কুষ্টিয়ার আদালতে মিথ্যা মামলার বাদী সোহাগকে নিয়ে রহস্যের ঘোর - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

কুষ্টিয়ার আদালতে মিথ্যা মামলার বাদী সোহাগকে নিয়ে রহস্যের ঘোর

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ১, ২০২৪

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দীর্ঘ ১৬ বছরের দুঃশাসন, নানা অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, দূর্নীতির প্রতিবাদে কোটা আন্দোলন ইস্যুকে কেন্দ্র করে স্বৈরাচারি শেখ হাসিনা সরকারের পতনের সাধারণ মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও নতুন এক সমস্যার মুখোমুখি কুষ্টিয়ার সাধারণ মানুষ। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সূত্র ধরে গড়ে উঠা সরকার পতনের আন্দোলনে দেশের আপামর জনগণ স্বতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহন করলেও একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের হাতে গোনা কয়েকজন বিপথগামী নেতার ইন্ধনে মামলা বাণিজ্যের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে।

গত ৫আগষ্ট স্বৈরাচারি সরকারের পতনের পর হাতে গোনা গুটিকয়েক ব্যক্তি নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের জন্য মামলার ভয় দেখিয়ে এবং নিরপরাধ মানুষকে মামলায় ফাঁসিয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব ঘটনায় জেলাজুড়ে এখন নানা আলোচনা ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সূত্র ধরে সরকার পতনের যে আন্দোলনের ফলে স্বৈরাচারি সরকার ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে সেই আন্দোলন কোন বিশেষ দল বা গোষ্ঠির নয়।

এই আন্দোলনে দেশের সর্বশ্রেণী পেশা, ধর্মের লোকজনের ব্যাপক অংশগ্রহনের মাধ্যমে গড়ে উঠেছিলো। অথচ একটি রাজনৈতিক দলের হাতে গোনা দুই একজন ব্যক্তি নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধার ও ব্যক্তিগত আক্রোশের কারনে নিরপরাধ অনেক মানুষকে মামলায় আসামী করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তিন জন নিহতের ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করতে কুষ্টিয়ার বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কুষ্টিয়া সদর আমলী আদালতে এজাহার দায়ের করেছেন মোঃ সোহাগ নামে এক ব্যক্তি।

যদিও আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে আজ রবিবার আদেশের জন্য কার্যতালিকায় রেখেছেন। তবে প্রশ্ন উঠেছে মিথ্যা মামলার বাদী কে এই সোহাগ? সদ্য সমাপ্ত কোটা সংস্কার আন্দোলনের সূত্র ধরে গড়ে উঠা সরকার পতনের আন্দোলনে মোঃ সোহাগ বা তার পরিবার, আত্বীয় স্বজনদের মধ্যে কে আহত বা নিহত হয়েছে? কেন তিনি আদালতে নিহত ছাত্র জনতার পক্ষে মামলার এজাহার দায়ের করেছেন? কি স্বার্থ তার? কে বা কারা তাকে এই মামলা করতে উৎসাহিত করেছেন? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে মিলেছে ভয়াবহ এক সিন্ডিকেটের তথ্য। সূত্র বলছে সদ্য সমাপ্ত কোটা সংস্কার আন্দোলনের সূত্র ধরে কুষ্টিয়ায় ৯ জন ছাত্র-জনতা নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে শতাধিকের বেশি।

অথচ আহত বা নিহতদের মধ্যে মোঃ সোহাগের পরিবার বা আত্বীয় স্বজনদের মধ্যে কেউ নাই। সোহাগের বাড়ি কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়া এলাকায়। তার পিতার নাম আবুল হাশেম। কুষ্টিয়ার বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কুষ্টিয়া সদর আমলী আদালতে এই সোহাগ যে এজাহার দায়ের করেছেন সেখানে উল্লেখ করেছেন, ০৫ আগস্ট ২০২৪ ইং তারিখে সারা বাংলাদেশে চলমান বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলন ও ছাত্র জনতার গণ সমাবেশ ঘটনাস্থল তথা কুষ্টিয়া মডেল থানাধীন থানার মোড় (৪ রাস্তার মোড়) হইতে ০৬ (ছয়) রাস্তার মোড়ের মাঝামাঝি স্থানে আন্দোলন চলাকালে ১) মোঃ উসামা (২৩) স্বস্তিপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার ছাত্র। ২) সেখ আহসানুল ইয়ামিন (২৬) জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, সাং- সুলতানপুর, কয়া, থানা-কুমারখালী, জেলা-কুষ্টিয়া ৩) মারুফ (২২) কুষ্টিয়া পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট এয় ছাত্র সাং-খোকসা সহ সহযোদ্ধা ছাত্ররা কুষ্টিয়া শহরের ৬ রাস্তার মোড় হইতে থানা মোড়ের দিকে মিছিল নিয়ে আসার সময় থানা মোড় ও ৬ রাস্তার মোড় এর মাঝামাঝি পৌঁছালে ১-১৭ নং আসামীর নির্দেশে ১৮-৬৭ নং আসামীগণ ও ‘অজ্ঞাত ৪০/৫০ জন আসামী তাহাদের হাতে থাকা আগ্নেয় অস্ত্র, লাঠি সোটা ও ধারাল চা পাতি দিয়া হত্যার উদ্দেশ্যে ভিকটিমগণ সহ মিছিলকারীদের উপর ধাওয়া করে।

