বিশেষ প্রতিনিধি ॥ দেশে কাটা বিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের চাপের আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর একধরনের বিপদগামী মানুষ লুটপাট অগ্নিসংযোগ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজনের উপর হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। এমনি একটি ঘটনা ঘটেছে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার নগর মহম্মদপুর গ্রামে। জিয়ারখী ইউনিয়ন ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মগবুল হোসেনের বাড়িতে লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে বহু অপকর্মের হোতা একই ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান মেম্বার সাদবার মন্ডলসহ তার সহযোগীরা।
এই সাদবার মন্ডল দির্ঘদিন ধরে এলাকার মধ্যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চলেছেন। আওয়ামী লীগের চামচামির বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে এখন আবার নিজ দলের সভাপতির বাড়িতে লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিএনপি নেতার কাছে বাহবাহ কুড়ানোর পায়তারা করছেন বলে জানিয়েছেন জিয়ারখী ইউনিয়ন বিএনপি সাধারণ সম্পাদক বক্কর হোসেন। তিনি জানান, আমাদের কোন নেতাকর্মীরা লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের রাজনীতি পছন্দো করে না।
এঘটনায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি এজাহার দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিছে। এজাহারের কপিতে উল্লেখ করা হয়েছে ঃ আমি মোঃ মকবুল হোসেন (৫৩), জাতীয় পরিচয় পত্র নং ৯১০৪৫০০৯৫৫, পিতাঃ মৃত রওশন আলী, গ্রাম ঃ নগর মহম্মদপুর, পোষ্টঃ কমলাপুর, থানা ও জেলাঃ কুষ্টিয়া। আপনার থানায় হাজির হইয়া আসামী মোঃ সাদবার মন্ডল (৫০), মোঃ রজব মন্ডল (৫৩), মোঃ ইকরামুল মন্ডল (৪৮), মোঃ আজব মন্ডল (৪৯), মোঃ সাহেব আলী মন্ডল (৪৩), সর্ব পিতা মৃত সামছুদ্দিন মন্ডল, মোঃ রাকিবুল ইসলাম রাকি (২৮), পিতাঃ মোঃ রজব মন্ডল, মোঃ শরীফ (৪৫), পিতা মোঃ বাবু, মোঃ মোমিন (২৫), পিতা মোঃ লুৎফর রহমান, মোঃ রাজন (৪৫), পিতা মৃত রশিদ, মোঃ নুর ইসলাম (৪৩), পিতাঃ মোঃ আমজাদ, মোঃ আরজু (২৬), পিতাঃ মোঃ রজব আলী মন্ডল, মোঃ স্বার্থক মন্ডল (২০), পিতাঃ মোঃ ইকরামুল মন্ডল, মোঃ আসাদুল ইসলাম (৫০), পিতাঃ মৃত হোসেন আলী, সর্ব গ্রামঃ নগর মহম্মদপুর, পোষ্ট: কমলাপুর, থানা ও জেলা। কুষ্টিয়া, মোঃ সাদ্দাম (৩০), পিতাঃ মোঃ জহুরুল (চা), গ্রামঃ জগন্নাথপুর, পোষ্টঃ কমলাপুর, থানা ও জেলাঃ কুষ্টিয়া, মোঃ ফরুক (৩৮), পিতাঃ মোঃ হাতেম আলী, গ্রাম ঃ লাহিনী, পোষ্টঃ মোহিনী মিলস, থানা ও জেলা।
