কুষ্টিয়ায় পিএইচডি করতে এসে লালন দর্শনে দীক্ষা - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

কুষ্টিয়ায় পিএইচডি করতে এসে লালন দর্শনে দীক্ষা 

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: ডিসেম্বর ২৫, ২০২৪

দৌলতপুর প্রতিনিধি ॥ ২০১৬ সালে লালন দর্শনে মুগ্ধ হয়ে বাড়ি না ফেরা প্যারিসের মেয়ে দেবোরাহ কিউকারম্যান এবার স্বামী রাজন ফকিরকে নিয়ে ফকির গুরু নহির শাহ্ এর নির্দেশে খেলাফত গ্রহণ করেছেন। ইহজাগতিক লোভ, লালসা, মায়া-মমতা ও মোহ ত্যাগ করে জীবিত থেকেই গ্রহণ করলেন মরণের স্বাদ। তাদের এই খেলাফত গ্রহণ উপলক্ষে হেম আশ্রমে ২দিন ব্যাপী সাধুসঙ্গ অনুষ্ঠানে আগমন ঘটেছিল হাজারো সাধু গুরু বাউল এবং লালন অনুসারীদের। গত সোমবার (২৩ ডিসেম্বর ) দেশের নানা প্রান্ত থেকে লালন ভক্ত, বাউল, সাধুগণ হেম আশ্রমে জড়ো হন। রাত ৯টায় মুড়ি সেবার পর শুরু হয় সাধুসঙ্গ অনুষ্ঠান। গতকাল মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর ) বেলা ১১টায় নিজেদের দীনহীন করে শুধুমাত্র সাদা কাফনের কয়েক টুকরো কাপড় পরিধান করে দেবোরা ও তার স্বামী রাজন কুষ্টিয়া দৌলতপুর উপজেলার প্রাগপুর দীঘিরপাড় এলাকায় ‘হেম আশ্রমে’ অনুষ্ঠানিকভাবে খিলকা পরিয়ে গুরু দীক্ষায় দীক্ষিত হয়ে খেলাফত গ্রহণ করেছেন।

এ সময় উপস্থিত পরিবারের সদস্য, বাউল সাধু ও দর্শকদের কান্নায় সেখানকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে। চোখ বেঁধে সাতপাক ঘুরিয়ে দীনহীন করে তাদের গুরু দীক্ষায় দীক্ষিত করা হয়। পরানো হয় শুভ্র ভূষণ। এর আগ মুহূর্তে দেবোরাহ তার অভিব্যক্তিতে বলেন, ‘দীর্ঘ দিনের লালন দর্শনের জ্ঞান সাধনায় চলার পথে কারো কাছে অপরাধ করে থাকলে, কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকলে সকলে দয়াকরে নিজ গুনে ক্ষমা করে দেয়ার অনুরোধ করছি। এ দেশে (বাংলাদেশে) আছি মনে করবেন আমি আপনাদের। আমার আর কোন ঠিকানা নাই, কোন ভবিষ্যত নাই। নিজের মনকে শুদ্ধ করতে গেলে পরিবেশকে শুদ্ধ করতে হয়। অনুষ্ঠানে আগত হৃদয় ফকির বলেন, সাধুগুরু ফকির নহির শাহ্ এর সান্নিধ্যে দীর্ঘ দিনের লালন দর্শন সাধনায় দেবোরাহ জান্নাত ও তার স্বামী রাজন খেলাফত/ খিলকা অর্জন করলেন। ইহজাগতিক লোভ, লালসা, মায়া-মমতা ও মোহ ত্যাগ করে দু’জনের খেলাফত প্রাপ্তির মাধ্যমে লালন দর্শনের আরো বিস্তৃতি ঘটবে। খেলাফত গ্রহনের বিষয়ে গুরু ফকির নহির শাহ্ বলেন, লালন সাধনায় একজন ভক্তকে চারটি স্তর পার করতে হয়। সিদ্ধ হওয়া তথা পরিপূর্ণ আদর্শের অধিকারী হলেই কেবল একজন ভক্তকে খেলাফত প্রদান করা হয়। যারা খিলকা

গ্রহন করেন তাদের সকল প্রকার অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত না হওয়ার জন্য শপথ পাঠ করানো হয়। ২০১৭ সালে লালনের তিরোধান দিবসে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার রাজন ফকিরকে বিয়ে করেন দেবোরাহ। রাজন ফকির উপজেলার প্রাগপুর ইউনিয়নের দীঘিরপাড় এলাকার ফকির গুরু নহির শাহ ভাতিজা ও শিষ্য। এখন জায়গাটি ‘হেম আশ্রম’ নামেই পরিচিত। ফরাসি দেশের রাজধানী প্যারিসের ফ্রান্সিস ও লিন্ডা কুকিয়েরমানের মেয়ে তিনি। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সবার বড়। ২০০৭ সালে লন্ডন কিংস্টোন ইউনিভার্সিটি থেকে নৃতত্ত্বে স্নাতক। দেশে থাকাকালীন ফরাসি থেকে ইংরেজিতে অনুবাদের কাজও করতেন। দর্শনে এমএ করে ফ্রান্সে একসময় যোগের শিক্ষকতাও করেছেন তিনি।অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশিষ্ট লালন গবেষক সাইমন জাকারিয়া বলেন, একজন বিদেশি হয়েও যুগল হিসেবে দেবোরাহ ত্যাগ-তিতিক্ষা, কাম, ক্রোধ লোভ নিয়ন্ত্রন করে যোগ্য হয়ে উঠেন। লালনদর্শনের করণ-কারণ সাধনার যে দীক্ষাগুলো আছে তা তিনি সুন্দরভাবে অর্জন করতে পেরেছেন বলেই সাধুগুরু তাকে খেলাফত দিয়েছেন। দেশের ইতিহাসে তিনিই প্রথম বারের মত যিনি ভিনদেশি হিসেবে লালনপন্থায় দীক্ষা নিয়ে খেলাফত অর্জন করছেন।