কুষ্টিয়ায় শত শত বিঘা জমিতে চাষ হচ্ছে বিষাক্ত তামাক - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

কুষ্টিয়ায় শত শত বিঘা জমিতে চাষ হচ্ছে বিষাক্ত তামাক

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: মে ৮, ২০২৪

রঞ্জুউর রহমান ॥ আমরা এতোদিন শুনেছি,মুক্ত পাখিকে আটকে রাখার জন্য লোহার খাঁচা ব্যবহার হতো কিন্তু শত শত উর্বর জমি  লোহার খাঁচায় আটকে রেখে নজির  স্থাপন করলো ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো কোম্পানি যা একটি দেশ, জাতি ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ। যেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারংবার বলে আসছে দেশের এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে এবং ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দেন। সেই সময় ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো কোম্পানি কুষ্টিয়া মিরপুর থানা সাতবাড়িয়া মাঠের কিছু জমি লিজ নিয়ে তারের বেষ্টনী দেয়। চাষীদের কাছ থেকে সুকৌশলে জমি লিজ নিয়ে ফসলি জমিতে স্থাপনা নির্মাণ ও লোহার তারের বেষ্টনে দিয়ে ঘিরে রেখেছে।যেখানে সরকার বারবার তাগিত দিচ্ছে কৃষি জমির যথার্থ ব্যবহারে সেখানে ইঅঞ কোম্পানি চাষের শত শত বিঘা জমি  নিয়ে  বিষাক্ত তামাকের নতুন জাত উদ্ভাবনের কাজ করছে। এতে সেই মাঠের অন্যান্য চাষীদের তামাক বাদে অন্যান্য ফসল চাষ ও জমিতে পানির সেচ কাজ ব্যাহত হচ্ছে ফলে চাষী বাধ্যতামূলক তামাক চাষ করতে হচ্ছে।

 