তখন মিছিলকারীরা জান বাঁচানোর জন্য ৬ মোড়ের দিকে দৌড় দেয় এবং ৬ রাস্তার রাস্তার মোড়ের দিকে পৌঁছালেই উপরোক্ত এজাহার নামীয় সকল আসামী সহ ডিসিস্ট-ভিকটিম ওসামা (২৪), মারুফ (২৬) ও সেখ আহসানুল ইয়ামিন গণকে চতুর্দিক হইতে লাঠি সোটা, ধারাল চা-পাতি লোহার রড সহ অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আসামীগণ আঘাত করতে থাকে। উক্ত আঘাতে এবং উল্লেখিত আসামীদের এলোপাতারী গুলিতে ভিকটিমগণ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। সংঙ্গীয় স্বাক্ষীরা ভিকটিমগণকে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে লইয়া গেলে কর্তব্যরত ডাক্তারগণ ভিকটিমগণকে মৃত ঘোষণা করে। ঘটনার দিন হইতে থানার কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এবং আসামীদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করিয়া এবং ভিকটিমদের অন্যান্য আত্মীয় স্বজনদের সহিত আলোচনা করিয়া বিজ্ঞ আদালতে আসিয়া মামলা করিতে কিছুটা বিলম্ব হইল।

অথচ কোটা সংস্কার আন্দোলনের সূত্র ধরে স্বৈরাচারি সরকারের পতনের এই আন্দোলনে নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। স্বৈরাচারি সরকারের পতনের আন্দোলনে দেশের জন্য জীবন দেওয়া এসব শহীদদের নিয়ে মিথ্যা মামলা দায়েরের চেষ্টা শুধু শহীদদের অসম্মান করা নয়, প্রকৃত সত্যটাকে আড়াল করার অপচেষ্টা। কারন ৫ আগষ্ট ছয় রাস্তার মোড় থেকে থানার মোড়  পর্যন্ত এলাকায় যে সংঘর্ষ হয়েছে সেখানে আন্দোলনকারী ছাত্র জনতার সাথে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। হাজার হাজার ছাত্র জনতার উদ্দেশ্যে পুলিশ রাবার, বুলেট, টিয়ারশেলসহ ভারি অস্ত্র ব্যবহার করেছে।

এসময় যারা প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন তারা দাবি করেছেন, কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের এস আই মোস্তাফিজুর রহমান ও এস আই সাহেব আলীসহ পুলিশের ৫ থেকে ৬ জন বেপোরোয়াভাবে গুলিবর্ষন করে। এইসব গুলিতে ছাত্র জনতার হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। অথচ কুষ্টিয়ার বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কুষ্টিয়া সদর আমলী আদালতে দায়ের করা মামলার এজাহারে একজন পুলিশের নামও আসামীর তালিকায় নেই। ৫ তারিখে যারা চয় রাস্তার মোড় থেকে থানার মোড় এলাকায় আন্দোলনে অংশ নিয়েছে তারাও অনেকে দাবি করেছেন পুলিশের সন্ত্রাসী সুলভ আচরণের কারনে আন্দোলনকারীরা নিহত হয়েছে।

তারপরও এসব এলাকায় একাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে, সেগুলোর ফুটেজ সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করলে প্রকৃত সত্যটা বের হয়ে আসবে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়া তথ্য বলছে, স্বৈরাচারি হাসিনার পতন হলেও, তার দেখানো পথে হাঁটা শুরু করেছে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের হাতে গোনা কয়েকজন ব্যক্তি। ইতিমধ্যে কুষ্টিয়ার বিভিন্ন জায়গায় জোরপূর্বক বাড়ি দখল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল, চাঁদাবাজি, রাহাজানি, হত্যার মতো ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনার সাথে সরকার পতনের আন্দোলনে যারা জড়িত তাদের সম্পৃক্ততা না থাকলেও কতিপয় কয়েকজন ব্যক্তি নতুন করে স্বৈরাচারি আচরণ শুরু করেছে।

এসব ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে আবারও দেশে অরাজকতা তৈরির সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। কুষ্টিয়ার বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কুষ্টিয়া সদর আমলী আদালতে দায়ের করা এজাহারের বাদী মোঃ সোহাগের সাথে যোগাযোগ করা হলে এবং মামলা দায়েরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ব্যস্ততার অযুহাতে ফোন কেটে দেন। তার সাথে সরাসরি দেখা করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যাইনি।

তবে এসব মিথ্যা মামলা দায়ের ও বিভিন্ন জায়গায় জোরপূর্বক বাড়ি দখল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল, চাঁদাবাজি, রাহাজানি, হত্যার মতো ঘটনার বিষয়ে রাজনৈতিক দলের কয়েকজন নেতাকর্মীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তারাও সতত্যা স্বীকার করে বলছেন, কতিপয় কয়েকজন ব্যক্তি তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের জন্য এসব কাজের সাথে জড়ালে তাদের ব্যক্তিগত কর্মকান্ডের দায়ভার কোন দল নিবে না। ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় এই ধরনের ঘটনার সাথে যারা জড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

সচেতন মহলের দাবি, যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছে, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দমন নিপীড়নের সাথে জড়িত ছিলো তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু ছাত্র জনতার আন্দোলনের নিহত আহতদের নাম পরিচয় ব্যবহার করে গণহারে যে মামলা হয়েছে বা হচ্ছে এটা কোনভাবেই কাম্য নয়। কারণ এতে নিহত ও আহত ছাত্র জনতার খুনিদের রক্ষা করার পায়তারা হচ্ছে। এই আন্দোলন বাংলাদেশের পেক্ষাপটে একটি ইতিহাস। এই ইতিহাসকে বিৃকত করার চেষ্টায় যারা লিপ্ত তাদের বিরুদ্ধে প্রধান উপদেষ্টার কাছে কঠোর শাস্তির দাবির পাশাপাশি এদেরকে দমন করার দাবিও উঠেছে।