আব্দুস সবুর ॥ বাংলাদেশের অন্যতম সীমান্তবর্তী উপজেলা কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা পাশেই ভেড়ামরা উপজেলা। এই ভেড়ামারা উপজেলার ৬ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা। ভেড়ামারা উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নধরমপুর, জুনিয়াদহ, বাহাদুরপুর, মোকারিমপুর, বাহিরচর, চাঁদগ্রাম ও ভেড়ামারা পৌরসভা। এর মধ্যে মাদকের স্পট ধরমপুর ইউনিয়নের কাজিহাটা বাজারের ছাই বাজার সংলগ্ন কাজিহাটা কলোনীপাড়া, সাতবাড়ীয়া বাজার এর পাশাপাশি সাতবাড়ীয়াতে ৩ টা অবৈধ বিড়ি ফ্যাক্টরী, জুনিয়াদহ ইউনিয়নের ১১ টি স্থানে মাদকের স্পট ও অবৈধ বিড়ি ফ্যাক্টরী ১০ এর অধিক, বাহাদুরপুর ইউনিয়ন এরিয়াতে প্রায় ৩৫ শতাংশ ঘরে ঘরে অবৈধ বিড়ি ফ্যাক্টরী ও প্রায় ১৩ টি মাদকের স্পট, মোকারিমপুর ইউনিয়নের সলেমন শাহ এর আস্তানা-গোলাপনগর-মহারাজপুর সহ প্রায় মানুষের বাড়িতেই অবৈধ বিড়ির ফ্যাক্টরি ও মাদকের স্পট প্রায় ২১ টি, চাঁদগ্রাম ইউনিয়নের প্রায় ৬ টি স্থানে মাদকের স্পট এছাড়া ভেড়ামারা পৌরসভার মধ্যে দক্ষিণ রেলগেইট-ফারাকপুর রেলগেট এরিয়া,ভেড়ামারা মহিলা কলেজপাড়া, নওদাপাড়া, কিলিকমোড় ভেড়ামারা বাজার সহ উল্লেখিত এরিয়াতে মাদকের স্পট।
গত দুইমাস প্রায় অবৈধ বিড়ি ও মাদক ব্যাবসায়ীদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে। তবে উল্লেখিত এলাকায় দেদারছে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের একাংশ। অনুসন্ধানে তথ্য পাওয়া যায় বিকেল ৪ টার পর হতেই ঠিক সন্ধ্যা পর ৭:৩০ ঘটিকা পর্যন্ত মাদক ব্যাবসায়ী ও সারারাতজুড়ে চলে অবৈধ বিড়ি ব্যাবসায়ীদের দৌরাত্ম্য। পার্শ্ববর্তী সীমান্ত এলাকা দৌলতপুরের বর্ডার এলাকা ভারতের তারকাটা হতে মাদক গাঁজা, ফেনসিডিল, টাপেন্টাডল ট্যাবলেট আমদানি সিন্ডিকেটের একাংশ দাপাদাপি করে নিষিদ্ধ মাদক আমদানির জন্য। আর আমদানিকারকদেরই একাংশ দৌলতপুর ও ভেড়ামারা এই দুই উপজেলা মিলে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জমজমাট করে ওপেন সিক্রেট ভাবে প্রস্তুত থাকে খুচরা বিক্রির জন্য। তবে ভেড়ামারাতে অবৈধ বিড়ি ও মাদক ব্যাবসায়ীদের দৌরাত্ম্যে স্থানীয় প্রশাসন দেখেও না দেখার মত করে চলছে। এরই মধ্যে গত শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা পর ভেড়ামারা উপজেলার চাঁদগ্রাম ইউনিয়নে মাদক উদ্ধারে যায় পুলিশ। সেখানে দুদু নামের এক ব্যাক্তি পালাতে গিয়ে নিহত হয়। তবে পরিবারের দাবী সে দুদু মাদক ব্যাবসায়ী না, চা দোকানদার। কিন্তু ভেড়ামারা থানা পুলিশ ও স্থানীয় কিছু সূত্রে জানাগেছে দুদু একজন মাদক ব্যাবসায়ী।
দুদুর এ মৃত্যুতে নানান প্রশ্ন জনমনে! উল্লেখ্য যে, ভেড়ামারা উপজেলার জুনিয়াদহ ইউনিয়নের কুচিয়ামোড়া পুলিশ ফাঁড়ী, তবে নেই কোনো পূর্বেরমত মাদক উদ্ধার, নেই কোনো মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান, নেই কোনো মাদক মামলা! মাঝে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর ভূমিকাতে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে ছিল উপজেলার মাদক ও অবৈধ বিড়ি ব্যবসা। তবে বর্তমানের চিত্রটা একেবারেই আলাদা, মাদক ও অবৈধ বিড়ি ফ্যাক্টরীর স্বর্গরাজ্য ও মাদক ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যের রাজ্য হিসেবে পরিণত হয়েছে কুষ্টিয়ার জেলার ভেড়ামারা উপজেলা। মাদক ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যে উপজেলা জুড়ে মাদকের বিষাক্ত ছোবলে খুব সমাজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সীর দিকে ধাবিত হচ্ছে। আর অবৈধ বিড়ি ব্যাবসার জন্য সরকার হারাচ্ছে রজস্ব। তবে উপজেলাতে এভাবে চলতে থাকলে মাদকের ভয়াবহতায় প্রতিটি পরিবার আক্রান্ত হবে বলে ধারণা করছেন ভেড়ামারা উপজেলা সু-সু-শীল সমাজের ব্যাক্তিবর্গ। এজন্য ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভেড়ামারা উপজেলার ধরমপুর, জুনিয়াদহ, বাহাদুরপুর, মোকারিমপুর,বাহিরচর,চাঁদগ্রাম ও ভেড়ামারা পৌরসভা এলাকার সু-শীল সমাজের অনেক ব্যাক্তিবর্গ মাদকের প্রবণতা বৃদ্ধির বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অতীতের তুলনায় বর্তমানে মাদকের প্রবণতা অনেকটা বেশি, স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রক্ষক যখন ভক্ষকের ভূমিকা পালন করে, সে ক্ষেত্রে মাদকের প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়াটাই স্বাভাবিক আর অবৈধ বিড়ি ব্যাবসায়ীদের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের অসচেতনতার কারনে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। উল্লেখিত বিষয়ে ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী মাদকের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ অভিযান অব্যাহত রয়েছে,আমি যোগদান করার পর-সে মাসে মাদক মামলা হয়েছে অনেক, তবে কতটি এই মুহুর্তে কাউন্ট করে বলাজাচ্ছেনা, গতকাল আড়াইকেজি গাঁজা উদ্ধার করে ১ টি মামলা হয়েছে, মাদকের বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্স তবে অবৈধ বিড়ির বিষয়ে আমি আসার পর বিশেষ আইনে ১ টি মামলা দিয়েছি। তবে আইন বিরোধী কাউকেই ছাড় দেওয়া হবেনা।
