কুষ্টিয়ায় পাটের চাষ করে লোকসানের মুখে পড়েছেন কৃষকরা - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

কুষ্টিয়ায় পাটের চাষ করে লোকসানের মুখে পড়েছেন কৃষকরা

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৪

নিজ সংবাদ ॥ কুষ্টিয়ায় চলতি মৌসুমে পাটের চাষ করে লোকসানের মুখে পড়েছেন কৃষকরা। বাজারে পাটের যে দর, তাতে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। গত মৌসুমেও পাটের  কাঙ্ক্ষিত দাম পাননি। গতবারের মতো লোকসানের মুখে এবারও দুশ্চিন্তায় চাষিরা। পাট বিক্রি করে খরচের টাকা উঠছে না। এতে প্রতি বিঘা পাট চাষে লোকসান হচ্ছে ৩ থেকে ৬ হাজার টাকা। তাই সরকারের কাছে পাটের দাম বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন চাষিরা। কুষ্টিয়ার বিভিন্ন উপজেলার কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুষ্টিয়ায় পাট চাষে আগের তুলনায় এবার খরচ বেড়েছে।

মজুরির ব্যয়, সার, কীটনাশক ও বীজসহ চাষাবাদের খরচ বেড়েছে। সব মিলিয়ে প্রতি বিঘা পাটের উৎপাদন খরচ প্রায় ১৫ হাজার  থেকে ১৮ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় পাট উৎপাদন হচ্ছে ৫ থেকে ৬ মণ। এক মণ পাট বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার থেকে দুই হাজার ২০০ টাকায়। এতে প্রতি বিঘা পাট চাষে লোকসান হচ্ছে ৩ থেকে ৬ হাজার টাকা। লোকসানে পড়া পাট চাষিরা বলেন, সার, বিষ, মজুরির ব্যয়, জমি লিজ খরচ সহ সবকিছুর দাম বাড়ে।

কিন্তু পাটের দাম বাড়ে না। পাট চাষের খরচ বেড়েছে, ফলনও তুলনামূলক কম। এতে লোকসানে পড়েছেন পাট চাষিরা। জেলা কৃষি অফিস ও জেলা মুখ্য পাট পরিদর্শকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে কুষ্টিয়া জেলায় প্রায় ৩৫ হাজার ১৮৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। গত বছরে ৩৭ হাজার ৭৪২ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছিল। জেলায় এ বছর পাট চাষ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ হাজার ৬১৫ হেক্টর কম চাষ হয়েছে। পাট উৎপাদনের ফলন ধরা হয়েছে ৯২ হাজার ৮৮৮ মেট্রিক টন। ফলনের লক্ষ্যমাত্রা প্রতি বিঘায় ৮ মণ ধরা হলেও ফলন হচ্ছে ৫ মণ থেকে ৬ মণ।

মিরপুর উপজেলার কৃষক সুজাত আলী বলেন, আমার এক বিঘা জমিতে পাটের বীজ, সার, কীটনাশক, মজুরির ব্যয়, লিজ খরচ ও পুকুর ভাড়া দিয়ে মোট খরচ হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার টাকা। পাট উৎপাদন হয়েছে ৫ মণ। দুই হাজার টাকা দরে ৫ মণ পাট বিক্রি করে ১০ হাজার টাকা হয়েছে। আমার ৬ হাজার টাকা লোকসান। পাট চাষের খরচ বেড়েছে, কিন্তু দাম বাড়েনি। এজন্য আমার মতো সকল পাট চাষির লোকসান হচ্ছে। পাটের দাম বৃদ্ধির দাবি জানাচ্ছি। যে ফসলে লোকসান, সেই ফসল উৎপাদন বন্ধ করে দিবে কৃষক। পাট চাষে লাভবান না হওয়ায়, চাষিরা পাট চাষ কমিয়ে দিয়েছে।

পাটের দাম না বাড়লে আমিও আর পাট চাষ করবো না। দৌলতপুর উপজেলার শেরপুর গ্রামের পাট চাষি আব্দুল আলীম বলেন, পাট চাষ করে আমাদের পোষাচ্ছে না। গত বছর লোকসান হয়েছে, এবারও লোকসানে পড়েছি। পাটের দাম খুব কম। আমার মতো প্রায় সকল পাট চাষির লোকসান হচ্ছে। বাজারে ২০০০ থেকে ২১০০ টাকা মণ পাট বিক্রি হচ্ছে। এবার পাটের চাহিদাও কম। ব্যবসায়ীরা পাটের প্রতি তেমন আগ্রহী না।

পাট চাষিদের প্রতি সরকার নজর দিক, দাম বৃদ্ধি করে দিক। লোকসানের ঝুঁকি নিয়ে আগামীতে অনেকেই পাট চাষ করা বন্ধ করে দিবে। কারণ, গত বছরে লোকসানে পড়া অনেক কৃষক এবার পাট চাষ করেনি। দাম না বাড়লে, আমিও আগামীতে পাট চাষ করবো না। হাবিবুর রহমান সহ কয়েকজন পাট ব্যবসায়ী বলেন, পাট চাষি ও ব্যাবসায়ীরা ভালো নেই। পুরাতন পাট  গোডাউনে ভরা। অনেক ব্যবসায়ী বিগত মৌসুমের পাট বিক্রি করতে পারেনি। এজন্য এ বছর ঝুঁকি নিচ্ছে না ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে ২০০০ থেকে ২২০০ টাকা মণ পাট কেনাবেচা চলছে। পাট চাষি ও ব্যবসায়ীরা উভয়েই বিপাকে পড়েছে। কৃষকদের লোকসান হচ্ছে, খরচের টাকাও তুলতে পারছে না তারা।

চাষিরা লোকসানে পড়ে পাট চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুফি মো. রফিকুজ্জামান বলেন, এ বছর তাপমাত্রার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং খরার কারণে পাট চাষ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পাট চাষ কম হয়েছে। পাট চাষের বিষয়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে নতুন জাতের বীজ, সার, প্রণোদনা ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা করা হচ্ছে। আমরা কৃষকদের পাশে থেকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছি। জেলা মুখ্য পাট পরিদর্শক সোহরাব উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, গত বছরে পাট চাষিরা লোকসানে পড়েছিলেন। একারণে পাট চাষ কমেছে।

এছাড়াও খরার কারণে অনেকে পাট চাষ করেনি। পাট উৎপাদন খবর বেশি হচ্ছে চাষিদের। পাটের দাম বাড়ানো উচিৎ। একই সাথে পাট রপ্তানি ও পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বাড়াতে হবে। চলতি মৌসুমে প্রতিমণ পাটের দাম ২১০০-২৩০০ টাকা। পুরাতন পাট ব্যবসায়ীরা বিক্রি করতে পারেন নি। চাষিদের মতো ব্যবসায়ীরা লোকসানের ঝুঁকিতে রয়েছে। এজন্য পাট ক্রয়ে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ কম। এবার পাটচাষিদের লোকসান হচ্ছে, দাম অনেক কম।