কুষ্টিয়ায় দুদকের মামলায় জামিন পেলেন সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও তাঁর স্ত্রী - কুষ্টিয়া জিলাইভ | truth alone triumphs

কুষ্টিয়ায় দুদকের মামলায় জামিন পেলেন সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও তাঁর স্ত্রী

লেখক: প্রতিবেদক ঢাকা
প্রকাশ: এপ্রিল ৫, ২০২৪

নিজ সংবাদ ॥ স্কুল শিক্ষিকা স্ত্রী শাম্মী আরা পারভিনের (৪০) জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনে সহায়তার অভিযোগে করা মামলায় কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতা ও তার স্ত্রী জামিন পেয়েছেন। কুষ্টিয়া আদালতের সরকারি কৌঁসুলি অনুপ কুমার নন্দী ও দুদকের আইনজীবী আল মুজাহিদ হোসেন ওই দুজনের জামিন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। অনুপ কুমার নন্দী বলেন, দুজনকে আদালত অর্ন্তবর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার (০৪ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২টায় আইনজীবীর মাধ্যমে তারা সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক রুহুল আমীনের আদালতে জামিন আবেদন করেন। বিচারক জামিন শুনানি শেষে ১০ হাজার টাকার বন্ডে এ মামলায় অভিযোগ দাখিল হওয়া পর্যন্ত তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। আসামি পক্ষের হয়ে মামলাটি লড়ছেন অ্যাডভোকেট হাসানুল আসকার হাসু ও কুষ্টিয়া বারের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ আবু তৈয়ব। তারা বলেন, দুদকের করা মামলাটি বানোয়াট। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী অ্যাডভোকেট আল মুজাহিদ হোসেন মিঠু জানান, আজ  (গতকাল) দুপুর ১২টার দিকে আতাউর রহমান ও তাঁর স্ত্রী সাম্মিয়ারা পারভীন আদালতে হাজির হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে তাঁদের জামিন মঞ্জুর করেন বিচারক। তিনি আরও বলেন, মামলাটি করার আগে দুদকের কর্মকর্তারা দীর্ঘ সময় ধরে তদন্ত করেছেন। বিবাদিদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যাদির মধ্যে ব্যাপক গরমিল এবং জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ আয়ের বিষয়টি প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণ হওয়ায় দুদক এ মামলাটি করেছে। দুদকের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান কোনো বিশেষ ব্যক্তির বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলক মামলা করতে যাবে, এমন কথা হাস্যকর। জামিন অযোগ্য এ মামলায় সাধারণত উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বা এন্টিসিপেটরি বেল পেয়েই সংশ্লিষ্ট নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করা হয়। এ মামলার আসামিরা উচ্চ আদালতে না গিয়ে সরাসরি নিম্ন আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। ২০২২ সালের মার্চ মাসে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা শাম্মী আরা পারভিনের শত কোটি টাকার সম্পদের উৎসের সন্ধানে নামে দুদক। সেই সূত্র ধরে ওই শিক্ষিকার স্বামী কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতার আরও হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের গন্ধ পায় দুদক এবং সেই সময় সমন্বিত দুদক কুষ্টিয়া কার্যালয়ের উপ-পরিচালক জাকারিয়া স্বাক্ষরিত একটি ইনকোয়ারি পত্র সরকারের সবগুলো দপ্তরে পাঠান। চিঠিতে ২০২২ সালের ১৩ এপ্রিলের মধ্যে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো দিতে অনুরোধ করেন দুদকের ওই কর্মকর্তা। তদন্ত শেষে মাত্র ৬৩ লাখ ৬৬ হাজার ৫৭৪ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ রাখার দায়ে মামলা করেছে দুদক। ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে দুদকের সদর দপ্তর থেকে পাঠানো নির্দেশনায় মোতাবেক আতাউর রহমান আতার অবৈধ সম্পদের সন্ধানও শুরু করে দুদুক। দুদক শুরুতেই প্রভাবশালী এ আওয়ামী লীগ নেতার টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য ও চাঁদাবাজির উৎস থেকে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে শুরু করে। উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ১১ মার্চ বিকেল ৪টায় দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয় কুষ্টিয়ার সহকারী পরিচালক, নীল কমল পাল বাদী হয়ে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের ২০০৪ এর ২৬/(২) ও ২৭ (১) ধারাসহ দন্ডবিধির ১০৯ ধারায় তাঁদের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ (বিশেষ আদালত) মো. আশরাফুল ইসলামের আদালতে গতমাসের সেমাবার (১১ মার্চ) মামলা করেন।  মামলা নম্বর ০২। মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, সাম্মিয়ারা পারভীন তাঁর স্বামী আতাউর রহমানের সহায়তায় ৬৩ লাখ ৬৬ হাজার ৫৭৪ টাকার অসংগতিপূর্ণ সম্পদ অর্জন করেছেন এবং তা দখলে রেখেছেন। শাম্মী আরা পারভিন কুষ্টিয়া ০৪ নম্বর পৌর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা । স্থানীয় আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আতা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফের সেকেন্ড ইন কমান্ড। ভেড়ামারা উপজেলার ষোল দাগ গ্রামের বাড়ি থেকে ২০১২ সালে কুষ্টিয়া শহরের মজমপুরের একটি ভাড়া বাড়িতে ওঠেন তিনি। এরপর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমান মোমিজ আপত্তিকর এক ভিডিওর জেরে দল থেকে বহিষ্কার হলে আতাউর রহমান ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন। পরে কাউন্সিলের মাধ্যমে ভারমুক্ত হন তিনি। সর্বশেষ ২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হন। এরপর আর তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে তিনি কুষ্টিয়া পৌরসভার ৭/৬১ মআ রহিম সড়কের বাসিন্দা।