কুষ্টিয়াগন সহ অজ্ঞাতনামা ২০/২৫ জনের বিরুদ্ধে এই মর্মে এজাহার দায়ের করিতেছি যে, আমার সহিত আসামীগনের পূর্ব শত্রুতার জের ধরে বিরোধ চলিয়া আসিতেছে। উক্ত বিরোধের জের হিসাবে গত ইং ০৫/০৮/২০২৪ তারিখ সন্ধ্যা অনুমান ৮.০০ ঘটিকার সময় আসামীগন আগ্নেয়াস্ত্র ছোরা, হাসুয়া, ফালা, রড, লাঠি, চাপাতি, রামদা ইত্যাদি অস্ত্রে সজ্জিত হইয়া আমার বসতবাড়ীতে অনধিকার প্রবেশ করিয়া অতর্কিত ভাবে আমাকে খুন করিতে গেলে আমি জীবন বাচানোর জন্য দৌড় দিয়ে পালাইয়া গেলে ১ নং আসামী হুকুম দিয়া বলে যে, শালার বাড়ী ঘর ভাংচুর করে পুড়িয়ে ফেল।
তখন আমার মানীত ১ নং সাক্ষী বাধা দিলে ১-৭ নং আসামীগন আমার বসত ঘরে অনধিকার প্রবেশ করিয়া আমার স্ত্রীর ঘরে রক্ষিত সোনার গহনা ৫ ভরি স্বর্নের চেইন, দুল, চুড়ি সহ গহনা এবং ২-৩ নং আসামীগন আমার ঘরে রক্ষিত ২ টা টিভি এবং ৪-৬ নং আসামীগন আমার ঘরে থাকা ১ টা ফ্রিজ ৭-১০ নং আসামীগন আমার ঘরে থাকা সুপা সেট ১. আলমারী ১ টা এবং ১১-১৫ নং আসামীগন আমার ঘরে থাকা ১ টা সোকেচ, ৩ টা খাট রান্নার জিনিসপত্র বিভিন্ন সাংসারিক জিনিসপত্র বাহির করিয়া নিয়া যায় এবং আমার বিছানার তোষকের নিচে থাকা নগদ ৩০,০০০/= (ত্রিশ হাজার) টাকা ২ নং আসামী লুট করিয়া লয়।
পরবর্তীতে সকল আসামীগন আমার ঘরের মধ্যে ঢুকিয়া ঘরের জানালা দরজা ইত্যাদি শাবল, হাতুড়ী, ছোরা, হাসুয়া দিয়া কোপাইয়া ও ভাংচুর করিয়া ৯,৭০,০০০/= (নয় লঞ্চ সত্তর হাজার) টাকার ক্ষতি সাধন করে। পরবর্তীতে আমি শোর চিৎকার দিতে থাকিলে সাক্ষীগন সহ আরো অনেকে ছুটিয়া আসিলে আসামীগন আমার সকল জিনিসপত্র আমার উঠানে জড়ো করিয়া ১ ও ৩ নং আসামীদ্বয় পেট্রোল সহ এক প্রকার পাউডার দিয়া আগুন ধরাইয়া দেয় এবং তাদের হাতে থাকা আগ্নেয় অস্ত্র দিয়ে সাক্ষী ও উপস্থিত মহিলাদের হুমকি দিয়া প্রকাশ করে যে তোদের পরবর্তীতে সেখানেই পাব সেখানে খুন করিয়া লাশ গুম করিয়া ফেলিবো বাড়ী ঘর মাটির সাথে মিশিয়ে দিব।
আসামীগন অনুমান ১ ঘন্টা ধরিয়া আমার বাড়ী, আমার ভাতিজার বাড়ী লুট তারাজ করেন। পরবর্তীতে সাক্ষীগন মোঃ আকছেদ আলী (৪৪), আকরাম হোসেন (৩৮), উভয় পিতাঃ মৃত রওশন আলী, উভয় গ্রামঃ নগর মহম্মদপুর, পোষ্টঃ কমলাপুর, থানা ও জেলাঃ কুষ্টিয়াগন সহ আরও অনেকেই আগাইয়া আসিলে আসামীগন বিভিন্ন রকম হুমকি ধামকি দিয়া চলিয়া যায়। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মগবুল হোসেন বলেন, আপনারা দেখেছেন কিভাবে লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে। আমি মডেল থানায় এজাহার দায়ের করেছি। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। এঘটনায় মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ঘটনার সাথে জড়িতদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। তবে অভিযুক্ত সাদবার মন্ডলের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
