কুষ্টিয়ায় পদ্মা নদীতে ইলিশ মাছ লুটের অভিযোগ-পুলিশের দুই এসআই নিখোঁজ - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

কুষ্টিয়ায় পদ্মা নদীতে ইলিশ মাছ লুটের অভিযোগ-পুলিশের দুই এসআই নিখোঁজ

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: অক্টোবর ২৯, ২০২৪

কুমারখালী প্রতিনিধি ॥ কুষ্টিয়ার কুমারখালীর পদ্মা নদীতে জেলেদের কাছ থেকে ইলিশ মাছ লুটপাট করতে গিয়ে জেলে ও পুলিশের সংঘর্ষে পুলিশের এএসআই নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে। এঘটনায় পুলিশের আরেক এসআই ও দুইজন ইউপি সদস্য (মেম্বর) আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার  (২৮ অক্টোবর) ভোর রাতে উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের শ্রীখোল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিখোঁজ হওয়া দুই এএসআই হলেন সদরুল হাসান (৪০) ও মুকুল হোসেন (৪০)। তারা কুমারখালী থানায় কর্মরত। আহতরা হলেন-কুমারখালী থানার এসআই মো. নজরুল ইসলাম, কয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. ছলিম ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আনোয়ার হোসেন টিটন।

তাদের মধ্যে ওই এসআই নজরুল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন দেখিয়ে বাসায় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। আর দুই মেম্বর রয়েছেন আত্মগোপনে। জেলেদের ভাষ্য, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অসাধুরা জেলেরা নদীতে মাছ ধরছিল। গভীর রাতে দুই মেম্বর ও ৬ পুলিশ পদ্মা নদীর বেড় কালোয়া এলাকায় নেমে অভিযানের কথা বলে কয়েকজন জেলের কাছ থেকে ইলিশ মাছ লুটপাট করে নিয়ে নদীর অন্তপ্রান্তে চলে যায়। পরে শিলাইদহের শ্রীখোল এলাকায় দুর্বৃত্তরা পুলিশ ও মেম্বররের ওপর হামলা চালিয়েছে। পরে খবর পেয়ে স্থানীয় জেলেরা এস আই নজরুলসহ ৪ পুলিশ ও দুই মেম্বরকে উদ্ধার করে। তবে দুই এএসআই কে পাওয়া যায়নি। তবে পুলিশ বলছে, গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল করতে গিয়ে দুই নৌকার সংঘর্ষে দুই এএসআই নিখোঁজ হয়েছে।

বাকী ৪ জন সাঁতরে কুলে এসেছিল। সকালে সরেজমিন বেড় কালোয়া মোড়ে গেলে ইবাদত শেখের ছেলে ও জেলে এজাহার শেখ বলেন, রাতে পদ্মায় ইলিশ ধরছিলাম। সেসময় ছলিম ও টিটন মেম্বরসহ ৬ জন পুলিশ এসে আমার কাছে থাকা মাছ নিয়ে চলে যায়। তার ভাষ্য, মাছ নেওয়ার পরে পুলিশ ফের তাকে মাছ ধরার অনুমতি দিয়ে চলে যায়। জানা গেছে, রাতে খবর পেয়ে আহত পুলিশদের উদ্ধার করেন বেড় কালোয়া এলাকার জেলেদের নেতা ইয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, রাত আনুমানিক তিনটার দিকে স্থানীয়রা জেলেরা প্রথমে তাকে ফোন দিয়ে জানায় নদীতে ঝামেলা হচ্ছে। ছলিম ও টিটন মেম্বর এবং পুলিশ এসে জেলেদের কাছ থেকে তেল ও মাছ লুটপাট করে নিয়ে গেছে। সেখবর শুনেও তিনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। এরপর ভোর ৫ টার দিকে এএসআই সদরুল আমাকে ফোনে বলেন, ভাই আমরা বিপদে আছি সাহায্য করেন।

তখন একটি নৌকায় চারজন গিয়ে এসআই নজরুলসহ ৪ পুলিশ এবং দুই মেম্বরকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি। এসআই নজরুলের মাথা ফাঁটা ছিল। তার ভাষ্য, পুলিশ আনড্রেসে ছিল। টিটন ও ছলিম মেম্বর জেলেদের মাছ, তেল ও টাকা লুটপাট করতে পুলিশ নিয়ে এসেছিল। ৩০-৪০ জন জেলে ডাকাত ভেবে হামলা চালিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।  এবিষয়ে জানতে ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন টিটনকে ফোন দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি। এ ঘটনায় কুমারখালীর সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহমাদুল হাসান বলেন, ‘রাতে মৎস্য অভিযান ছিল না। পদ্মায় পুলিশ কেন গেছে তা জানি না। অভিযোগ অস্বীকার করে কুমারখালী থানার ওসি মো. নজরুল ইসলাম বলেন, গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল করতে গিয়ে দুই নৌকার সংঘর্ষে দুই এএসআই নিখোঁজ হয়েছে। বাকী ৪ জন সাঁতরে কুলে এসেছিল। পরে বিস্তারিত বলা যাবে।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) পলাশ কান্তি নাথ বলেন, পদ্মায় একটি ঘটনায় কুমারখালী থানা-পুলিশের দুজন উপসহকারী পরিদর্শক (এএসআই) নিখোঁজ রয়েছে। তাদের উদ্ধারে পুলিশের একাধিক দল নৌকা নিয়ে পদ্মায় তল্লাশি চালাচ্ছে। এছাড়াও ফায়ার সার্ভিসও নদীতে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে।  তিনি আরও বলেন, তবে তাঁরা কী কারণে এখানে এসেছিল সেটা এখনো পর্যন্ত পরিষ্কারভাবে জানতে পারেননি। পরে বিস্তারিত জানানো হবে। ঘটনাস্থলে এসপিসহ তিনি রয়েছেন বলে জানান এই কর্মকর্তা। জেলেদের অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, নিখোঁজ পুলিশ সদস্যদের উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের অভিযান চলছে। এ গুলো তদন্তের বিষয়। পরে বিস্তারিত বলা যাবে।