কুষ্টিয়ায় শেখ হাসিনা এবং সাবেক দুই এমপি সহ ৬৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

কুষ্টিয়ায় শেখ হাসিনা এবং সাবেক দুই এমপি সহ ৬৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: অক্টোবর ১১, ২০২৪

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ২০১৮ সালে কুষ্টিয়া আদালত চত্বরে আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল  বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) দুপুর ১টার দিকে মাহমুদুর রহমান বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (৭৭), সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল (৭৪), কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ (৬৫), কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু (৭৭), পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী (৬৩), কুষ্টিয়ার সাবেক পুলিশ সুপার এস.এম মেহেদী হাসানকে নির্দেশদাতা হিসেবে আসামি করা হয়েছে।

অন্য আসামিরা হলেন-কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান, কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা, কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সাত্তার, কুষ্টিয়া সদর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দিন, কুষ্টিয়া আদালতের সাবেক কোর্ট ইন্সপেক্টর মনিরুজ্জামান, কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইয়াছির আরাফাত তুষার, কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাদ আহমেদ, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব, কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সজীব শেখ, কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেদওয়ান রনি, কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল ইসলাম সুইট, কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য লাম, ছাত্রলীগ নেতা শশী, রাজারহাট এলাকার রবিউল ইসলামের ছেলে রাকিব, কুষ্টিয়া সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য সচিব জয়নাল আবেদীন, কুষ্টিয়া জেলা যুবলীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম, কুষ্টিয়া জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল ইসলাম স্বপন, কুষ্টিয়া সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আবু তৈয়ব বাদশা, কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মীর অভি, কুষ্টিয়া পৌর ৭ নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শিমুল, জুগিয়া সবজি ফার্ম এলাকার মামুনুর রশিদ’র ছেলে মাহমুদ হাসান, কোর্টপাড়া এলাকার কাওসের মোল্লা’র ছেলে জীবন মাহমুদ ডাবলু, শহর যুবলীগের আহ্বায়ক হাসিব কোরাইশী, ছাত্রলীগ নেতা অভি, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ সাংগঠনিক সম্পাদক ফেরদৌস খন্দকার, ছাত্রলীগ নেতা সোহাগ, ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম হোসেন, নলকোলা এলাকার শামসুল আলমের ছেলে রাসেল, কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান অনিক, ছাত্রলীগ নেতা শামিম রুমী, কুমারখালী উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের মনেব্বর’র ছেলে সবুজ, দৌলতপুর উপজেলার ডাংমড়কা গ্রামের নাহারুল ইসলাম’র ছেলে ফিরোজ কায়সার, ইমরান হোসেন দোলন, অনুপ কুমার নন্দী (সাবেক পিপি), জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মানব চাকি, সাবেক ছাত্র লীগ নেতা ইমরান পারভেজ রাসেল, রাকিব আহাম্মেদ, কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজিব আহাম্মদ, কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি বাধন, কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য মাখন, কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সুজন, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সদস্য অনন্ত। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের অজ্ঞাত ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা দায়েরের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কুষ্টিয়া আদালত প্রাঙ্গণে আমার ওপর হামলার ঘটনায় করা মামলার প্রধান আসামি ফ্যাসিবাদী হাসিনা। পলাতক ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে ভারত থেকে দেশে এনে বিচার করতে হবে। দ্রুত মামলার তদন্ত শুরু করতে হবে। ইন্টারপোলের মাধ্যমে ভারত থেকে তাকেসহ বিদেশ থাকা আসামিদের গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশে নিয়ে এসে বিচার করতে হবে। আমি যেন ন্যায়বিচার পাই। যেসব আসামি বাংলাদেশে পলাতক আছে তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা ফ্যাসিবাদী আচরণ করবেন না। ফ্যাসিবাদী আচরণ করে কেউ রক্ষা পায় না। সেটা শেখ হাসিনার পলায়ন ও পতনের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। অগণিত শহীদের রক্তের মাধ্যমে আজকে বাংলাদেশের মানুষের অধিকার ফিরে এসেছে। এই অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আমাদেরকে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যাতে করে আর কোনোদিন বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ ফিরে না আসে। তিনি আরো বলেন, এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে মাহমুদুর রহমান বলেন, কুষ্টিয়া আদালত প্রাঙ্গণে আমার ওপর হামলার ঘটনায় থানায় মামলা করেছি। বাংলাদেশে যেন আর কোনোদিন শেখ হাসিনার মতো আরেকটা ফ্যাসিবাদ না হয়। তার জন্য উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। যাতে বাংলাদেশের গণমানুষের অধিকার, বাকস্বাধীনতা, আদালতের মর্যাদা রক্ষা পায়। এ কারণেই আজ আমি মামলা করেছি। পরে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব আয়োজিত সংবর্ধনা সভায় যোগ দেন মাহমুদুর রহমান।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এএম জুবায়েদ রিপন, সভাপতি আল মামুন সাগর, টিভি জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আনিসুজ্জামান ডাবলু, সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামীম উল হাসান অপু, জেলা জামায়াত আমির অধ্যাপক আবুল হাসেম, দৈনিক কৃষি কন্ঠ ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আবু মনি সাকলায়েন (এলিন), দৈনিক খবরওয়ালা বার্তা সম্পাদক আমিন হাসান প্রমুখ। সেখান থেকে বেরিয়ে কুমারখালী উপজেলার কয়া গ্রামে বুয়েটের মেধাবী ছাত্র ছাত্রলীগের হামলায় নিহত আবরার ফাহাদের বাসায় যান আমার দেশ সম্পাদক।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান বলেন, মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মামলা দায়ের করার পর মাহমুদুর রহমান হামলার ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২২ জুলাই বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কুষ্টিয়ার একটি আদালত থেকে মানহানির মামলায় জামিন নিয়ে বের হওয়ার সময় মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলা হয়। আদালত প্রাঙ্গণ ছাড়ার সময় লাঠি ও ইটের আঘাতে তিনি আহত হন। তাকে বহনকারী গাড়ির গ্লাসও ভেঙে ফেলা হয়।

পরে বিকেল ৫টার দিকে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে মাহমুদুর রহমান ও তার সহযোগীরা ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক সম্পর্কে মানহানিকর বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইয়াসির আরাফাত তুষার মামলাটি করেন। ওই মামলায় জামিন নিতে কুষ্টিয়া আদালতে গিয়েছিলেন তিনি। সেদিন কুষ্টিয়ায় দায়ের হওয়া মানহানির মামলায় মাহমুদুর রহমানের জামিন মঞ্জুর করেন আদালত। কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক এম এম মোর্শেদ ১০ হাজার টাকা জামানতে স্থায়ীভাবে তার জামিন মঞ্জুর করেন।

জামিন পাওয়ার পর দুপুর ১টা থেকে বিক্ষুব্ধ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আদালত চত্বরে মাহমুদুর রহমানকে অবরুদ্ধ করে রাখেন এবং বিক্ষোভ মিছিল করেন। জামিন মঞ্জুর করার কিছুক্ষণের মধ্যেই তার ওপর হামলা চালানো হয়। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আগে থেকে আদালত চত্বরে অবস্থান নেন। জামিন মঞ্জুরের পর তারা মাহমুদুর রহমানকে আদালতের একটি কক্ষে অবরুদ্ধ করে ফেলেন। একপর্যায়ে সেখান থেকে বেরিয়ে তিনি নিজের গাড়িতে ওঠার চেষ্টা করেন। এ সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। এতে রক্তাক্ত হন মাহমুদুর রহমান।