ঢাকা অফিস ॥ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে কুষ্টিয়ায় ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইবুনাল-২ গতকাল রবিবার (২ নভেম্বর) আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। চার্জ গঠনের মধ্য দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলার বিচার শুরু হলো।
একইসঙ্গে হানিফসহ চারজনের বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য আগামী ২৫ নভেম্বর এবং ইনুর বিরুদ্ধে ৩০ নভেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালে হাসানুল হক ইনুর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী। হানিফসহ পলাতক চারজনের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন উপস্থিত ছিলেন। ট্রাইবুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর। এদিন ইনুর বিরুদ্ধে আনা ৮টি অভিযোগ পড়ে শুনান ট্রাইবুনাল।
এসময় ট্রাইবুনাল ইনুর কাছে জানতে চান তিনি দোষী না নির্দোষ। জবাবে এজলাসে ইনু দাঁড়িয়ে বলেন, আমি সম্পূর্ণভাবে নির্দোষ। আমি রাজনৈতিক আক্রোশের শিকার এবং গায়েবি মামলার ঝড়ে বিধ্বস্ত। তিনি বলেন, আমি আশা করব, আল্লাহর পরে এই ট্রাইবুনাল ন্যায় বিচার করবেন। এরপর হানিফসহ চারজনের বিরুদ্ধে আনা তিনটি অভিযোগ পড়ে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। পরে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর আবদুস সোবহান তরফদার ও আবদুস সাত্তার পালোয়ান।
গত ২৮ অক্টোবর হানিফসহ পলাতক চার আসামির পক্ষে অভিযোগ পড়ে শোনান রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। শুরুতেই তিনি ফরমাল চার্জে প্রসিকিউশনের আনা পটভূমি নিয়ে সমালোচনা করেন। এরপর সুনির্দিষ্ট তিনটি অভিযোগ পড়ে আসামিদের অব্যাহতির আবেদন করেন। শুনানি শেষে অভিযোগ গঠনের আদেশের জন্য আজকের দিন ঠিক করা হয়। এ মামলায় হানিফ ছাড়া অন্য তিন আসামি হলেন, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সদর উদ্দিন খান, জেলা সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতা।
গত ২৩ অক্টোবর হানিফসহ চারজনকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার কথা ছিল। তবে পলাতক থাকায় আইনানুযায়ী তাদের পক্ষে স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল-২। ১৪ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালে এই চারজনকে হাজির হওয়ার নির্দেশ ছিল। না আসায় তাদের গ্রেপ্তারে জাতীয় দৈনিক দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইবুনাল। এর আগে ৬ অক্টোবর হানিফসহ চারজনের বিরুদ্ধে আনা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল-২।
একই সঙ্গে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। ৫ অক্টোবর তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেন প্রসিকিউশন। এতে সুনির্দিষ্ট তিনটি অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে রয়েছে উসকানিমূলক বক্তব্য, ষড়যন্ত্র ও কুষ্টিয়ায় ছয়জনকে হত্যা। উল্লেখ্য, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় কুষ্টিয়ায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ছয়জন। একইসঙ্গে আহত হন বেশ কয়েকজন। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়। পরে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা। এরই ধারাবাহিকতায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন।
