বিশেষ প্রতিনিধি ॥ স্ত্রীর দাবি নিয়ে শশুর বাড়িতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন ৪ নারী। গত ১৪ই জানুয়ারি রাতে জেলা শহরের ৬ রাস্তার মোড় জামে মসজিদ সংলগ্ন শিমুল ফার্মেসীর মালিক শামীমের বাড়িতে ঘটনাটি ঘটেছে। এ ঘটনায় শিমুল ফার্মেসীর মালিক শামীমের ছেলে রাফির স্ত্রীসহ তার ৩ নিকট আত্মীয় (উভয়েই নারী) গুরুত্বর আহত হন। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, গত ৯ বছর আগে জেলা শহরের সাদ্দাম বাজার এলাকার লীনা (ছদ্মনাম) নামের এক মেয়ের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন আসিফ মাহমুদ রাফি। রাফি জেলা শহরের ৬ রাস্তার মোড় এলাকার বাসিন্দা শামীমের ছেলে। বিয়ের আগে থেকেই রাফি মাদকাসক্ত ছিলেন। কিন্তু সেই তথ্য গোপন করে রাফি ও তার পরিবার। বিয়ের কিছু দিন পর রাফির আচার-আচরণে সন্দেহ হয় লীনার। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, রাফি দীর্ঘদিন যাবৎ বিভিন্ন ধরণের মাদক সেবন করে আসছে। ঐ পরিস্থিতিতে অনেকটাই হতভম্ব হয়ে যান লীনা। তারপরও রাফিকে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা শুরু করেন তিনি।
রাফিকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় ৯ বছরের সংসার জীবনে একাধিক বার শারীরিক নির্যাতনের হতে হয় লীনাকে। তবে মাদকাসক্ত রাফি কোনভাবেই সুস্থ জীবনে ফেরার চেষ্টা করেনি। ২ বার মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে দীর্ঘদিন ধরে আবাসিক চিকিৎসা নিয়েও সুস্থ জীবনে ফিরতে পারেনি রাফি। তারপরও হাল ছাড়েননি তিনি। আরো জানা যায়, গত কয়েক আগে রাফির বাবাও ২য় বিয়ে করেন। সেসময় রাফি আরো বেশি নেশাগ্রস্ত হয়ে যায়। তিনি ট্যাপেন্টাডল নামক ভয়ংকর মাদকে আসক্ত হয়ে পরে। এরপর থেকে প্রতিনিয়ত লীনার উপর শারীরিক মানসিক নির্যাতন শুরু করে। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে লীনা বাবার বাড়িতে ফিরে যান। এই ফাঁকে কয়েক দিনের মধ্যে রাফি শহরের কমলাপুর এলাকার এক মেয়ের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই লীনাকে তালাক নামা পাঠিয়ে দেন রাফি। প্রচলিত আইনে তালাকের ৩ মাস পর পুনরায় বিয়ে করার আইন থাকলেও সেটা মানেননি রাফি। তালাক নামা পাঠানোর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আবারো বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন রাফি। বিষয়টি জানার পর গত ১৪ই জানুয়ারি রাতে লীনা তার পরিবারের ৩ ফুফুকে নিয়ে শশুর বাড়িতে হাজির হন। সেসময় রাফি ও তার পরিবারের সদস্যরা মিলে আগত ৪ নারীকে বেজ বাটাম দিয়ে বেধড়ক মারধোর করে। এতে লীনা ও তার চাচীরা গুরুত্বর আহত হয়।
পরবর্তীতে উপস্থিত স্থানীয়দের সহায়তায় ঘটনাস্থল ত্যাগ করে সদর হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেয় আহতরা। এই সংবাদ লেখা পর্যন্ত জানা যায়, সার্বিক নিয়ে মামলার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন লীনা ও তার পরিবার। তবে এব্যাপারে মামলার আগ পর্যন্ত বিস্তারিত কোন কিছু জানাতে রাজি হননি তারা। এদিকে বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্ত আসিফ মাহমুদ রাফির সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং বলেন, তারা এসেছিল তবে তাদেরকে কোন মারধোর করা হয়নি। তার বাড়িতে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো আছে প্রয়োজন হলে আপনারা ফুটেজ দেখতে পারেন। এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবেদক ফুটেজটি চাইলে তিনি দেবেন বলে আর দিয়ে যাননি। স্ত্রীর দাবি নিয়ে শশুর বাড়িতে গিয়ে হামলার শিকার হন স্ত্রী সহ ৪ নারী। ঐ ঘটনায় পর অভিযুক্ত রাফির মাদকাসক্ত জীবন নিয়ে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য এসেছে প্রতিবেদকের হাতে। ভয়াবহ সেই দিনগুলোর অমানুষিক নির্যাতনের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন ভুক্তভোগী স্ত্রী লীনা (ছদ্মনাম)।