এই বিষাক্ত তামাক চাষে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপদ খাদ্য হুমকির মুখে পড়ছে। ফসলের মাঠকে তারের বেস্ট দিয়ে ঘিরে রাখায় সাধারণ কৃষকদের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে নানা বিতর্ক। দিন দিন ফসলের জমি কমছে সেখানে ব্রিটিশ আমেরিকান জমি লিজ নিয়ে তামাক উৎপাদন কতটুকু যৌক্তিক। বিগত বছরগুলিতে খাদ্যশস্যের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেলেও প্রায় প্রতি বছরই ঘাটতি পূরণের জন্য বিদেশ থেকে খাদ্যশস্য আমদানী করতে হয়। প্রতি বছর জনসংখ্যা বাড়ছে প্রায় ২৫ লক্ষের বেশি, বাড়তি প্রয়োজনীয় খাদ্যের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৪.৫ লক্ষ টন। চাষযোগ্য জমির অপরিকল্পিত বা যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে ভূমির উৎপাদিকা শক্তি ক্রমশই হ্রাস পাচ্ছে। এদেশে কৃষিভূমি শুধু কৃষিখাতে বা খাদ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত হচ্ছে তা নয়। পরিকল্পনা কমিশনের এক হিসাব অনুযায়ী পল্লীঅঞ্চলে বিগত ৮০-র দশকে যে ভূমির প্রায় ১৫ ভাগ কৃষক/গ্রামবাসীদের বসতবাটি ও অকৃষিকাজে ব্যবহৃত হতো বর্তমানে তা প্রায় ৩০ ভাগে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া নগরায়ণ, শিল্পায়ন, আবাসন, রাস্তাঘাট ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ ইত্যাদি খাতেও অনেক জমি ব্যবহৃত হওয়ায় কৃষিজমির পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। জাতীয় ভূমি ব্যবহারের নীতিমালা ২০০১ এর ৫. কৃষি উৎপাদন, উন্নয়নমূলক অথবা অন্য কোন কাজে ভূমি অধিগ্রহণের সময় অবশ্য প্রয়োজনীয় ভূমির পরিমাণ নির্ধারণের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাবধানতা বহু কেইসেই অবলম্বন করা হয় নাই। ফলে বিপুল পরিমাণ উর্বর জমি কৃষিকাজের অযোগ্য ও আওতা-বর্হিভূত হয়ে গেছে। অধিগৃহীত ভূমির অপরিকল্পিত ব্যবহার ও অপব্যবহার দুই-ই চলছে। বিভিন্ন সময়ে অধিগৃহীত বিপুল পরিমাণ কৃষি ভূমির প্রায় ২৫ ভাগ বর্তমানে অব্যবহৃত অবস্থায় আছে কিংবা অনুৎপাদনশীল কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। ভূমির এ ধরনের অপব্যবহার বা অপচয় রোধ করা একান্ত প্রয়োজন। কৃষিভূমি সাধারণভাবে ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তি হলেও এর ব্যবহার সার্বিক জাতীয় ও সামাজিক প্রয়োজনীয়তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশের অধিকাংশ কৃষকই ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক। এর একটি বিরাট অংশ বর্গাচাষী। এসব ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীদের স্বার্থ সংরক্ষণের প্রশ্নটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। ভূমির ব্যবহার এমনভাবে হওয়া প্রয়োজন যাতে ভবিষ্যতে এরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত কৃষিজমির সার্বিক পরিমাণ বিভিন্ন কারণে উদ্বেগজনকভাবে হ্রাস পাওয়ার বর্তমান ধারা প্রতিহত করতে হবে।জাতীয় কৃষিনীতিতে ফসল উৎপাদনের জন্য জমির সর্বোত্তম ব্যবহারের লক্ষ্যে যে সব পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলা হয়েছে সেগুলো যথাযথভাবে পালন করতে হবে। ভূগর্ভস্থ পানির প্রাপ্যতার নিরিখে সেচযোগ্য জমির আয়তন নির্ধারণ করা জরুরী। এতে একদিকে যেমন মরুকরণ-প্রক্রিয়া কিছুটা হলেও প্রতিহত হবে অন্যদিকে পানির মত একটি মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা যাবে। সেচযোগ্য কৃষিজমির অধিগ্রহণ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে। উর্বর কৃষিজমি যেখানে বর্তমানে দুই বা ততোধিক ফসল ফলে বা এমন জমি যা এরূপ ফসল উৎপাদনের জন্য সম্ভাবনাময়, তা কোনক্রমেই অকৃষিকাজের জন্য যেমন ব্যক্তিমালিকানাধীন নির্মাণ, গৃহায়ণ, ইটের ভাটা তৈরী ইত্যাদির জন্য ব্যবহার করা যাবে না। অকৃষিখাতে উন্নয়নমূলক কাজে ভূমির প্রয়োজন হলে এবং তার জন্য অকৃষি খাস জমি পাওয়া গেলে খাস জমি ব্যবহারকে প্রাধান্য দিতে হবে। একেবারেই বিকল্প ব্যবস্থা না থাকলে ন্যূনতম পরিমাণ অপেক্ষাকৃত অনুর্বর জমি হুকুম দখল করা যেতে পারে। সাতবাড়ী এলাকার চাষীরা বলেন, গত বছর এই মাঠে নানান ধরনের খাদ্যশস্য উৎপন্ন হয়েছে। কিন্তু ব্রিটিশ আমেরিকান কোম্পানি এই এই জমি লিজ নিয়ে একবার তামাক উৎপাদন  করেছে পরে দীর্ঘদিন ধরে ফেলে রাখে। এতে জমির যথার্থ ব্যবহার হচ্ছে না। তার এর বেষ্টনে দিয়ে ঘিরে রাখার ফলে পাশের জমের চাষিরা অন্য কোন ফসল ফলাতে পারছে না। নওয়াপার এলাকার চাষী মোঃ সিরাজ বলেন,মাঠের মাঝখানে তারের বেষ্টনীতে ঘিরে রাখায় আমাদের ফসল চাষের সমস্যা হচ্ছে। কোম্পানি জমি লিজ নিয়ে এভাবে তারের বেষ্টনী দিয়ে  যে জমি ঘিরে রাখবে তা আমরা জানতাম না। কোম্পানির এমন পদক্ষেপের কারণে আমাদের মাঠের ফসল উৎপাদনের জন্য যে পরিবেশ ছিল তা সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা চাই এই অবস্থার দ্রুত অবসান হোক। মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ  আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন বলেন, ফসলি জমিতে অবোকাঠামো নির্মাণের কোন সুযোগ নেই। ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাক সাতবাড়িয়া ফসলের মাঠে কতটুকু অবোকাঠ নির্মাণ করেছে এ ব্যাপারে আমরা অবগত নয়। এ বিষয়ে যদি কোন চাষীর সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাই  তাহলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিরপুর বিবি করিমুন্নেছা ফসলের জমিতে স্থাপনার নির্মাণ ও খোলা লোহার তারের বেষ্টনে দিয়ে ফসলের ঘিরে খাদ্যশস্য উৎপাদন বন্ধ করে তামাক চাষে বিষয়ে জানতে  চাইলে তিনি এই বিষয়ে কোন বক্তব্য দিবেন না বলে জানান।