কুষ্টিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ইউসুফ শেখ - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

কুষ্টিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ইউসুফ শেখ

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: আগস্ট ২২, ২০২৪

নিজ সংবাদ ॥ সরকারি হাসপাতালে চাকরি করতেন ইউসুফ শেখ। তবে ছিল না বেতনের ব্যবস্থা। আয়ের রাস্তা ছিল সেবাগ্রহীতাদের টিপস। চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানটির ব্লাড ব্যাংকে কাজ করার সময় গ্রাহকরা খুশি হয়ে যা দিতেন তা-ই ছিল তাঁর উপার্জন। এতে কোনোরকমে খেয়েপরে বাঁচার ব্যবস্থা হয়েছিল। কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়ার বস্তিতে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে স্ত্রীসহ গুঁজেছিলেন মাথা। সেই ঘরে এখন শুধু কান্না-আহাজারি চলছে।

কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন গত ৫ আগস্টের আন্দোলনে স্বামী হারিয়ে নিঃস্ব ফাতেমা খাতুন। নিহতের স্ত্রী বলেন, ‘শেখ হাসিনার পতনের দিন গুলি ও মারধরে গুরুতর আহত হয়েছিলেন ইউসুফ। তাঁকে উদ্ধার করে তাঁরই কর্মস্থল কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যায় তাঁর মৃত্যু হয়। তখন ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাঁর লাশ বাড়িতে এনে দাফন করা হয়। তবে শরীরে ছররা গুলি ও বড় গুলি পাওয়া গেছে। এ ছাড়া দেহের বিভিন্ন স্থানে মারধর ও কোঁপানোর চিহ্ন ছিল।

তিনি জানান, তাদের সংসারে একমাত্র সন্তান সীমা খাতুন। তাঁকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। একই বস্তিতে পার্শ্ববর্তী একটি ঘর ভাড়া নিয়ে সংসার চলছে মেয়ের। তাঁর স্বামী রিকশা চালান। এতে তাদের দিন টেনেটুনে চলে যায়। নিহতের মেয়ে সীমা বলেন, ‘বাবার চাকরি সরকারি প্রতিষ্ঠানে হলেও কোনো বেতন ছিল না। মানুষ যা দিত তাতেই সংসার চলত। মা-ও অসুস্থ। বাবার শোকে তিনি আরও ভেঙে পড়েছেন। নিয়মিত ওষুধপথ্য চালিয়ে যেতে না পারলে তিনিও হয়তো বিছানায় পড়ে যাবেন।

আমাদের সংসারও সচ্ছল না, নইলে মায়ের জন্য কিছু করতে পারতাম। বাবার মৃত্যুতে দুঃখের সাগরে ডুবে গেছেন মা। কে তাঁর ভরণপোষণ করবে। চিকিৎসাপাতির খরচই-বা কে চালাবে! সরকার কোনো ব্যবস্থা করলে দুমুঠো খেয়ে ও পরে বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে পারতেন মা। একই সঙ্গে বাবার হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ইতোমধ্যে আমরা ৭৬ জনের নামে মামলা করেছি। আসামিদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী।

নিহতের স্ত্রী ফাতেমা বলেন, ‘বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে কিছু অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তা দিয়ে হয়তো কিছুদিন চলা যাবে। এরপরে কোথায় গিয়ে দাঁড়াব, কার কাছে হাত পাতব? স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা করলে নিশ্চিন্তে থাকতে পারতাম।’ জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার বলেন, ‘হাসিনা পতন আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের পরিবারকে আমাদের নেতা তারেক রহমানের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। আমরা প্রতি মাসে তাদের সহযোগিতা করব বলে ঠিক করেছি। তারা দেশের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছে, আমরা তাদের পাশে আছি সব সময়।’ কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, ৫ তারিখের সংঘর্ষে নিহত হউসুফের মেয়ে সীমা ৭৬ জনের নামে মামলা করেছেন। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।