বিশেষ প্রতিনিধি ॥ কুষ্টিয়ায় কৃষি যান্ত্রিকরণ প্রকল্পের আওতায় ভর্তুকি মূল্যে হারভেস্টার মেশিন সহ বিভিন্ন কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়েমের প্রমাণ পেয়েছে দুদক। বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালকের কার্যালয় ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলা কৃষি অফিসে দুদকের অভিযান চালিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় শুরু হয়ে দুপুর পর্যন্ত এ অভিযান চলে। এর আগে গত বুধবার কুমারখালী উপজেলা কৃষি অফিসে অভিযান চালিয়েছে দুদক। দুদকের সমন্বিত কুষ্টিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নীলকমল পাল অভিযানের নেতৃত্ব দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে নীলকমল পাল বলেন, বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তে নেমেছে দুদক। কুমারখালী ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলা কৃষি অফিসে অভিযান চালিয়ে অনিয়ম দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প’এর আওতায় হারভেস্টার মেশিন সহ অন্যান্য কৃষি যন্ত্র বিতরণে অনিয়ম দুর্নীতির প্রামাণ পেয়েছি। অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমাদের এ অভিযান চলমান থাকবে। দুদক সূত্রে জানা গেছে, অভিযানে টিম হারভেস্টার মেশিন বিতরণে অনিয়ম, প্রকৃত কৃষক নির্ধারণে জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয়, কৃষকের নামে ক্রয় করা যন্ত্রপাতি কৃষক পাননি। কারসাজির মাধ্যমে কৃষকদের নামে হারভেস্টার মেশিন বাগিয়ে নেন অন্য মানুষ। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের গাফিলতি ইত্যাদিসহ নানা অনিয়মের প্রাথমিক সত্যতা পায় দুদক। কৃষি কর্মকর্তা ও অসাধু চক্র যোগসাজশে এসব অনিয়ম দুর্নীতি ও প্রতারণা করা হয়েছে। দুদক সূত্রে আরও জানা গেছে, কুষ্টিয়া জেলায় সরকারের ‘সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ’ প্রকল্পের ভর্তুকির কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণে অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদকের কুষ্টিয়া অফিস থেকে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানকালে ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে কুমারখালী ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলা কৃষি অফিসের আওতাধীন এ প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় অনিয়ম দুর্নীতির প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়।
পর্যালোচনায় দেখা যায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা কৃষি অফিসের আওতায় উক্ত প্রকল্পে মোট ৮টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন (প্রতিটির মূল্য ৩৮ লাখ টাকা) কৃষকদের মধ্যে বিতরণ দেখানো হয়েছে। কুষ্টিয়া সদর উপজেলা কৃষি অফিসের আওতায় ১২টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন বিতরণ করা হয়। যেখানে অধিকাংশ গ্রাহকের আবেদন, প্রত্যয়নপত্র ও সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্রে থাকা তথ্যের সঙ্গে বাস্তবের গরমিল পাওয়া গেছে। কুমারখালীতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট ০৮টি পটেটো ডিগার (প্রতিটির মূল্য দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা) বিতরণ দেখানো হয়েছে। একই পরিবারের তিনজনের নামে এই মেশিন বিতরণ করা হয়েছে, আবার একজন গ্রাহকের আবেদন ফরমে কৃষি কর্মকর্তার মোবাইল নম্বরও দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ক্রয় সংক্রান্ত ফর্মে তথ্যের অমিল রয়েছে মর্মে অভিযানকালে দেখা যায়।
কুমারখালীতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট ২৮টি রিপার মেশিন (প্রতিটির মূল্য এক লাখ ৯০ হাজার টাকা) বিতরণ দেখানো হলেও তাৎক্ষণিকভাবে কিছু গ্রাহকদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে জানা যায়, তারা রিপার মেশিনের জন্য আবেদন করলেও তাদের কোনো মেশিন প্রদান করা হয়নি। অভিযানে প্রাপ্ত সকল তথ্যাবলি সন্নিবেশ করে কমিশন বরাবর বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। এবিষয়ে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুপালী খাতুন ও কুমারখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রাইসুল ইসলাম বলেন, দুদকের একটি টিম অভিযান পরিচালনা করেছেন। বিভিন্ন নথিপত্র দেখে গেছেন। অনিয়ম দুর্নীতির ব্যাপারে আমরা কিছু জানি না। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুফি মো রফিকুজ্জামান বলেন, অনিয়ম দুর্নীতি বিষয়ে আমি কিছু জানি না। অনিয়ম দুর্নীতির কোন তথ্য আমার জানা নেই।
