নবীতে মাত্র ৩০০ টাকা ব্যয় জিলাপি কিনে ২৯০০ টাকা মতন ভাউচার করার বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক মহলে ব্যাপক তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে। এরই সূত্র ধরে বেরিয়ে আসে আরও বিস্ময়কর নানাবিধ দুর্নীতির খবর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন সরকারিভাবে কম্পিউটার বাবদ ছাত্র প্রতি ২০ টাকা করে তোলার নিয়ম থাকলেও প্রধান শিক্ষক তার একক কর্তৃত্ব বলে ১০০ টাকা করে তুলেছেন।
নৈশ প্রহরী বাবদ সরকারিভাবে ৩০ টাকা করে উত্তোলনের নিয়ম থাকলেও সে নিয়মের তোয়াক্কা না করে ২৪০ টাকা করে তুলেছেন। মুদ্রণ বাবদ সরকারিভাবে ৪০ হাজার টাকা এবং শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে দুই লক্ষ ১০ হাজার টাকা উত্তোলন করলেও সিলেবাস ব্যাচ এবং ডাইরি সরবরাহ করা হয় না। কৃষি ও বাগান বাবদ ২০ টাকা করে তোলা হলেও, কোন বৃক্ষরোপণ নেই। সাংস্কৃতিক বাবদ ৭৫ টাকা করে তোলা হলেও, কোন সাংস্কৃতিক কার্যক্রম নেই।
কমন রুম বাবদ ২০ টাকা করে তোলা হলো বিদ্যালয়ে নেই কোন কমন রুম। পরিচয়পত্র বাবদ ৫০ টাকা করে আদায় করেছে কিন্তু কোন পরিচয়পত্র দেয়া হয়নি। দরিদ্র তহবিল থাকলেও কোন দরিদ্র ছাত্রকে দরিদ্র তহবিল থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এমন সংবাদপাওয়া যায়নি। রাসায়নিক দ্রব্য বাবদ ৬৫ হাজার এবং গবেষণাগার বাবদ এক লক্ষ বিশ হাজার টাকা সর্বমোট এক লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা উত্তোলন করা হলেও এ বাবদে স্বচ্ছতার সাথে ব্যয় নির্বাহ করা হয়নি। সংক্ষুব্ধ শিক্ষকরা আরো জানান শিক্ষকদের অনুষ্ঠান এবং উৎসবাদী বাবদ সরকারিভাবে ২৫ হাজার টাকা করে বিদ্যালয়ে বরাদ্দ আসলেও কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি।
এছাড়া বিদ্যালয়ে রশিদ ব্যতীত অর্থ আদায় নিষিদ্ধ থাকলেও ষষ্ঠ ও নবম শ্রেণীর ভর্তি ফরম বাবদ ৩ বছরে ৮৪ হাজার টাকা প্রশংসাপত্র বাবদ ৩ বছরে ৭৫ হাজার টাকা সার্টিফিকেট বাবদ ৩ বছরে ৬০ হাজার টাকা সর্বমোট ২ লক্ষ ১৯ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এছাড়া শিক্ষক পরিষদ না থাকা সত্ত্বেও বিগত তিন বছরের এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে শতকরা দুই ভাগ অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগ উঠেছে। এ সকল নানাবিধ অভিযোগ ও দুর্নীতির বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল হকের মুখোমুখি হলে তিনি বলেন সরকারি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের অল ইন অল।
বিভিন্ন ভাউচারে শিক্ষক সদস্যদের স্বাক্ষর না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন কতিপয় শিক্ষক তার কাছ থেকে সুবিধা চেয়ে না পাওয়ার কারণে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে স্বাক্ষর করেনি। প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল হক তিনি আরো বলেন তাকে সরিয়ে দিয়ে কেউ কেউ প্রধান শিক্ষক হতে চাচ্ছে এ কারণে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি বলেন সকল খরচের ভাউচার সংরক্ষিত আছে। তিনি দাবি করেন তিনি কোনরূপ অর্থ আত্মসাৎ বা অনিয়ম করেননি। তিনি পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছিলেন কিন্তু উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তার উপরে সন্তুষ্ট থাকায় তারা পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেননি বলে তিনি জানান। তিনি জানান মাওসি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ তাকে ভালো বলে উল্লেখ করেছে।
এরপরেও তিনি জোর দিয়ে বলেন যদি কোন রূপ অর্থ তসরূপের অভিযোগ প্রমাণিত হয় তবে তিনি পদত্যাগ করতে রাজি আছেন। এ ব্যাপারে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারফারুক আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন ভেড়ামারা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিষয়ে নানাবিধ অভিযোগ তার কানে এসেছে। এ বিষয়গুলো কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী অফিসারও অবহিত আছে বলে তিনি জানান।
মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আরো বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার তার কার্যালয়ে ডেকে পাঠাতে পারেন মর্মে আলোচনা হয়েছে। তবে তিনি আরো বলেন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের অধীনে নন। তিনি মাউশি উপ-পরিচালক খুলনা এর অধীনে। তাই আমরা ইচ্ছা থাকলেও তার বিরুদ্ধে কোন সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারি না। এদিকে এলাকার বিদ্যানুরাগী ও সচেতন মহল প্রধান শিক্ষকের এ সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে চরম আপত্তি তুলেছেন। আর সেই সাথে অবিলম্বে সকল দুর্নীতি তদন্ত দাবি করেছেন।