এর আগে, দৈনিক সময়ের কাগজ পত্রিকায় “স্ত্রীর অধিকারের দাবিতে শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে হামলার শিকার ৪ নারী” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ঐ সংবাদে বিশ্বস্ত সূত্রে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে উল্লেখ করা হয়, স্ত্রীর দাবি নিয়ে শশুর বাড়িতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন ৪ নারী। গত ১৪ই জানুয়ারি রাতে জেলা শহরের ৬ রাস্তার মোড় জামে মসজিদ সংলগ্ন শিমুল ফার্মেসীর মালিক শামীমের বাড়িতে ঘটনাটি ঘটেছে। এ ঘটনায় শিমুল ফার্মেসীর মালিক শামীমের ছেলে রাফির স্ত্রীসহ তার ৩ নিকট আত্মীয় (উভয়েই নারী) গুরুত্বর আহত হন। ১৪ই জানুয়ারি রাফির বাড়িতে হামলার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ভুক্তভোগী ঐ স্ত্রী জানান, ২০১৬ সালে ভালোবেসে রাফির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। ৯ বছরের সংসার জীবনে একাধিকবার অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তিনি। তারপরও তাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা কখনোই ভাবেননি। সবশেষ যখন তিনি রাগ করে আত্মীয়ের বাসায় চলে যান সেসময়ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন তিনি। বার বার চেষ্টা করেও রাব্বিকে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়ে তার থেকে কিছুদিন দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু রাফি গত কিছুদিন আগে তার বাড়িতে ডিভোর্স লেটার পাঠায়।
৩ মাস পার হওয়ার আগেই আবার বিয়ে করেছেন তিনি। বিষয়টি জানার পর রাফির বাড়িতে গেলেও ওদের ফ্ল্যাটে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বাইরে থেকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও মারধোর করে তাদেরকে বের করে দেওয়া হয়। ভুক্তভোগী ঐ নারী (রাফির স্ত্রী) আরো বলেন- ফেন্সিডিল, ইয়াবা, ট্যাপেন্টা সহ সব ধরনের মাদক সেবন করতো রাফি। যখন রেগুলার ইয়াবা সেবন করতো তখন দিনরাত না ঘুমিয়ে উগ্র হয়ে যায় রাফি। যখন তখন কারণে অকারণে আমাকে মারধোর করতো। বিষয়টি আমি টের পাওয়ার পর ইয়াবা ছেড়ে কাশির সিরাপের মধ্যে কি একটা ট্যাবলেট মিশিয়ে সেবন করতো রাফি। সেসময় সারাদিন ঘুম ঘুম মুডে থাকতো সে। অনেক সময় সারাদিন ঘুমাতো। নেশাগ্রস্ত হওয়ার কারণে ওর মা ও আমার অনেক সোনার গহনা চুরি করে বিক্রি করতো রাফি। ঐ টাকা দিয়ে মাদক কিনতো। এমনকি আমার আমেরিকা প্রবাসী মামা দেশে আসলে তার ব্যাগ থেকে ডলার চুরি করেছিল রাফি। আমি আর রাফি ঢাকায় একই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম। ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিষ্টার ফি সহ ফরম ফিলাপ এবং বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ফি’র টাকা বাড়ির থেকে নিয়ে নেশার পিছনে খরচ করতো। ও সেমিষ্টার ড্রপ দাওয়াই আমিও সেমিস্টার ড্রপ দি। যাতে করে অন্তত ওকে পাশ করানো যায়। অনেক চেষ্টা করেও তাকে ভালো করতে পারেনি। এব্যাপারে অভিযুক্ত রাফির সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ভুক্তভোগী ঐ নারীর (রাবির স্ত্রী) বিস্তারিত বক্তব্য সহ সংবাদটি দেখতে চোখ রাখুন পরবর্তী পর্বে।
